তালিকা যাচাইয়ের পরে আর কোনও সংশোধন বা তথ্যবদলও করতে পারবে না রাজ্য। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের চোদ্দো দফা বিধি মেনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকা সংশোধন করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। তাতে এখনও পর্যন্ত মূল তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ নাম। গত ১০ ডিসেম্বরের তালিকা অনুযায়ী, আবাস (প্লাস) প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকায় ছিল প্রায় ৪৫.৭২ লক্ষ নাম। শনিবারের রাজ্যভিত্তিক তালিকা অনুযায়ী, ‘যোগ্য’ উপভোক্তা হিসাবে ঠাঁই পেয়েছে প্রায় ৪০.২৭ লক্ষ উপভোক্তার নাম। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত নাম বাদ গিয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ। আর এই শেষ লগ্নে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, একটি জব কার্ডের যে কোনও এক জন উপভোক্তাকেই বাড়ি দেওয়া যাবে। তালিকা যাচাইয়ের পরে আর কোনও সংশোধন বা তথ্যবদলও করতে পারবে না রাজ্য। কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশ রাজ্য প্রশাসনের উপর নতুন করে চাপ বাড়াল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের অনেকে।
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রের কড়া বিধির ভিত্তিতেই জেলায় জেলায় এই তালিকা সংশোধনের কাজ করতে হয়েছে রাজ্যকে। তালিকা সংশোধন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা আপলোডও করতে হচ্ছে কেন্দ্রের নির্দিষ্ট ডেটাবেসে। ওই সূত্রের বক্তব্য, বেশিরভাগ জায়গায় কেন্দ্রের নিয়ম মেনে স্থানীয় স্তরে যাচাই হওয়া উপভোক্তাদের তালিকাকে পঞ্চায়েতগুলিতে গ্রাম সভা এবং পরে জেলাস্তরের অ্যাপেলেট কমিটি অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। তার পরেও কেন্দ্রের আবাস ডেটাবেসে রাজ্যের অনুমোদিত উপভোক্তা তালিকা আপলোডের সময়ে কেন্দ্রীয় বিধির বাইরে থাকা নাম (যদি কিছু থাকে বা যা থাকছে) ধরা পড়ছে। সেগুলিকে গ্রাহ্য করছে না কেন্দ্রের সফটওয়্যার। এক কর্তার কথায়, “এমন নামগুলিকে শুরুতেই বাদ দিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রের সফটওয়্যার।”
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, উপভোক্তা তালিকা যাচাই করার প্রশ্নে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হল, বাড়ির দাবিদারের জব কার্ডের (একশো দিনের প্রকল্পের) যথার্থতা খতিয়ে দেখা। তা করতে গিয়ে যাচাই-দলের সদস্যেরা দেখেছেন, কোনও পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম একটি জব কার্ডে আছে। নিয়ম অনুযায়ী, সব বিধি ঠিক থাকলে তাঁদের এক জনকেই শুধু উপভোক্তা হিসাবে গ্রাহ্য করা যাবে। অথচ সেই পরিবার ভেঙে যাওয়ায়, সেই কার্ডেই নাম থাকা অন্য কোনও সদস্যও হয়তো বাড়ির দাবিদার।
এ ক্ষেত্রে একটাই রাস্তা— সংশ্লিষ্ট কার্ড পুরোপুরি বাতিল করে নতুন করে তা তৈরি করা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সে কাজের সময়ও আর নেই।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে ‘কী কর্তব্য’ তার ব্যাখ্যা চেয়ে ১৩ এবং ১৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছিল রাজ্য। গত ২০ ডিসেম্বর গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরকে জানিয়েছে, ন্যায্য একটি জব কার্ডে নাম থাকা পরিবারের কোনও এক জন সদস্যই বাড়ি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সেই কার্ডে নাম থাকা অন্য কোনও ব্যক্তি উপভোক্তা তালিকায় থাকলে, সেই নাম বাদ দিতে হবে। সিদ্ধান্তটিকে কেন্দ্র কার্যকর করেছে ২২ ডিসেম্বর থেকে। রাজ্যের উদ্দেশে মন্ত্রকের বার্তা, যাচাই পর্বে এই ধরনের ‘ত্রুটি’ সংশোধন করতে হবে। রাজ্যকে এ-ও জানানো হয়েছে, যাচাইয়ের পরে প্রকল্পের ডেটাবেসে (আবাস প্লাস ডেটাবেস) কোনও সংশোধন বা তথ্য বদল করা যাবে না। এক কর্তার কথায়, “তাই সেই সংশোধনের কাজ দ্রুত করতেই হবে। না-হলে কেন্দ্রের অনুমোদন মিলবে না। কিন্তু জব কার্ড সংশোধন করার কাজ সহজ নয়।”
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের এই অবস্থানের ভাল দিকটি হল, যাচাই প্রক্রিয়ায় যোগ্য কোনও উপভোক্তা বাদ পড়লেও, এই পদ্ধতিতে তা ধরা পড়বে। সেটা খুবই কার্যকর। কিন্তু পরিবার ভেঙে গেলে জব কার্ডে নাম থাকা দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি প্রকৃত দাবিদার হলেও, তাঁর বাদ পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy