নওশাদ সিদ্দিকি। ফাইল ছবি।
এক দিনের ব্যবধানে আবারও নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ভাঙড়ে যাওয়ার পথে বাধা পেলেন নওশাদ সিদ্দিকি। শুক্রবারের মতো রবিবারও নিউ টাউনের হাতিশালার কাছে আইএসএফ বিধায়কের গাড়ি আটকে দিল পুলিশ। পর পর দু’দিন বাধা পাওয়ায় রবিবার খানিক মেজাজ হারাতেও দেখা গেল নওশাদকে। পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে সুপরিকল্পিত ভাবে আটকানো হচ্ছে!’’ পাল্টা পুলিশ প্রশাসনের যুক্তি, ভাঙড়ে এখনও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে বলেই তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে হাতিশালায় অপেক্ষা করার পর ফিরে যেতে হয় নওশাদকে।
পঞ্চায়েত ভোটের গোটা সময় ধরেই উত্তপ্ত ছিল ভাঙড়। মনোনয়ন পর্বেও সেখানে লাগাতার যাচ্ছিলেন নওশাদ। কিন্তু ভোটের দিন বিধায়ক নিজের কেন্দ্রে ছিলেন না। ওই দিন ভাঙড়ে বোমা পড়েছে, গুলিও চলেছে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে দু’জন তাদের সমর্থক বলে দাবি করেছে আইএসএফ। সেই গন্ডগোলকেও ছাপিয়ে গিয়েছে গত মঙ্গলবার ভোটগণনার রাতের ঘটনা। যে রাতে গুলি, বোমাবাজিতে মৃত্যু হয়েছে আইএসএফ কর্মী-সহ তিন জনের। আহতও হয়েছেন অনেকে। গুলি লেগেছে পুলিশের। সেই ঘটনার পরেই শুক্রবার ভাঙড় যেতে চেয়েছিলেন নওশাদ। কিন্তু নিউ টাউনের দিক থেকে তাঁর গাড়ি ভাঙড়ের দিকে যেতেই হাতিশালার কাছে পথ আটকায় পুলিশ। সাত-আট ঘণ্টা ধরে সেখানেই চলতে থাকে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ। ঢুকতে না পেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের গাড়িতে অপেক্ষা পরে ফিরে গিয়েছিলেন বিধায়ক। রবিবারও সেই একই ছবিই দেখা গেল।
ফুরফুরা থেকে বেরোনোর সময়েই নওশাদ জানিয়েছিলেন, বিকেলে ভাঙড়ে আইএসএফের দলীয় কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে বৈঠক করবেন। কিন্তু হাতিশালাতেই তাঁকে আটকে দেয় পুলিশ। গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে রাখা হয় রাস্তা। বাধা পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি জড়িয়ে পড়েন বিধায়ক। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘১৪৪ ধারা জানি আমি। ভাঙড়ে আমি কোনও জমায়েত করতে যাচ্ছি না। আমার সঙ্গে মাত্র এক জন আছেন।’’ নওশাদের অভিযোগ, শনিবার ভাঙড়ে গিয়ে সভা করে এসেছেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা এবং ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামেরা। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও শাসকদলের নেতারা কী ভাবে সভা করছেন, সেই প্রশ্ন তুলে নওশাদ বলেন, ‘‘পুলিশ দ্বিচারিতা করছে! জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভাঙড়বাসীর পাশে থাকা দরকার, সেটা আমাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভাঙড়বাসীর অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে। আমার ওখানে অনেক কাগজপত্র আছে। আমার অনেক কাজ আছে। অফিসে যাওয়ার আছে। অনেক পরিষেবা দেওয়ার আছে। সেগুলিতে সুকৌশলে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে বিধায়ক এ-ও বলেন, ‘‘আপনাদের খারাপ লাগে না? উর্দি পরে দ্বিচারিতা করছেন। গণতন্ত্র হরণ করছেন। আমার যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, সেটা আপনি কেড়ে নিচ্ছেন। এর জবাব এক দিন আপনাকে দিতে হবে।’’
নওশাদকে যেখানে আটকানো হয়েছে, সেখানে বিধাননগর পুলিশের পাশাপাশি, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার কলকাতা পুলিশের কর্মী এবং বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্মীরাও ছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরাও ছিলেন সেখানে। পুলিশের তরফে বিধায়ককে জানানো হয়, তাঁর কোনও অভিযোগ থাকলে, তিনি তা লিখিত আকারে জানাতে পারেন। সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তার কিছু পরেই ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নওশাদ। তাঁকে জোর গলায় বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে অ্যারেস্ট করুন, না হয় যেতে দিন।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নওশাদকে যেতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেতে হয় তাঁকে।
নওশাদ দাবি করেছেন, ১৪৪ ধারা দেখিয়ে তাঁকে বাধা দেওয়া হলেও শাসকদলের নেতারা দিব্যি ভাঙড় যাচ্ছেন। ঘটনাচক্রে, শনিবার রাতেই ভাঙড় যেতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন শওকত, আরাবুলরা। নওশাদকে যে কারণ দেখিয়ে ভাঙড়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সেই ১৪৪ ধারার কারণ দেখিয়েই তাঁদের আটকানো হয়। ভাঙড় ২ ব্লকের ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাঁঠালিয়া এলাকার এক তৃণমূল কর্মী মৃত্যু হয় শনিবার। শেখ মোসলেম নামে ওই তৃণমূল কর্মী ভোট-সন্ত্রাসে জখম হয়েছিলেন। শওকতের অভিযোগ, দলীয় কর্মীর শেষকৃত্যে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু কাশীপুর থানার পুলিশ তাঁদের ভাঙড় ব্রিজের কাছে আটকে দেয়। এর পরেই গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান শওকত এবং আরাবুলেরা। যদিও এই ঘটনার আগেই ভাঙড়ে দলীয় বৈঠক করে এসেছিলেন তাঁরা। নওশাদ তা নিয়ে সরব হওয়ায় শওকতের পাল্টা যুক্তি ছিল, ‘‘আমরা ভাঙড়ে কোনও সভা করতে যাইনি। প্রকাশ্যে কিছু করিনি। বন্ধ ঘরে স্রেফ বৈঠক করেছি। আর ২১ জুলাইয়ের কী ভাবে প্রস্তুতি নেব, তা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।’’ এই শওকতই রবিবার নওশাদকে ভাঙড়ে যেতে বাধা দেওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নওশাদের জন্যই ভাঙড়ে অশান্তি হচ্ছে। আইএসএফ পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। প্রশাসন তার কাজ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy