গোলমালের পরে পাঁচলায় পুলিশের টহল। ছবি: সুব্রত জানা
জেলার সর্বত্র পুলিশ, র্যাফে ছয়লাপ। তা সত্ত্বেও শনিবারও পুরোপুরি গোলমালমুক্ত থাকল না হাওড়া। এ দিন মুম্বই রোডে অবরোধ হয়নি। তবে, অশান্ত হয়ে ওঠে পাঁচলা। অবরোধের পাশাপাশি দোকানে অগ্নিসংযোগ, ঘর ভাঙচুর, পুলিশের উপরে হামলা— কিছুই বাদ থাকেনি। আতঙ্কে পাঁচলার কয়েকটি পরিবার ঘর ছেড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জগৎবল্লভপুর এবং পাঁচলায় আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গ্রামীণ হাওড়ার বাকি এলাকায় কাল, সোমবার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকছে।
বিজেপির মুখপাত্র (এখন সাসপেন্ডেড) নূপুর শর্মার মন্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতি এবং শুক্র— দু’দিন ধরে দফায় দফায় হাওড়ার মুম্বই রোডের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধকে ঘিরে মানুষ যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন, তেমনই গোলমালও হয়েছে। সেই তুলনায় সামগ্রিক ভাবে এ দিন জেলার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়।
তবে, সকাল ১০টা নাগাদ পাঁচলা-বাউড়িয়া রোডের কেটোপোলে অবরোধ শুরু হয়। দু’ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ গিয়ে তোলে। তার পরেই সেখানকার মিরবাজারে বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়। অন্তত ৬টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একটি ছোট বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ-র্যাফ গিয়ে লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পাল্টা পুলিশ- র্যাফকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। তাতে জনাপাঁচেক পুলিশ ও র্যাফ কর্মী আহত হন। আগুন নেভাতে দমকল আসে।
এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে। সুনসান হয়ে যায় গোটা তল্লাট। অন্তত তিনটি পরিবার দুপুরেই এলাকা ছাড়ে। তাঁদের মধ্যে এক জন বলেন, ‘‘যে ভাবে অশান্তি বাড়ছে, তাতে রাতে ঘরে থাকতে ভরসা পাচ্ছি্ না। তাই আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাচ্ছি।’’ মানুষের আতঙ্ক কাটাতে অবশ্য ওই এলাকায় পুলিশের জোরদার টহলদারি শুরু হয়। হাজির ছিলেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ)
সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।
অন্যত্র গোলমাল না হলেও জেলার সামগ্রিক ছবিটা ছিল থমথমে। রাস্তাঘাটে লোকজন কম বেরিয়েছেন। গাড়ির সংখ্যাও কম ছিল। উলুবেড়িয়ায় গরুর হাট বসলেও ক্রেতা আসেননি বললেই চলে। দুপুরে উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় দলীয় কার্যালয়ে আসেন বিজেপি নেতা তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার এই দলীয় কার্যালয়ে যখন ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়, তখন পুলিশকে বার বার খবর দেওয়া হলেও তারা আসেনি।’’ জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, তিন দিন ধরে অবরোধ, হামলা, অগ্নিসংযোগ— এ সব অভিযোগে পুলিশ উলুবেড়িয়া এবং রাজাপুর থেকে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের এ দিন উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
মুম্বই রোড অবরোধমুক্ত থাকলেও ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি এ দিনও। শনিবারও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর-হাওড়া শাখায় বাতিল হয় বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন। টাটানগর-হাওড়া স্টিল, আদ্রা-হাওড়া শিরোমণি, পুরুলিয়া-হাওড়া ও ভদ্রক-হাওড়া বাঘাযতীন এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিলের কথা জানায় খড়্গপুর ডিভিশন। লোকাল ট্রেন স্বাভাবিক থাকলেও দুর্ভোগ এড়ানো যায়নি। অনেকেই স্টিল, পুরুলিয়ার টিকিটে হাওড়ামুখী অন্য দূরপাল্লার ট্রেনে ওঠায় সেখানে ভিড় বাড়ে। ৬টি দূরপাল্লার ট্রেন হাওড়া থেকে এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমার বলেন, “যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হয়েছে, তা রাজ্য সরকারের মোকাবিলা করার কথা। তা-ও আমরা পরিস্থিতি সামলাচ্ছি। টিকিট পরীক্ষকদেরও নির্দেশ দিয়েছি, কোন ট্রেনের যাত্রী না দেখে যে ট্রেনগুলি চলছে, তাতে সর্বোচ্চ যাত্রী উঠতে দিতে হবে। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোই আমাদের লক্ষ্য।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy