Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশি হয়রানির পিছনে নির্দেশ নেত্রীর: আসিফ

সোমবারই সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবারও নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রীকেই বিঁধলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান। একটি প্রতারণা মামলার সূত্রে বিধাননগর কমিশনারেটে তাঁকে লাগাতার হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এ দিন আসিফ দাবি করেন, প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশেই পুলিশ এমন করছে।

বিধাননগর কমিশনারেটে আসিফ খান। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

বিধাননগর কমিশনারেটে আসিফ খান। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

সোমবারই সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবারও নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রীকেই বিঁধলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান। একটি প্রতারণা মামলার সূত্রে বিধাননগর কমিশনারেটে তাঁকে লাগাতার হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এ দিন আসিফ দাবি করেন, প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশেই পুলিশ এমন করছে।

এ দিন বিধাননগর কমিশনারেটে ডেকে পাঠানো হয় আসিফকে। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি কমিশনারেটে ঢোকেন। বেরিয়ে আসেন প্রায় সাত ঘণ্টা পরে, ৬টা ৫০ মিনিটে। তার পরই তিনি পুলিশ, প্রশাসন এবং শাসক দলের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়ান। আসিফ দাবি করেন, “আমার মুখ বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমার জেরা চলাকালীন পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্তাকে বারবার ফোন করে ডেকে পাঠানো হচ্ছিল। সাত ঘণ্টার মধ্যে মাত্র এক ঘণ্টা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কী? মাঝেমধ্যেই তো ফোনে নানা নির্দেশ আসছে।”

আগের দিন মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত ‘মিথ্যাবাদী’ বলে তোপ দেগেছিলেন আসিফ। এ দিন নাম না করে অভিযোগ করলেন, তাঁর উপর মানসিক চাপ তৈরি করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রীই। এই প্রসঙ্গে তিনি সারদা মামলায় ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষের কথাও তোলেন। আসিফের কথায়, “কুণালবাবু মুখ্যমন্ত্রীর কাছের মানুষ ছিলেন। কিন্তু যখন দলের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করলেন, তখনই তাঁকে জেলে ভরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ মামলা দায়ের করে দিয়েছে।” আসিফের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কুণালকে পুলিশ গ্রেফতার করত না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বলেই কুণালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও একই চেষ্টা চলছে। আসিফের বক্তব্য, “আমাকেও গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনগত ভাবে আমাকে গ্রেফতার করা যাবে না। হাইকোর্ট আমাকে আগাম জামিন দিয়েছে।”

উত্তরপ্রদেশের ব্যবসায়ী, তথা তৃণমূল নেতা ওয়াইদুর হুসেন সিদ্দিকি একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় আসিফের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। আসিফের দাবি, এটি ভুয়ো মামলা। তাঁকে ফাঁসানোর জন্যই এই মামলা সাজানো হয়েছে। পুলিশ তাঁকে ২০ কোটি টাকা ফেরত দিতে বলছে বলে আসিফের অভিযোগ। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, তিনি টাকা নেননি। বরং তাঁর পাল্টা দাবি, “যে ব্যক্তি (সিদ্দিকি) মুকুলবাবু, মমতাদিকে চেনে সে আমাকে কেন টাকা দেবে? দিলে তাঁদের দেবে। টাকা নিলে তাঁরা নিয়েছেন।” এ ক্ষেত্রেও আসিফের তির পরোক্ষ ভাবে মমতা-মুকুলের দিকেই। এ ব্যাপারে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা হয়েছিল। কেউই মুখ খোলেননি।

কিন্তু এ দিন সাত ঘণ্টা ধরে পুলিশ তা হলে কী করল? আসিফের বক্তব্য, পুলিশ নানা ভাবে সময় নষ্ট করছে, তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখছে। নানা অফিসারের আনাগোনা চলছে। ঘন ঘন ফোন আসছে। “কোনও কোনও পুলিশ বারবার উঠে যাচ্ছেন। আবার অন্য কোনও জায়গা থেকে নির্দেশ আসছে আমাকে আরও দু’ঘণ্টা বসিয়ে রাখতে।’’ আসিফ অভিযোগ করেন, তাঁর পাসপোর্ট ও ভোটার কার্ড চাওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে তিনি ডিজি ও সল্টলেকের কমিশনারকে চিঠিও দিয়েছেন। যদিও আসিফের অভিযোগ, এ দিন কোনও তদন্তকারী অফিসারই সই করে চিঠিটি নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। চিঠি জমা দিতেই প্রায় চার ঘণ্টা পেরিয়ে যায় বলে আসিফের দাবি। তাঁর কথায়, “চিঠির উত্তর সন্তোষজনক না হলে আদালতে যাব।”

তা হলে পুলিশ কি তাঁর কাছে কিছুই জানতে চায়নি? আসিফের উত্তর, “ওঁরা একটা কথাই জানতে চাইছেন, আমি কেন সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম।” ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর, আসিফ সিঙ্গাপুরে ছিলেন। তাঁর দাবি, মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। ওই সময়ই সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের দলও সিঙ্গাপুরে ছিল। আগের দিন আসিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন পুলিশ তাঁকে রীতিমতো শাসিয়ে বলেছে, ‘আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমরা জানি।’ এ দিন সোজাসুজি সিঙ্গাপুর নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। প্রশ্ন করেছে, আসিফ তাঁর ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন কেন। আসিফের উত্তর, “আমি ওঁদের বলেছি, আমি লেখাপড়া কম জানি। তাই ভাই সঙ্গে গিয়েছিল।”

কিন্তু ভবিষ্যতে তিনি যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন, তাই পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আসিফের ধারণা। তাঁর অভিযোগ, “আমি যাতে সিবিআইয়ে মুখ না খুলি, তাই আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে।” এ ব্যাপারে কমিশনারেটকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, আসিফকে কোনও ভাবেই হেনস্থা করা হয়নি। একাধিক অফিসার প্রশ্ন করেছেন, তাই সময় লেগেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy