গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
হাওড়ামুখী ডাউন কাটিহার এক্সপ্রেসে তবলাবাদক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সেই ‘সিরিয়াল কিলার’ রাহুল ওরফে ভোলু কর্মবীর জাঠকে অবশেষে নাগালে পেল পুলিশ। ভোলুকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল গুজরাত পুলিশ। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই এ রাজ্যের পুলিশ তাঁকে হাওড়ায় নিয়ে আসে গুজরাত থেকে। বুধবার বিকেলে মুম্বই থেকে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে করে ভোলুকে নিয়ে আসেন রেল পুলিশের আধিকারিকেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতকে বৃহস্পতিবার হাওড়া আদালতে হাজির করিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।
গত ১৯ নভেম্বর কাটিহার এক্সপ্রেসের প্রতিবন্ধী কামরা থেকে উদ্ধার হয়েছিল সৌমিত্রের দেহ। তার তদন্তে নেমেই ভোলুর হদিস পায় রেল পুলিশ। ভোলু তত দিনে গ্রেফতারও হয়েছেন। এক যুবতীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাত পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, গুজরাত পুলিশের কাছেই তবলাবাদককে খুনের কথা স্বীকার করেছিলেন ভোলু।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, গুজরাত পুলিশের কাছ থেকে ভোলুর খবর পাওয়া মাত্রই তদন্তকারীদের একটি দল সে রাজ্যে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে ভোলুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। জেরায় ধৃত দাবি করেছিলেন, বিড়ি খাওয়া নিয়ে বচসার সময়ে তিনি সৌমিত্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করেছিলেন। পরে তাঁর ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যান। কাটিহার থেকে মালদহ স্টেশনের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছিল। আজিমগঞ্জ স্টেশনে নেমে গিয়েছিলেন ভোলু। পরে অন্য একটি ট্রেনে চেপে ফিরে যান মালদহে। সেখান থেকে আবার হাওড়ামুখী ট্রেন ধরেন। এর পর হাওড়ায় নেমে ট্রেন ধরে দক্ষিণ ভারতে চলে যান অভিযুক্ত।
প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করেই ভোলুকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। তদন্তকারীদের ওই সূত্র জানিয়েছে, ছোটবেলায় রাহুল পোলিয়ো আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই কারণে তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন। হাঁটার ধরন দেখেই তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও খুনের পর কোন ট্রেনে সফর করে তিনি এ রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয় তদন্তকারীদের কাছে। ভোলু আদৌ সবটা সত্যি বলছেন কি না, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারছেন না তাঁরা। সেই কারণেই ভোলুকে আরও ভাল করে জেরা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, তবলাবাদক ছাড়াও অন্য চার তরুণীকে গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তিনি খুন করেছেন বলে জেরায় গুজরাত পুলিশের কাছ দাবি করেছিলেন ভোলু। জানিয়েছিলেন, গত ২০ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে পুনে-কন্যাকুমারি এক্সপ্রেসে যৌন নির্যাতনের পর এক মহিলাকে খুন করেছিলেন তিনি। তার কয়েক দিন পরেই তিনি কর্নাটকে বেঙ্গালুরু-মুরুদেশ্বরগামী ট্রেনে আর এক জনকে খুন করেন। এর পর ১৪ নভেম্বর গুজরাতের উর্বারাতেও একই ভাবে এক তরুণীর উপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে খুন করেছেন। সেখান থেকে পালিয়ে ১৯ নভেম্বর তবলাবাদককে খুন। ভোলুর পরের গন্তব্য ছিল দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ। তার পর ২৪ নভেম্বর গুজরাত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। ঠিক তার আগের রাতেই সেকেন্দরাবাদে আর এক মহিলাকে ভোলু খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ। পরে উর্বারার তরুণী খুনের ঘটনায় ভোলুকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাত পুলিশ।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, গুজরাত পুলিশের কাছ থেকে তারা জেনেছে, হরিয়ানার বাসিন্দা ভোলুর অপরাধের হাতে খড়ি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়। ওই সময়ে একটি সাইকেল চুরি করেছিলেন তিনি। তবে নাবালক হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা রুজু হয়নি। ভোলুর বাঁ পায়ে পোলিয়োর কারণে সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ভোলু পুলিশের হাতে প্রথম গ্রেফতার হন ২০১৫ সালে। উত্তরপ্রদেশের মথুরায় ট্রাক চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। গুজরাত পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ভোলু জানিয়েছিলেন, পায়ে সমস্যা থাকায় তাঁকে ট্রাক চালাতে দেওয়া হত না। সেই রাগেই তিনি ট্রাক ছিনতাই করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় সাতটি ট্রাক চুরির মামলা রয়েছে। এর পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অস্ত্রপাচারের অভিযোগে ফের ভোলুকে পাকড়াও করেছিল উত্তরপ্রদেশের সহারনপুর জেলার পুলিশ। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্থানের জোধপুর রেল পুলিশ ডাকাতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। তার পরে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল জোধপুর জেলে। সেখান থেকে মে মাস নাগাদ ছাড়া পেয়েছিলেন। তার পরেই তিনি পাঁচটি খুন করেছেন বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy