Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
World Cup Ticket Black Marketing

কালোবাজারি: ধৃত ‘সিএবি সদস্য’

কালোবাজারির অভিযোগের মামলায় সাক্ষী হিসেবে স্নেহাশিসকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে লালবাজার। ময়দান থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার ইডেনে গিয়ে সিএবি সভাপতিকে নোটিস দিয়েছিল।

arrest.

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৬
Share: Save:

ফেসবুকে একটা হাতের ছবি। সেই হাতে জাপানি হাতপাখার কায়দায় মেলে ধরা বিশ্বকাপে ইডেনে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের একগোছা টিকিট। সঙ্গে দু’টো ফোন নম্বর। আর লেখা, ‘টিকিট লাগলে ফোন করুন’।

টিকিট নেই। আবার আছেও। কালোবাজারে ইডেনের রবিবারের ম্যাচের টিকিট বিকোচ্ছে দশ থেকে প্রায় কুড়ি গুণ বেশি দামে! অনলাইনে কাটা টিকিটের কিউআর কোড ও পরে আস্ত টিকিটটাই বিকিয়ে যাচ্ছে ধাপে ধাপে। পুলিশি ধরপাকড় সত্ত্বেও টিকিটের কালোবাজারি থামছে না। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ১৬ জন। কালোবাজারির অভিযোগে সিএবির এক সাধারণ সদস্যও গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। যদিও সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ওই ব্যক্তিকে তিনি চেনেন না।

কালোবাজারির অভিযোগের মামলায় সাক্ষী হিসেবে স্নেহাশিসকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে লালবাজার। ময়দান থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার ইডেনে গিয়ে সিএবি সভাপতিকে নোটিস দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ময়দান থানায় সাক্ষী হিসেবে তাঁকে উপস্থিত হতে হবে। যদিও শুক্রবার স্নেহাশিস কিংবা তাঁর কোনও প্রতিনিধি পুলিশের কাছে হাজিরা দেননি বলেই লালবাজার সূত্রের খবর। স্নেহাশিস বলেছেন, ‘‘লালবাজারে সাক্ষী হিসেবে হাজিরা দেওয়ার কোনও নোটিস আমি পাইনি।’’ যদিও লালবাজারের দাবি, সিএবিতে গিয়েই নোটিস দিয়ে আসা হয়েছিল।

লালবাজার জানিয়েছে, সিএবি সভাপতিকে আবার নোটিস পাঠানো হচ্ছে। সিএবির তরফ থেকে কেউ পুলিশের কাছে না গেলেও যে সংস্থা অনলাইনে বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি করছে, পুলিশের তলব পেয়ে তাদের দুই প্রতিনিধি শুক্রবার দুপুরে ময়দান থানায় হাজিরা দিয়েছেন। রাত পর্যন্ত তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কোথায় এবং কী ভাবে টিকিট বণ্টন করা হয়েছে তা জানতেই সিএবির সভাপতি এবং ওই অনলাইন সংস্থাকে ডাকা হয়েছে। অনলাইন সংস্থার দুই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার পরে তাদের এক উচ্চপদস্থ কর্তাকে আজ, শনিবার ময়দান থানায় তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে।

কালোবাজারির অভিযোগে গত ১ নভেম্বর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে রবিবারের ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯৪টি টিকিট। এঁদের মধ্যে ৯ জনকে লালবাজার গ্রেফতার করেছে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে। চারটি নতুন মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশের দাবি, এই ৯ জনের মধ্যেই রয়েছেন সিএবির এক সদস্য। ধৃতের নাম হেমল শাহ। তাঁকে এন্টালি থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে দশটি টিকিট-সহ মৌলালি থেকে গ্রেফতার করেছে। হেমলের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে ইসলামুল হোড়া ওরফে টিঙ্কু নামে এক জনকে। স্নেহাশিস যদিও বলেছেন, ‘‘হেমল শাহ বলে যে গ্রেফতার হয়েছে তাকে আমি চিনি না।’’ টিকিটের কালোবাজারি প্রসঙ্গেও তাঁর বক্তব্য, এতে সিএবি-র কোনও দায় নেই।

ম্যাচের ৯০০ টাকার টিকিট দশ গুণ বেশি দামে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে নেতাজিনগর থানা এলাকা থেকে শুভ্রদীপ ভট্টাচার্য, সুমন সর্দার এবং সন্দীপন লাহা নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁদের কাছ থেকে ১৭টি টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভুয়ো ওয়েবসাইট থেকে চড়া দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগে হর্ষ গুপ্ত এবং হর্ষিত আগরওয়াল নামে দু’জন গ্রেফতার হয়েছেন। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, টিকিটের কালোবাজারিতে সিএবির ওই ‘সাধারণ সদস্য’-সহ ৯ জনের কী ভূমিকা রয়েছে, তা দেখা হচ্ছে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।

নেতাজিনগর এবং এন্টালি থানায় সিএবি ও টিকিট বিক্রি করা অনলাইন সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। লালবাজারের দাবি, অনলাইনে টিকিট কিনে তা চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এর জন্য সমাজমাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন সংস্থাকে ব্যবহার করছে কালোবাজারিরা। হেয়ার স্ট্রিট থানায় দায়ের করা অভিযোগে পুলিশ জানিয়েছে, একটি ফেসবুক পেজে টিকিট বিক্রি হচ্ছে দেখে এক জন ৯৪ হাজার টাকা নির্দিষ্ট একটি ইউপিআই অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছিলেন। পরে জানা যায়, সেটি ভুয়ো। সাইবার থানার পুলিশ ওই মামলার তদন্ত শুরু করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে টিকিটের ছবি দেখিয়েও কালোবাজারিরা কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করেছে বলে অনুমান পুলিশের।

এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানাচ্ছেন, তদন্তে দেখা যাচ্ছে, টিকিট বিক্রি বা বুকিংয়ের গোড়াতেই সমস্যা রয়েছে। এক জন হয়তো অনলাইনে টিকিট বুক করছেন। তার পর সুযোগ বুঝে সংস্থার দেওয়া কিউআর কোড এবং আইডি অন্য কাউকে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি। সেটি নিয়ে এই দ্বিতীয় ব্যক্তি নির্দিষ্ট টিকিট তুলছেন। তিনি এ বার সেই টিকিট আরও চড়া দামে তৃতীয় কাউকে বিক্রি করছেন। মূলত অনলাইনেই কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে গিয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। এমনকি অনলাইন সংস্থাটির থেকে তোলা টিকিট কালোবাজারে বিক্রির জন্য আস্ত ওয়েবসাইটও তৈরি হয়ে গিয়েছে! শুক্রবার রাতে সেই সাইটে ৯০০ টাকার একটি টিকিটের দাম দেখিয়েছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা! অথচ সিএবি-র কোনও কোনও সদস্য বলছেন, তাঁদের কাছেই ম্যাচের টিকিট আসেনি। লালবাজার জানিয়েছে, টিকিটের

এই হাহাকার এবং কালোবাজারির ঘটনায় বিসিসিআইয়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিকেও ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পরে।

সিএবি-র সদস্য এবং সাধারণ দর্শকেরা কেন পর্যাপ্ত টিকিট পাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুলে ইডেন গার্ডেন্সে সিএবি দফতরের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। ক্ষোভের সুর তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরেও। টিকিটের কালোবাজারির প্রসঙ্গ তোলার পাশাপাশি ‘বেটিং চক্র’ দমন করতে কলকাতা পুলিশকে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। ইডেনের ৬৮ হাজার আসনের মধ্যে ৯ হাজার টাকা এবং তার বেশি মূল্যের মাত্র ৯০টি টিকিট পড়ে থাকা নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডলে (পূর্বতন টুইটার) বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। টিকিটের সঙ্কট চলায় সব বিধায়কের জন্য টিকিট চেয়ে কয়েক দিন আগেই সিএবি সভাপতিকে চিঠি লিখেছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের দিন বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন স্নেহাশিস। বিধায়কদের জন্য একটি করে টিকিটও পাঠিয়েছে সিএবি।

দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে এ দিন কিছু ক্ষণ ইডেনের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, তপন আগরওয়াল, ইন্দ্ররাজ চট্টোপাধ্যায়েরা শামিল হয়েছিলেন বিক্ষোভে। তাঁদের বক্তব্য, ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ মানুষ-সহ সিএবি-র আজীবন সদস্যেরা পর্যন্ত ঠিকমতো টিকিট পাচ্ছেন না। অথচ টিকিট কালোবাজারে চলে গিয়েছে! তাঁদের আরও অভিযোগ, বিসিসিআই সচিব জয় শাহ ২৪ হাজার টিকিট নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের ক্রীড়া দফতরের হেলদোলই নেই!

অন্য বিষয়গুলি:

CAB arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy