Advertisement
E-Paper

আবাসে প্লাসের টাকা আসেনি, ঘর ভেঙে বিপাকে পড়েছেন ওঁরা

আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকা হাওড়ার বহু গরিব মানুষই নিজেদের পুরনো ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলেছেন বলে স্বীকার করেছে জেলা প্রশাসনের একটা বড় অংশ।

house.

আবাস প্লাসের বাড়ির আশায় কুঁড়ে ভেঙে ফেলেন বাগনানের রবীন পাণ্ডে। টাকা না-আসায় ফের টিন-ত্রিপলেই আস্তানা গড়েছেন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫৯
Share
Save

হাত কামড়াচ্ছেন রবীন পাণ্ডে। কেন ভাঙতে গেলেন নিজের ছিটেবেড়ার কুঁড়ে! প্রায় তিন মাস সপরিবার রান্নাঘরে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু এখনও আবাস প্লাসের টাকা এল না। উল্টে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এই ঝড়বৃষ্টির জন্য ফের টিন কিনে ঘরে ছাউনি দিতে হয়েছে। ত্রিপলে ঢাকতে হয়েছে ভাঙা দেওয়াল।

হাওড়ার বাগনান-২ ব্লকের আন্টিলা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ আন্টিলা গ্রামের বাসিন্দা রবীন। একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন। ডিসেম্বরে পঞ্চায়েত থেকে জানতে পারেন, আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে টাকা চলে আসবে। রবীনের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আমাকে ঘর ভেঙে ফেলতে বলা হয়। কারণ, প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ঘর করে ফেলতে হবে। আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও দিলাম। ওঁদের কথামতো তড়িঘড়ি ছিটেবেড়ার দেওয়াল ভেঙে দিই। চালের টালি খুলে ফেলি। কিন্তু টাকা এল কই? ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে সপ্তাহখানেক আগে টিন-ত্রিপল ঘরটাকে বাঁচাচ্ছি।’’

শুধু রবীন নন, আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকা হাওড়ার বহু গরিব মানুষই নিজেদের পুরনো ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলেছেন বলে স্বীকার করেছে জেলা প্রশাসনের একটা বড় অংশ। কেউ রান্নাঘরে দিন কাটাচ্ছেন, কেউ আত্মীয়-পড়শির বাড়িতে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা মানছেন, ‘‘অসহায় ওই মানুষগুলিকে আশ্বাস দেওয়ার মতো কিছুই আমাদের হাতে নেই।’’ আন্টিলা পঞ্চায়েতের যে সংসদের বাসিন্দা রবীন, তার পঞ্চায়েত সদস্য নির্মল হাজরা বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘরের কাজ শেষ না হলে ব্লক প্রশাসনকে জরিমানা করা হবে— এই সতর্কবার্তা পেয়ে আমরাই রবীনকে বলি ঘর ভেঙে নিতে। টাকা না-আসায় ওঁর মুখের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছি না।’’ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু রবীন নন, এই পঞ্চায়েতে বহু মানুষ আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়ে ঘর পাওয়ার আশায় পুরনো ঘর ভেঙে ফেলেছেন। বর্ষায় তাঁরা কী ভাবে থাকবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’

জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে উপভোক্তারা প্রথম কিস্তির টাকা না পাওয়ায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিঁধেছেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আবাস প্লাসের টাকা আটকেছে।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেনের দাবি, ‘‘বার বার দল পাঠিয়েও দুর্নীতি বার করতে পারেনি কেন্দ্র। তবু টাকা দিচ্ছে না। আসলে বিধানসভা ভোটে হারের কথা ভুলতে না পেরে বিজেপি রাজ্যের গরিবদের জব্দ করতে চাইছে।’’

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘গরিব মানুষ কাটমানি দিতে পারেননি বলে বাড়ির টাকা পাননি, না হলে দুর্নীতির জন্য টাকা আটকে গিয়েছে।’’ বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণ উদয় পাল চৌধুরী বলেন, ‘‘আগে পাওয়া আবাস যোজনার টাকার হিসাব রাজ্য দিলেই আবাস প্লাসের টাকা এসে যাবে। হিসাব না দিলে টাকা পাওয়া যাবে কী করে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pradhan Mantri Aawas Yojna Howrah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}