গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিধায়কের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে কি রয়েছে টাকাপয়সার লেনদেন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা? প্রাথমিক তদন্তের পর সেই সম্ভাবনাই জোরালো হয়ে উঠছে বলে ইঙ্গিত তদন্তকারীদের।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কথাতেও মিলেছে সেই ইঙ্গিত। বিধায়কের মৃত্যুকে সম্ভাব্য আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করছে পুলিশ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশ সোমবারই জানিয়েছিল যে, বিধায়কের বুক পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গিয়েছে। হস্তাক্ষর তাঁরই হলে, সেই কাগজে দুই ব্যক্তিকে বিধায়ক তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। এ দিন স্বরাষ্ট্রসচিবও জানিয়েছেন, হাতে লেখা একটি কাগজের টুকরো পাওয়া গিয়েছে বিধায়কের জামার পকেটে। প্রাথমিক ভাবে সেই চিরকুটটি বিধায়কের লেখা বলেই মনে করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, সেই চিরকুটে দুই ব্যক্তির ছবি, মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দুই ব্যক্তি সুদের কারবার, সমান্তরাল ব্যাঙ্কিংয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, বিধায়কের মৃত্যুর পেছনে রয়েছে আর্থিক লেনদেন। কারণ, রায়গঞ্জ থানায় করা বিধায়কের স্ত্রী চাঁদিমা রায়ের লিখিত অভিযোগেও উল্লেখ রয়েছে দুই ব্যক্তির কথা। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘‘মামুদ আলি এবং নিলয় সিংহ নামে দু’জনের কাছে প্রচুর টাকা পেতেন আমার স্বামী। আমার স্বামী তাঁদের যখনই টাকার কথা বলতেন, তখনই তাঁরা বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন।” চাঁদিমা পুলিশকে জানিয়েছেন, নিলয় সিংহ এবং মামুদ আলির বাড়ি মালদহে। ইতিমধ্যে বিধায়কের পকেটে থাকা চিরকুটে উল্লেখ দুই ব্যক্তির এক জনকে আটক করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। মালদহের ইংরেজবাজারে তাঁর বাড়ি। তাঁকে সিআইডি-র হাতে তুলে দেবে মালদহ জেলা পুলিশ। অন্য ব্যক্তির বাড়ি মালদহের চাঁচলে। তাঁর খোঁজেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিধায়ক আত্মঘাতী, ইঙ্গিত পোস্টমর্টেমে, জানালেন স্বরাষ্ট্রসচিব
চাঁদিমার করা অভিযোগে যেমন উঠে আসছে টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয়, তেমনই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, গত এক বছরের মধ্যে দেবেন্দ্রনাথ ১০ বিঘা চাষের জমি বিক্রি করেছিলেন। সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি তিনি জমি বিক্রির টাকাই ওই দুই ব্যক্তির মাধ্যমে কোথাও লগ্নি করেছিলেন? সেই টাকা তিনি ফেরত পাচ্ছিলেন না।
কিন্তু, টাকা না পাওয়ার জন্যই কি বিধায়ক আত্মহত্যা করলেন? না কি এর পিছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনও রহস্য?
চাঁদিমা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে দেবেন্দ্রনাথের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল।তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘‘দল ছাড়ার জন্য যে আমার স্বামীর উপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল, তা তিনি আমাকে এবং বিজেপি নেতাদেরও বার বার জানিয়েছেন।” তবে কি সেই চাপেই রাজনৈতিক সক্রিয়তা অনেকটাই কমে গিয়েছিল দেবেন্দ্রনাথের? কারণ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, লকডাউনের আগে থেকেই দেবেন্দ্রনাথকে বিজেপি-র সভা সমিতি বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ দেখা যেত না।
এই সমস্ত সম্ভাবনার মধ্যে রবিবার রাতের কিছু ঘটনাক্রম আত্মহত্যার তত্ত্বের সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে না। বরং পাল্টা প্রশ্ন তুলছে মৃত্যুর কারণ নিয়েই। চাঁদিমা তাঁর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, রাত ১টা পর্যন্ত তিনি তাঁর স্বামীকে জীবিত অবস্থায় দেখেছেন। সেই সময় দেবেন্দ্রনাথ শুতে যান নিজের ঘরে। এমনটাই জানিয়েছেন চাঁদিমা। এর পর ভোর পাঁচটার সময় তিনি খবর পান স্বামীর দেহ ঝুলছে দেবেনমোড়ের বাজারের চালা থেকে।
আরও পড়ুন: ‘হারানো যাবে না সত্যকে’, জোড়া পদ হারিয়ে বললেন সচিন
অর্থাৎ, রাত ১টার পর বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন বিধায়ক। চাঁদিমার অভিযোগ, কেউ তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি যে, ৬৫ বছরের দেবেন্দ্রনাথ গভীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন তাঁর ডাকে। প্রশ্ন তুলেছেন চাঁদিমা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী চটি বা জুতো না পরে বাইরে যেতেন না। কিন্তু মৃত বিধায়কের পা খালি ছিল। কেন এত রাতে তিনি খালি পায়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন? চাঁদিমার প্রশ্ন, তাঁর বাড়ি থেকে দেবেনমোড় যাওয়ার রাস্তা কাদায় ভরা। অথচ বিধায়কের পোশাকে কোনও কাদার দাগ নেই। চাঁদিমার দাবি, তাঁর স্বামী হাঁটুর ব্যথায় ভুগছিলেন। তার পরেও তিনি হেঁটে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে দেবেন মোড়ে গেলেন কেন? নিজের বাইক চড়ে গেলেন না কেন?
এই সমস্ত প্রশ্নের এখনও স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই তদন্তকারীদের কাছেও। তবে তাঁদের অনুমান, খুব তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। হয়তো তাঁর দেবেনমোড় পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্য কারও সঙ্গে দেবেনমোড়ে পৌঁছন। পুলিশ জানতে পেরেছে, বিধায়ক বিভিন্ন সময়ে কারও সঙ্গে দেখা করতে হলে দেবেনমোড়ে ওই বাজারে দেখা করতেন। সেই হিসাব করে তদন্তকারীদের ধারণা, ওই রাতে এমন কোনও ব্যক্তির সঙ্গে তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন যিনি অপেক্ষা করবেন না বলে আশঙ্কা ছিল বিধায়কের। তাই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে কারও সঙ্গে দেবেনমোড়ে পৌঁছন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy