প্রতীকী ছবি।
প্রায় অর্ধযুগ আগে টেট দিয়েও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষকপদে নিয়োগপত্র না-পাওয়ায় তাঁরা দু’দিন ধরে বিক্ষোভ-অবস্থান করছিলেন সল্টলেকে, স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র মূল দফতরের সামনে। অভিযোগ, বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ বুধবার রাতে জোর করে আন্দোলন ভেঙে দিয়ে তাঁদের গাড়িতে তুলে শিয়ালদহে নিয়ে যায়। কয়েক জনকে নিগৃহীত করা হয়, জলকামান চালানো হয় বলেও অভিযোগ।
নিগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, জলকামান নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তবে তা ব্যবহার করা হয়নি। বিধাননগরের সিপি মুকেশ কুমার জানান, জোর করে কাউকে তোলা হয়নি। যেখানে বিক্ষোভ চলছিল, সেখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। ওখানে বিক্ষোভের অনুমতি নেননি আন্দোলনকারীরা। ‘‘ওঁদের অন্যতম দাবি ছিল, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা। বুধবার সন্ধ্যায় বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ওঁদের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে সাহায্য করেছি আমরা। তার পরেও রাতে ওঁরা না-ওঠায় ওঁদের ওখান থেকে উঠে যেতে অনুরোধ করি,’’ বলেন বিধাননগরের সিপি।
ধর্না-বিক্ষোভ চলছিল মঙ্গলবার থেকে। সঞ্জিত সাধুখাঁ নামে এক কর্মপ্রার্থী জানান, বুধবার রাত ১২টা নাগাদ পুলিশের কয়েকটি গাড়ি এসে বিক্ষোভস্থল ঘিরে ফেলে এবং মাইকে ঘোষণা করে, এখনই ধর্না তুলে নিতে হবে। “আমরা তাতে রাজি না-হওয়ায় পুলিশ আমাদের বলপূর্বক গাড়িতে তোলে। পুলিশের টানাহেঁচড়ায় কয়েক জনের জামা ছিঁড়ে যায়। বেশ কয়েকটা গাড়িতে সকলকে তোলা হয়। রাতের অন্ধকারে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, বলেনি পুলিশ। শেষে রাত ১টা নাগাদ ওরা আমাদের শিয়ালদহ স্টেশনে নামিয়ে দেয় এবং সকাল হলে বাড়ি চলে যেতে বলে,” বলেন এক আন্দোলনকারী। কিছু বিক্ষোভকারী রাজি না-হওয়ায় ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক আন্দোলনকারী বলেন, “ঠিক হয়, ধর্মতলায় গাঁধী-মূর্তির পাদদেশে বা মৌলালিতে আমরা ফের আন্দোলনে বসব। কয়েক জন মৌলালিতে জড়ো হলে পুলিশ গিয়ে জমায়েত তুলে দেয়। সকালে আমরা বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হই।”
প্রার্থীদের দাবি
• মেধা-তালিকা মেনে দ্রুত নিয়োগ। মেধা-তালিকা থেকে যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদেরও তালিকাভুক্তি।
এসএসসির বক্তব্য
• উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের বিষয়টি বিচারাধীন।
প্রার্থীরা জানান, উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৪ সালে টেটের নোটিস বেরোয়। ২০১৫-য় পরীক্ষার পরে ফল বেরোয় ২০১৬-য়। ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর মেধা-তালিকা প্রকাশ করা সত্ত্বেও নিয়োগ হচ্ছে না। এক আন্দোলনকারী জানান, বুধবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেও সুরাহা হয়নি।
এসএসসি-র এক কর্তা বলেন, “প্রার্থীরাও জানেন, উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের বিষয়টি মামলার জটে আটকে আছে। তা সত্ত্বেও কেন ওঁরা এসএসসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয়। পরিষ্কার নয় ওঁদের দাবিগুলিও। এক-এক জন প্রার্থী এক-এক রকম দাবি করছেন।” এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
প্রার্থীদের বক্তব্য, মামলার আগে নিয়োগের যথেষ্ট সময় ছিল। কিন্তু সরকারের গাফিলতিতেই নিয়োগ হয়নি। এখনও নিয়োগ হচ্ছে না সরকারের এবং এসএসসি-র সদিচ্ছার অভাবেই। আদালতে শুনানি শেষ। কেন রায় বেরোচ্ছে না, প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের একাংশ জানান, ২০১৪-য় যখন টেটের নোটিস বেরোয়, তখন ১৪,৩৩৯টি পদ শূন্য ছিল। গত প্রায় ছ’বছরে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়েছে। আরও ৫০০১টি পদ অনুমোদন পেয়েছে অর্থ দফতরের। কিছু নতুন স্কুল স্থাপিত হওয়ায় প্রায় ৫০০০ পদ তৈরি হয়েছে।
জোর করে আন্দোলন বন্ধ করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন ও বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। তাদের বক্তব্য, শীতের রাতের অন্ধকারে পুলিশ অতর্কিতে ধর্নামঞ্চে হাজির হয়ে যে-ভাবে জোর করে ওই চাকরিপ্রার্থীদের হটিয়ে দিল, তা অমানবিক। রাইট টু এডুকেশন ফোরামের অভিযোগ, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করেছে, তাঁদের উপরে জলকামান প্রয়োগ করেছে। প্যানেলভুক্ত শিক্ষকপদ প্রার্থীদের সঙ্গে সরকারের এই আচরণ নিন্দনীয়। শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলি ধুঁকছে। অথচ পরীক্ষা দিয়ে তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগই করা হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy