কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মোতায়েন পুলিশ। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
একটানা কয়েক ঘণ্টার অবরোধে সোমবার কলেজ স্ট্রিট অবরুদ্ধ হয়ে থাকার পরে মঙ্গলবার ছাত্রছাত্রীদের আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার পাশে ঘেঁষতেই দিল না পুলিশ। কলেজ স্ট্রিটের দিকের মূল ফটক, প্রেসিডেন্সির দিকের গেট, কলোজ স্কোয়ার— সব জায়গা থেকেই পুলিশ তাড়া করে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে পথে নামা ছাত্রছাত্রীদের। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) আশিস চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে বিভিন্ন হুমকির ই-মেল পাচ্ছেন তাঁরা। তবে পরীক্ষা হবে অফলাইনেই। সিদ্ধান্ত বদলের প্রশ্নই ওঠে না। ইতিমধ্যেই স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ হয়েছে। দ্রুত দ্বিতীয়, চতুর্থ সিমেস্টারের নির্ঘণ্টও প্রকাশ করা হবে।
সোমবারের দীর্ঘ অবরোধের পরে ছাত্রছাত্রীরা এ দিন আবার কলেজ স্ট্রিটে আবার বিক্ষোভ-অবস্থানের চেষ্টা করেন। তাঁদের বক্তব্য, অফলাইন ক্লাস পর্যাপ্ত হয়নি। শেষ হয়নি পাঠ্যক্রম। সরকার বার বার ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষেরা জানান, মাত্র দেড় মাস ক্লাস হয়েছে বলে পড়ুয়ারা যে-অভিযোগ করছেন, তা পুরোপুরি সত্য নয়। একটা সিমেস্টারে চার মাস মতো ক্লাস হওয়ার কথা। অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে কমবেশি সাড়ে তিন মাসের মতো ক্লাস হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মে মাসের প্রথম দিকে গরমের ছুটি দিয়ে দেওয়ার কথা বললেও কলেজগুলি অনলাইনে ক্লাস চালু রেখেছিল। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যসূচি বোঝার কোনও অসুবিধা থাকলে সেই সব ধারণা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য গরমের ছুটির মধ্যেও অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পাঠ্যক্রম শেষ না-হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে তা দ্রুত শেষ করে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন উঠছে, পড়ুয়ারা বার বার অনলাইন পরীক্ষার দাবি তুলছেন কেন? তা হলে বই খুলে লেখা যায়, এমন ধরনেরই প্রশ্ন করা হয়?
কলকাতার একটি কলেজের এক শিক্ষক জানান, ২৫ বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন তৈরির ধাঁচ মোটামুটি একই আছে। এক বছর যে-সব প্রশ্ন আসে, পরের বছর সাধারণত সেগুলি আর আসে না। সাজেশন-ভিত্তিক পড়াশোনা চলছে। কোচিং সেন্টারগুলি গতানুগতিক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে দেয়। ওই শিক্ষক বলেন, “পরীক্ষায় সৃষ্টিশীলতা দেখানোর কোনও সুযোগ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় থাকে না। করোনাকালে অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার সময় শিক্ষা মহল থেকে বার বার অভিযোগ উঠেছে, অনলাইনে পরীক্ষা হলে দেখা গিয়েছে, দল বেঁধে কোচিং সেন্টারে বসেই পড়ুয়ারা ওই পরীক্ষা দিচ্ছেন। কোচিং সেন্টারের শিক্ষকেরাই উত্তর লিখতে সাহায্য করছেন। তার কারণ, অনলাইনে পরীক্ষা নিলে যে-নিয়ম মানা দরকার, সেই ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয় না।’’
অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে এক দল ছাত্রছাত্রী এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হলেও কলেজ স্ট্রিটে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থানের চেষ্টা বানচাল করে দেয়। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পড়ুয়ারা কলেজ স্ট্রিট দিকের গেটের সামনে জড়ো হতেই পুলিশ সেখান থেকে তাঁদের হটিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্সির দিকের গেট অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করায় একই রকম বাধার মুখে পড়েন পড়ুয়ারা। বাধ্য হয়ে পড়ুয়ারা তখন কলেজ স্কোয়ারের ভিতরে চলে যান। সেখান থেকেও সূর্য সেন স্ট্রিটের দিকে পড়ুয়াদের বার করে দেওয়া হয়। পুলিশ ধাওয়া করে তাঁদের শ্রদ্ধানন্দ পার্কের দিকে নিয়ে যায়। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় তাঁদেরও ব্যাগ তল্লাশি করা হয় বলে অভিযোগ। উপাচার্য বা সহ-উপাচার্য, কেউই এ দিন আসেননি বলেই খবর। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ জানিয়েছে, কলেজ স্ট্রিট ও কলেজ স্কোয়ারে ১৪৪ ধারা জারি আছে। আগে, সোমবার রাতে ছাত্রছাত্রীদের হটিয়ে দিতে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে বলেও তাঁদের অভিযোগ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলনে পুলিশি আক্রমণের নিন্দা করেছেন ডিএসও-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়ক। ডিএসও-র দাবি, যে-সব ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে শামিল হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলাপ -আলোচনার মধ্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের। পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি হামলার যে-অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিটিও তার নিন্দা করেছে। সময় নিয়ে, পাঠ্যক্রম শেষ করে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy