Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
language

হিন্দি-বিতর্কে বাঙালি চুপ! প্রশ্ন

শিল্পসংস্কৃতি মনস্ক বলে পরিচিত বাঙালিদের রাজ্যে যে কোনও প্রতিবাদযোগ্য মুহূর্তেই খোঁজ পড়ে সংস্কৃতি বা বিনোদন জগতের বিশিষ্টদেরও।

ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের প্রথম হিন্দিতে অনূদিত বইয়ের উদ্বোধন করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের প্রথম হিন্দিতে অনূদিত বইয়ের উদ্বোধন করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০৮
Share: Save:

বেশ কয়েকটি ভাষায় উচ্চ শিক্ষার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও আসলে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেই বিভিন্ন মহলে সন্দেহ দানা বাঁধছে। বিশেষত খাস সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজি তুলে দিয়ে হিন্দি করা, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দিতে পাঠদান-সহ সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশে হিন্দিকেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা থাকায় অন্য ভাষার কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কাই প্রকট। কেরল এবং তামিলনাড়ু এ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানালেও বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তাপ উত্তাপ কই! পশ্চিমবঙ্গে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিবাদ টের পাওয়া যায়নি। পঁচিশে বৈশাখ বা একুশে ফেব্রুয়ারির আশপাশে বাঙালির ভাষা নিয়ে আবেগ এখন অদৃশ্য!

শিল্পসংস্কৃতি মনস্ক বলে পরিচিত বাঙালিদের রাজ্যে যে কোনও প্রতিবাদযোগ্য মুহূর্তেই খোঁজ পড়ে সংস্কৃতি বা বিনোদন জগতের বিশিষ্টদেরও। নন্দীগ্রাম-কাণ্ড থেকে তৃণমূলের আমলেও নানা বিষয়ের প্রতিবাদে বা বিভিন্ন দাবি আদায়ের লড়াইয়ে সহমর্মী অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে নাট্যকর্মী কৌশিক সেনকে। বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে তিনিই বলছেন, “আজকের বাঙালির রাজনীতি সচেতনতাও বড্ড পার্টিকেন্দ্রিক। শাসক বা বিরোধী দলের ডাক ছাড়া কিছুতেই তত সাড়া মেলে না।” তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে অনেকে সরব। এর বদলে আমি কেন্দ্রের হাতে বাংলা ভাষা কোণঠাসা হওয়ার প্রশ্ন তুললেও কেউ আমি রাজ্যে শাসকের দুর্নীতি ধামাচাপা দিচ্ছি বলতে পারেন!”

কিন্তু কোনও দলীয় পতাকা ছাড়াই নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদে মাঠে নামে বাংলার নাগরিক সমাজ। গত বিধানসভা ভোটেও বাঙালির সংস্কৃতি জগতের অনেককে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল। অভিনেতা-চিত্রপরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “আমি সব ভাষাকে ভালবাসলেও নিজভূমে সবার আগে বাংলা ব্যবহারে বিশ্বাসী। হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তানের রাজনীতিরও বিরোধী। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি তরুণদের জ্ঞান ও ভালবাসা বাড়াতে হবে। তা হলেই আরও গঠনমূলক প্রতিবাদ সম্ভব।”

তবে বাঙালিদের উচ্চ কোটি বা মধ্যবিত্তের একাংশের চেতনাতেই বাংলা ভাষার এখন দুয়োরানির দশা বলেও দেখছেন অনেকেই। কলকাতার একটি আইএসসি স্কুলে ১১-১২ ক্লাসে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বড়জোর দশ শতাংশ বাংলা বেছে নিয়েছেন। তথ্যচিত্র পরিচালক কস্তুরী বসু সুবিধা বঞ্চিত পড়ুয়াদের নিয়ে কলকাতায় রোকেয়া শিক্ষা কেন্দ্র বলে একটি স্কুল চালান। তিনি বিরক্ত, “বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করাটা স্রেফ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নয়, গরিব মানুষের পেটে লাথি মারা এটা আগে বুঝতে হবে। সরকারি চাকরির পরীক্ষা হিন্দিতে হলে আমাদের স্কুলের পড়ুয়ারাই মুশকিলে পড়বে।” কেরল, তামিলনাডু কিন্তু হিন্দি চাপানোর প্রতিবাদে সরব। এ রাজ্যে এনআরসি বিরুদ্ধে আন্দোলন মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ বসুর মতে, “তামিলনাড়ুর ভাষা-চেতনায় বরং নিম্নবর্গের স্বরটাই প্রবল। তাই দক্ষিণের ভাষা আন্দোলনই বেশি জোরালো।” তবে তাঁর আশা, আপাতত শুধু সুপারিশ এসেছে। হিন্দিকেই প্রধান কাজের ভাষা হিসেবে আইন করার পরিস্থিতি এলে পশ্চিমবঙ্গও উত্তাল হবে। বাংলা পক্ষ বা জাতীয় বাংলা সম্মেলনের মতো কয়েকটি মঞ্চ অবশ্য রাজ্যে বিভিন্ন জেলায় পথে নামছে কিংবা রাজভবন অভিযানের ডাক দিচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই এ রাজ্যেও ব্যাঙ্ক থেকে রেলের কিছু বিজ্ঞপ্তি বা আধা সামরিক বাহিনীর পরীক্ষায় বাংলার প্রয়োগে খামতি প্রকট। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের শিক্ষক উর্বী মুখোপাধ্যায় বলছেন, “জাতিসত্তার গরিমা বজায় রেখেই একদা বাঙালি বিশ্বনাগরিক হওয়ার কথা ভাবত। এখন সমাজমাধ্যমে যে সারা ক্ষণ বাংলায় আড্ডা দিচ্ছে, তারই বাচ্চারা শুধু ইংরেজি, হিন্দি পড়ছে।” বহুভাষী ভারতের চেতনাটাও এ ভাবেই লোপ পাচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

language West Bengal Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy