বিজেপির বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস। — নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকে পুলিশের আয়োজন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সঙ্ঘাত অবধারিত। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে বিরাট বাহিনী, র্যাফ, জলকামান, লাঠি-ঢাল-হেলমেট, কাঁদানে গ্যাস আর লোহার ব্যারিকেড যে ভাবে ব্যূহ রচনা করছিল, তা ভেদ করতে গেলে রামভক্ত বাহিনীর যে অভিমন্যুর দশা হতে পারে, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল। ঠিক সেই দিকেই গড়াল পরিস্থিতি। বিরাট মিছিলটাকে একটু পিছনে রেখে সামনে থাকা শ’খানেক বিজেপি কর্মী একটু আগেভাগেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ব্যারিকেডটার উপরে। কয়েক মিনিটে আঘাত হানল কলকাতা পুলিশের জলকামান। সেই ধাক্কা সামলানোর আগেই বেপরোয়া কাঁদানে গ্যাস। রণক্ষেত্রে পরিণত হল মধ্য কলকাতা।
বুধবার বিজেপির এই মহাধিক্কার মিছিল তথা লালবাজার অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল সন্দেশখালি-কাণ্ডের প্রতিবাদে। দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলা থেকেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন কলকাতায়। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে বেলাদেড়টার কিছু আগে মিছিল যাত্রা শুরু করে লালবাজারের দিকে। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়, জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন সিংহ, সুভাষ সরকার, কুনার হেমব্রমরা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মিছিলের।
বিজেপির মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ পেরনোর আগে পর্যন্ত সব কিছু নির্বিঘ্নই ছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ পেরিয়ে মিছিল লালবাজারের দিকে এগোতেই পুলিশ তৎপর হয়। আড়াইশো-তিনশো মিটার সামনেই বিরাট ব্যারিকেডটা খাড়া করে রাখা হয়েছিল। তার অন্য পাশে রাখা হয়েছিল বিরাট বাহিনী এবং জলকামান। মূল মিছিলের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকা একটা ছোট অংশ আগেই পৌঁছয় সেই ব্যারিকেডে। লালবাজারের দিকে এগনোর জন্য ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। পুলিশ-বিজেপি খণ্ডযুদ্ধে কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যারিকেডের একটি অংশ ভেঙেও যায়। তাতেই পুলিশ জলকামান চালানো শুরু করে দেয়।
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বলুন, এই ঘটনা আর ঘটবে না, দাবি চিকিৎসক মহলের
আরও পড়ুন : চিকিৎসা না পেয়ে কারও মৃত্যু হলে তার দায় কারা নেবেন: অভিষেক, রাজ্যের কী পরিস্থিতি ভাবুন: দিলীপ
জলকামানের আঘাতে শুরুতে বিজেপি কর্মীরা একটু পিছু হঠলেও পরে ফের ব্যারিকেডের দিকে এগনোর চেষ্টা করেন। পুলিশ আর বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে। অপরিসর বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট আরও সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল মিছিলের ভিড়ে। তার মধ্যেই পুলিশ বেপরোয়া ভাবে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ায় বিক্ষোভকারীরা আর দাঁড়াতেই পারেননি। যে যে দিকে পারেন পালাতে থাকেন। কাঁদানে গ্যাস এবং ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তাতেই অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি। কর্মী-সমর্থকরা কাঁধে করে রাজুকে সরিয়ে নিয়ে যান ঘটনাস্থল থেকে।
লালবাজারের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে এলেও বিজেপির মিছিল কিন্তু এলাকা ছাড়েনি এর পরেও। বৌবাজার-সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ মোড়ে অবরোধ শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। রাস্তার মাঝখানে গোল হয়ে বসে পড়েন, কৈলাস, দিলীপ, অহলুওয়ালিয়া, লকেটরা। আর চারটে রাস্তাই বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে মিছিল।
বৌবাজার মোড়ে দাঁড়িয়েই প্রথমে ভাষণ দেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তার পরে রাহুল সিংহ এবং দিলীপ ঘোষ। প্রত্যেকেই তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপরে পুলিশ অকারণে যথেচ্ছ বলপ্রয়োগ করেছে বলে বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, ‘নৃশসং, নির্লজ্জ মহিলা’ বলে আক্রমণ করেন দিলীপ। আর এই বিক্ষোভের মাঝেই জখম কর্মী সমর্থকদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত ও বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী হাসপাতালে। পরে অবশ্য শম্ভুনাথ পণ্ডিতে ভর্তি থাকা মহিলা মোর্চা কর্মীদেরও বিশুদ্ধানন্দে স্থানান্তরিত করার বন্দোবস্ত করেন সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী তথা হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
রাস্তায় বসে বিক্ষোভে বিজেপি নেতা-নেত্রীরা
সন্ধ্যাস কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন চিকিৎসাধীন নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। চিকিৎসাধীন কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। আর রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তৃণমূলের সরকারকে তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন দিলীপ ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গে কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুযোগও আর নেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অন্য কোনও দলকে রাজনীতি করতে দিতে রাজি নয়— কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই অভিযোগ জানানো হবে, জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy