Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Haldia

ছক কষেই খুন মা-মেয়েকে, চুল ও কানের দুল থেকে মিলল সূত্র

১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয়রা নদীর পাড়ে কিছু জ্বলতে দেখেন। তাঁরাই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন দু’টি দেহ পুড়ছে।

রিয়া দে এবং রমা দে।

রিয়া দে এবং রমা দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:১৮
Share: Save:

রীতিমতো পরিকল্পনা করে, আঁটঘাট বেঁধে মা রমা এবং মেয়ে রিয়াকে কলকাতা থেকে হলদিয়ায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল শেখ সাদ্দাম হোসেন। মা-মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করেছিল দুর্গাচকের হাসপাতাল রোডের একটি বাড়িতে। পুলিশের অনুমান, রাতে খাওয়ার সঙ্গে মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে বেঁহুশ করা হয় মা-মেয়েকে। তার পর রাতেই শাগরেদদের নিয়ে বেহুঁশ অবস্থাতেই মা-মেয়েকে নিয়ে যায় ঝিকুড়খালির সুনসান নদী পাড়ে। ভোররাতে সেখানেই জীবিত অবস্থায় আগুন দিয়ে দেওয়া হয় মা-মেয়ের গায়ে। অচৈতন্য অবস্থাতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের।

১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয়রা নদীর পাড়ে কিছু জ্বলতে দেখেন। তাঁরাই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন দু’টি দেহ পুড়ছে। তখনও আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। স্থানীয় বাসিন্দারা সেই আগুন নেভালেও, দেহ দু’টি সনাক্ত করার মতো অবস্থায় ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে, দু’টি দেহই পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেঁচে গিয়েছিল এক জনের কয়েক গাছি চুল এবং অন্য জনের কানের দুল। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। সেখান থেকেই জানা যায়, দু’জনের দেহেই আগুনের ক্ষত ‘ অ্যান্টি মর্টেম’ অর্থাৎ মৃত অবস্থায় পোড়ানো হয়নি। জীবিত অবস্থায় পোড়ানো হয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের হাতে দু’টি দেহ সনাক্ত করার মতো কোনও সূত্র ছিল না। কিন্তু তদন্তকারীদের নজর কাড়ে এক জনের সোনালি সবুজ চুল এবং অন্য জনের সোনার কানের দুল। কানের দুল দু’টি স্বস্তিকার আকারে এবং তাতে খোদাই করা এসজেপি এবং কেডিএম।

তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘ আমরা ওই দু’টি বৈশিষ্ট উল্লেখ করে দেহ সনাক্ত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিই। অনেক ফোন আসে। সেগুলো খতিয়ে দেখতে দেখতেই এক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন যিনি ওই কানের দুলের মালিক সম্পর্কে কিছু তথ্য দেন। সেই সূত্র ধরে এগোতে গিয়েই হদিশ মেলে নিউ ব্যারাকপুরের মা-মেয়ের।”

ধৃত শেখ সাদ্দাম হোসেন ও শেখ মঞ্জিল আলম মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে রমা এবং রিয়ার কোনও আত্মীয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি যাঁদের কাছ থেকে কোনও বাড়তি তথ্য মেলে। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের দল রমা-রিয়ার পাড়ায় খোঁজ করে জানতে পারে যে তাঁরাও বেশ কয়েক দিন ধরে বেপাত্তা। তাঁদের পাড়ায় না থাকার সময়টা মিলে যায় দেহ পাওয়ার সময়ের সঙ্গে। পুলিশ পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেই জোগাড় করে মা-মেয়ের ফোন নম্বর।

সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে এগোতে গিয়েই জানা যায়, মা-মেয়ের ফোনের টাওয়ার লোকেশন ১৭ তারিখ রাতেও মিলছে হলদিয়াতেই। ফোনের সূত্র ধরেই হদিস মেলে আরও কয়েক জনের। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই পুলিশ জানতে পারেন, মা-মেয়ের সঙ্গে যোগ রয়েছে এসকর্ট সার্ভিস বা দেহ ব্যবসার।

পুলিশ সূত্রে খবর, টুকরো টুকরো তথ্য একজোট করে তাঁরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে পান আরও একটি মোবাইল নম্বর। মা-মেয়ের ফোন থেকে ওই নম্বরে দেহ উদ্ধারের আগের রাতে বা তার আগে কয়েক দিনে বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে ওই মোবাইল নম্বরের মালিকের। আর সেই নম্বরের মালিকের খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায় সে নিজেও হলদিয়ার বাসিন্দা এবং হলদিয়াতেই রয়েছে। তদন্তে অনেকটাই এগিয়ে যায় পুলিশ। ওই মোবাইল নম্বরের মালিক শেখ সাদ্দাম হোসেন। বাড়ি দুর্গাচক থানা এলাকাতেই। খোঁজ করতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় একটি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায়। হাতে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসক পুলিশকে জানান, হাতে ক্ষত রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও, পর পর ফোনালাপের তথ্য সামনে আনতেই জেরায় ভেঙে পড়ে সাদ্দাম। স্বীকার করে রিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা। পেশায় ঠিকাদার সাদ্দাম পুলিশকে জানায়, কোনও ম্যাসাজ পার্লারে যাতায়াতের সুবাদেই আলাপ হয় রিয়ার সঙ্গে। সেখান থেকে সম্পর্কও তৈরি হয়। পুলিশের দাবি, সাদ্দাম নিজে বিবাহিত হলেও, সেই তথ্য লুকিয়ে রিয়াকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে বিয়ে না করায় চাপ দিচ্ছিল মা-মেয়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, সাদ্দাম জেরায় দাবি করেছে, রীতিমতো ব্ল্যাকমেল করছিল মা-মেয়ে। আর তা থেকে মুক্তি পেতে খুনের ছক কষে সাদ্দাম। হলদিয়ায় ডেকে পাঠায় রিয়া-রমাকে। এমন ভাবে খুনের পরিকল্পনা করে যাতে মা-মেয়েকে সনাক্ত না করা যায়। তাই নিজের সঙ্গীদের নিয়ে জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে দেয়।

পুলিশের দাবি, ধৃত সাদ্দাম এবং তার সঙ্গী মনজুর আলম ছাড়াও আরও কয়েক জন যুক্ত এই জোড়া খুনে। পুলিশ তাঁদের খোঁজ করছে। ধৃতদের এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তদন্তকারীদের দাবি, এখনও তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। ফের জেরা করা হবে ধৃতদের। তার পরেই জানা যাবে খুনের আসল উদ্দেশ্য কী!

আরও পড়ুন: নদীর পাড়ে জ্বলন্ত দেহ, শোরগোল শিল্পশহরে

আরও পড়ুন: জোড়া দেহের রহস্যভেদে ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক দল

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy