নৈহাটিতে বাজির মশলা এবং রাসায়নিক নিষ্ক্রিয় করার সময়ে বিস্ফোরণের নানা মুহূর্ত।
মজুত করা বাজি বিস্ফোরণের জেরে কী হতে পারে, দেখেছে নৈহাটি ও চুঁচুড়া। শিশু-সহ আহতের সংখ্যা সেখানে তিন। ছাদ খসে, চাল উড়ে গিয়ে, জানলার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫০০ বাড়ি। তবে শুধু নৈহাটি নয়, এই মুহূর্তে বিপদসীমায় দাঁড়িয়ে খাস কলকাতাই!
কারণ, প্রশাসনের ঘরেই এখন জমে আছে ১৩ হাজারেরও বেশি নিষিদ্ধ বাজি। আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে শুক্রবার কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, থানা এবং লালবাজারের মালখানায় মজুত সেই বিপুল পরিমাণ বাজি নিষ্ক্রিয় করার কোনও নির্দিষ্ট দিনই ঠিক করে উঠতে পারছে না তারা।
কালীপুজো এবং ছটপুজো কেটে যাওয়ার পরেও পুলিশ কেন এই নিষিদ্ধ বাজি নিষ্ক্রিয় করছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। তখন পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালে উদ্ধার হওয়া প্রায় ছ’হাজার কিলোগ্রাম বাজি বহু দিন পড়ে ছিল তাদের জিম্মায়। গত বছরের লোকসভা ভোটের আগেও সেগুলির গতি করা যায়নি। শেষে কালীপুজোয় থানা ভরে উঠবে ভেবে অক্টোবরে হলদিয়া নিয়ে গিয়ে ওই বাজি নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে সেই পর্যন্তই। দুর্গা ও কালীপুজোর সময়ে উদ্ধার হওয়া হাজার হাজার বাজির কোনওটিই এর পরে নিষ্ক্রিয় করেনি পুলিশ। তার ফলে এখন উদ্ধার হওয়া বাজির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩-১৪ হাজার কেজি।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, একসঙ্গে রাখা না হলেও এই বিপুল বাজি কোনও ভাবেই জমিয়ে রাখা উচিত নয়। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে পর্ষদে আবেদন করলে সাহায্য করা হয়। নিষ্ক্রিয় করার পরে বাজিগুলি হলদিয়ায় নিয়ে যেতে হয়।’’ পর্ষদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাজি নিষ্ক্রিয় করার সময়ে জল বা আগুনের ব্যবহার পরিবেশ আইন বিরুদ্ধ। কারণ বাজি আগুনে পোড়ালে বায়ু দূষিত হবে, আর জল দিয়ে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা হলে সেই বিষাক্ত জলই ভূগর্ভে যাবে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এই বিষয়গুলি মাথায় রাখেনি বলেই নৈহাটির ঘটনা ঘটেছে, এমনই দাবি পর্ষদের।
পর্ষদ জানাচ্ছে, ব্যারাকপুর কমিশনারেট বরং হলদিয়ায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। সেখানে জমিতে কয়েকটি বিশাল প্লাস্টিকের জলাধার রাখা থাকে। ওই ফাঁকা জলাধারের মধ্যে প্রথমে লোহার পাটাতন পাতা হয়। ওই পাটাতনের উপরে ঢালা হয় ইট, সুরকি, বালির মিশ্রণ। তার উপরে রাখা হয় বাজিগুলি। এর পরে বাজির উপরে আর এক দফায় ওই মিশ্রণ ঢেলে জলাধারের মুখ আটকে মাটির গভীরে বসিয়ে দেওয়া হয়। মাটির নীচে পোঁতা এই মিশ্রণ কয়েক বছর পরে বোল্ডারের আকার ধারণ করে। সেগুলি তুলে বোল্ডার হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। কলকাতা পুলিশ
এই পদ্ধতি মেনেই গত কয়েক বছরে কাজ করেছে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গোটা প্রক্রিয়াটি হয় লালবাজারের অস্ত্র আইন বিভাগের তত্ত্বাবধানে। স্থানীয় থানাগুলি এবং লালবাজারের মালখানায় থাকা সব বেআইনি বাজিকে একটি নির্দিষ্ট দিনে তালিকা-সহ এক জায়গায় মজুত করা হয়। এর পরে লরিতে তুলে লালবাজার থেকেই সেগুলিকে পাঠানো হয় হলদিয়ায়। তা হলে কালীপুজোর বাজি এখনও মজুত করা রয়েছে কেন? অস্ত্র আইন বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘জমে থাকা বাজিগুলি আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নিষ্ক্রিয় করার কথাবার্তা পাকা হয়েছে। তবে তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy