Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Polba

পোলবার সেই নির্যাতিতা দগ্ধ কিশোরীর মৃত্যু

ওই কিশোরী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পোলবা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৮
Share: Save:

চল্লিশ দিনের লড়াই শেষ।

বৃহস্পতিবার সকালে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে মারা গেল পোলবার সেই অগ্নিদগ্ধ কিশোরী। ধর্ষণের শিকার হয়ে লোকলজ্জার ভয়ে বছর ষোলোর মেয়েটি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল বলে তার আত্মীয়দের অভিযোগ।

ওই কিশোরী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়। ইমামবাড়া হাসপাতালে দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘লোকলজ্জার ভয়ে গায়ে আগুন দিলেও হাসপাতালে প্রতিনিয়ত মেয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু পারল না। যে ছেলেটার জন্য মেয়ের এই পরিণতি হল, তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণ এবং পকসো আইনের ৪ নম্বর ধারায় অভিযুক্ত সুমন সাঁতরার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্ত
জেলে রয়েছে। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেরায় ধৃত অপরাধ স্বীকার করেছে। তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ
করা হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। মামলা নির্দিষ্ট পথেই চলবে।’’

মেয়েটির আত্মীয়েরা জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মেয়েটি হেঁটে বাড়ির কাছেই টিউশন নিতে যাচ্ছিল। অভিযোগ, সেই সময় প্রতিবেশী বছর সাতাশের সুমন মোটরবাইকে চাপিয়ে কিছুটা দূরে আমবাগানে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি পরের দিন বাড়িতে বিষয়টি জানায়। তার মা ১৬ ডিসেম্বর সুমনের বিরুদ্ধে পোলবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই রাতেই পুলিশ সুমনকে ধরে। বাইকটি উদ্ধার করা হয়।

গত ১৯ ডিসেম্বর বাড়িতে মেয়েটি অগ্নিদগ্ধ হয়। মাথা, বুক, হাত-পা পুড়ে যায়। তদন্তকারীরা জানান, ওই সকালে মেয়েটি বাড়িতে একাই ছিল। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে সে জানায়, লোকলজ্জার ভয়ে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মঘাতী হতে চেয়েছিল।

অভিযুক্তের বাবা বরুণ সাঁতরা স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের বিষয়টি মিটমাট করতে তিনি এবং পোলবা-দাদপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত গোল তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কার্যত সালিশি সভা বসান। তাঁরা সমঝোতায় রাজি হয়নি। স্থানীয় বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যারা সালিশি করেছিলেন, তাদেরও বিচার হোক।’’

বরুণ এবং প্রশান্তের দাবি, মেয়েটির মা-ই তাঁদের ডেকেছিলেন। তাঁরা সালিশি করেননি। এ দিন বরুণ বলেন, ‘‘মেয়েটার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। ছেলে যদি দোষী হয়, আইন মোতাবেক শাস্তি হোক।’’ একই বক্তব্য প্রশান্তেরও। পুলিশ জানিয়েছে, সালিশির অভিযোগ হয়নি।

নির্যাতিতার পরিণতি নাড়া দিয়েছে সমাজকে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী, আইনজীবী রাংতা মুন্সি বলেন, ‘‘প্রতিনিয়তই লক্ষ্য করি, একটা মেয়ে ধর্ষিতা হলে
সমাজের একাংশের আচরণে মনে হয়, যেন তারই দোষ! মেয়েটির কাছে শরীরের থেকেও মনের আঘাত বড় হয়ে ওঠে। মানসিক ভাবে সামলানো মুশকিল হয়।’’

নারী আন্দোলনের কর্মী গার্গী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এমন ঘটনায় মানসিক পীড়ন হয়। ভয়ে বা লজ্জায় মেয়েরা মুখ লুকিয়ে রাখলে চলবে না। সামনে এগিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। মেয়েরা তো সমাজেরই অঙ্গ। মেয়েদের সঙ্গে গোটা সমাজেরই প্রতিবাদে সরব হওয়া দরকার, যাতে ধর্ষক উপযুক্ত সাজা পায় এবং নারীর উপরে অত্যাচারের কথা না ভাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death rape Polba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy