শুক্রবার কাঁথিতে পুলিশির সক্রিয়তা। —নিজস্ব চিত্র
জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল। আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে স্বজনপোষণের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করে শুক্রবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিজেপি। কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর। এ দিন জেলায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আটকে দেয় পুলিশ। পরে কলকাতায় ফিরে যান সায়ন্তন। তবে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে আগামী দিনে ১০ হাজার লোক নিয়ে এসে জেলায় ঢুকবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এ দিকে দলের নেতাকে আটকে দেওয়ার খবরকে কেন্দ্র করে এ দিন কাঁথিতে উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন জমায়েত হওয়া বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। ঘটনায় চারজন বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুর ১টা নাগাদ সায়ন্তনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। সামাজিক দূরত্ব বৃদ্ধি মেনে জমায়েত করা যাবে না বলে বিজেপি নেতৃত্বকে দেন জানিয়ে দেন পুলিশ কর্তারা।
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘৫০০ কর্মী উপস্থিত থাকবে বলে পুলিশকে আগাম জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয়। লাঠিচার্জ করা হয়। একজন কর্মীর হাতে চোট লেগেছে।’’ যদিও পুলিশের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র ২৫ জন উপস্থিত থাকতে পারবে বলে স্পষ্ট বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষ থেকে নিয়ম মানা হয়নি। অনুপের পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের আইন নিয়ে পুলিশ দুমুখো নীতি অবলম্বন করছে। কয়েকদিন আগে পেটুয়াঘাটে শাসক দলের ব্যানারে সামাজিক দূরত্ব না মেনে কয়েক হাজার লোককে নিয়ে মৎস্য বন্দর চালুর দাবিতে কর্মসূচি হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করেনি পুলিশ।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) পার্থ ঘোষ বলেন- শাসক দলের ব্যানারে এরকম কোনও কর্মসূচি হয়েছিল কিনা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে’’
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সায়ন্তনের গাড়ি কোলাঘাটের হলদিয়া মোড়ে এলে গাড়ি আটকায় পুলিশ। সায়ন্তনের গাড়িতে ছিলেন বিজেপি নেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক। ঘটনাস্থলে ছিলেন তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস, কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া থানার ওসি-সহ প্রচুর পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ জড়িয়ে পড়েন বিজেপি নেতারা। তমলুকের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম হাসান সায়ন্তন বসুকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ঘণ্টাখানেক পর কলকাতায় রওনা দেন সায়ন্তন।
কোলাঘাটে আটকে পড়া সায়ন্তন বসু। নিজস্ব চিত্র
তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ করোনা সংক্রমণের যুক্তি দেখিয়ে আমাকে কাঁথি যেতে দেয়নি। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি কাঁথি না গিয়ে পুলিশের সাথে সহযোগিতা করলাম।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘জেলায় আমাদের কর্মীরা শাসক দলের হাতে মার খাচ্ছে। ছ'মাস আগে ভূপতিনগরে আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হল। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার তো করলই না। উল্টে আমার নামে এফআইআর করল। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় যে অভিযোগ করেছিলাম তার তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছি।’’
সায়ন্তনের হুঁশিয়ারি, ‘‘পুলিশ ৭ জুলাই তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানাবে বলেছে।যদি কিছু না জানায় তাহলে আমি ৭ তারিখের পর ১০ হাজার লোক নিয়ে জেলায় ঢুকব। পুলিশ কীভাবে আমাকে আটকায় দেখব।’’
জেলার পুলিশ সুপার সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্ভবত উনি কাঁথিতে একটি স্মারকলিপি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। আমরা ওই কর্মসূচির অনুমতি দিইনি। উনি গেলে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হত।তাই ওঁকে ফিরে যেতে বলা হয়।’’ বৃহস্পতিবার ভগবানপুরে আক্রান্ত দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি ভারতী ঘোষ।পুলিশ কিন্তু তাঁকে আটকায়নি।যা নিয়ে পুলিশ সুপারের জবাব, ‘‘দু’জনের কর্মসূচি ভিন্ন ছিল।’’
যদিও বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের অঙ্গুলিহেলনেই পুলিশ এত সক্রিয় হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, পুলিশ তাদের কাজ করেছে। তবে তৃণমূলেরই একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের সময় ও তার পর থেকে সায়ন্তন বিভিন্ন জেলায় গিয়ে এমন সব মন্তব্য করেছেন যা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে।উত্তেজনা ছড়িয়েছে। হয়তো সেই কারণেই পুলিশ এ বার তাঁকে আটকেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy