Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মমতার জন্যই পালে হাওয়া বিজেপির 

এনআরএসে ডাক্তার পেটানো কেন্দ্র করে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন যে ভাবে ব্যাপক আকার নিয়েছে, তার পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনমনীয়’ মনোভাব অনেকটাই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

স্যমন্তক ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

শাসক ‘বিপাকে’ পড়লে বিরোধীরা তার সুযোগ নিতে চায়। চিকিৎসক আন্দোলন এবং হাসপাতালগুলির অবস্থান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনড়’ অবস্থান রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির হাতে তেমনই ‘সুযোগ’ তুলে দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বড় অংশ মনে করে।

এনআরএসে ডাক্তার পেটানো কেন্দ্র করে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন যে ভাবে ব্যাপক আকার নিয়েছে, তার পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনমনীয়’ মনোভাব অনেকটাই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এসএসকেএমে গিয়ে যে-ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী কার্যত হুমকি দিয়েছেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

চিকিৎসকদের আন্দোলন সরাসরি কোনও রাজনৈতিক পতাকার তলায় সংগঠিত হয়নি বলে আন্দোলনকারীরা নিজেরাই দাবি করছেন। কিন্তু ঘটনা হল, বিষয়টি সর্বভারতীয় স্তরেও আলোড়ন তৈরি করেছে। তির রাজ্য সরকারের দিকে। ফলে বিজেপির পালে হাওয়া ওঠা স্বাভাবিক। তারাও ডাক্তারদের আন্দোলনে গেরুয়া রং লাগাতে তৎপর।

মমতা সে-কথাই বলছেন। তাঁর দাবি, দ্বিতীয় দিন থেকেই আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লেগেছে। আরএসএস এ দিন সরাসরি আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘটনার দায় চাপিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর উপরে। বিজেপির চিকিৎসক সাংসদ সুভাষ সরকার এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মমতা যে-ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা জেহাদি আক্রমণের মতো।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়েরা তো আগে থেকেই এই ঘটনায় ধর্মীয় রং লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, মমতার কিছু পদক্ষেপই কি বিজেপির জন্য এমন পরিসর তৈরি করে দিচ্ছে, যেখানে ক্রমশ বৃহত্তর সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে? নির্বাচনী ফলের ধাক্কা তৃণমূল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত, খুনোখুনি অব্যাহত। সবটাই হচ্ছে শাসক দলের সঙ্গে বিজেপির। রাজ্যপালকে সম্প্রীতি রক্ষায় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে হয়েছে। তখনই চিকিৎসকদের আন্দোলনে বিজেপির ঢুকে পড়ার চেষ্টা পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো। যেন মমতাই তাদের হাতে বল তুলে দিচ্ছেন।

রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসন পাওয়ার পর থেকে বিজেপি রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে তুলেছে। চিকিৎসকদের আন্দোলন মোকাবিলায় মমতা ‘সহৃদয়’ ভূমিকা নিলে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার এমন সহজ সুযোগ পেত না বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

মুখ্যমন্ত্রী কেন সরাসরি আন্দোলনকারীদের কাছে গেলেন না বা গণপিটুনিতে গুরুতর আহত জুনিয়র ডাক্তারের পাশে দাঁড়ালেন না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। মমতা অবশ্য বলছেন, তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কথা বলেননি। তবে যে-অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে, চিকিৎসক কর্তাদের ইস্তফা বিষয়টিকে যে ভাবে আরও ঘোরালো করে তুলছে, তাতে পুলিশমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায় মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই বর্তায়। কারণ, চিকিৎসকেরা হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন। যা স্বরাষ্ট্র দফতর অর্থাৎ পুলিশমন্ত্রীর এক্তিয়ারে। আর মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। দুই পদেই মমতা। বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি উপযুক্ত পদক্ষেপ করছেন না। এটাই তাদের আন্দোলনকে এগিয়ে দিচ্ছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC BJP Opposition NRS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy