ফাইল ছবি
আপত্তি উঠছিল গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনার জল্পনা পর্বেই। এবং সেই আপত্তি যে নিছক কথার কথা নয়, সোমবার, গরমের ছুটি শুরুর প্রথম দিনে বেশ কিছু স্কুল খোলা থাকায় তার প্রমাণ মিলল। সরকারি নির্দেশিকা না-মেনে স্কুল খুলে রাখার কারণ কী, এই প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট স্কুল-কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিভাবকদের চাপ ছিল। এ দিন কিছু স্কুলে পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। আবার সুদীর্ঘ ছুটির প্রতিবাদ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে।
যাঁরা স্কুল খুলে রাখলেন এবং পরীক্ষা নিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি? এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকে ফোন এবং মেসেজ করা হয়েছিল বার বার। কিন্তু তাঁর উত্তর আসেনি। এই পুরো বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জানাব।’’
তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ২ মে থেকে গরমের ছুটি পড়বে। সেই অনুযায়ী সরকারি নির্দেশিকা বেরোয়। প্রথমে গ্রীষ্মের ছুটি ছিল ১২ দিনের। তা বাড়িয়ে ৪৫ দিন করায় আপত্তি তোলেন অভিভাবক ও শিক্ষক শিবিরের বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, করোনাকালে পড়াশোনার বিস্তর ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ফের এত দিনের টানা ছুটিতে পাঠ্যক্রম শেষ করা যাবে না। এই দীর্ঘ ছুটির প্রতিবাদ করে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ২৮ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিবকে বিষয়টি দ্রুত পুনর্বিবেচনার দাবি জানায়। সরকার সাড়া না-দেওয়ায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা এ দিন হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন।
ছুটি-বিতর্কের মধ্যে এ দিন নৈহাটির নরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন, কাত্যায়নী উচ্চ বিদ্যালয় ও গৌরীপুর হিন্দি হাইস্কুলে পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে বলে খবর। কাত্যায়নী স্কুলের এক ছাত্রীর অভিভাবক সীমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অমান্য করার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে, দু’বছর ধরে স্কুলে এসে পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত পড়ুয়ারা। এ দিন শেষ পরীক্ষা ছিল। পরিবেশও অনুকূল। পড়ুয়াদের যদি অসুবিধা না-হয়, তা হলে এত বিতর্ক কেন?’’ স্কুল-কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিভাবকদের অনুরোধেই এ দিন স্কুল খুলে রাখা হয়েছিল। নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল সনৎ দে বলেন, ‘‘স্কুল খোলা হয়েছে অভিভাবকদের মতামত নিয়েই। পড়ুয়াদের অনেকেই এ দিন স্কুলের পোশাকে যায়নি বলে শুনেছি।’’
নৈহাটির নরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন সূত্রের খবর, ১৭০০ পড়ুয়ার মধ্যে ১১০০ জনের অভিভাবক স্কুল খোলা রেখে প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষের দাবি, পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের চাপে পড়েই।
গরমের ছুটির আগে শুরু হওয়া ‘ফার্স্ট সামেটিভ’ বা প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন শেষ করতে এ দিন পরীক্ষা নিয়েছেন তমলুকের রত্নালী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষও। প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘নির্দেশ মেনে আমরা এ দিন থেকে স্কুল ছুটি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রীরা ও অভিভাবকেরা অনুরোধ করেন। তাই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’’ দশম শ্রেণির সিদ্দিকা খাতুন বলল, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা সোমবার থেকে ছুটি দিতে চেয়েছিলেন। আমরাই বলেছিলাম, আর এক দিন হলেই পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে।’’
সরকারি নির্দেশ উড়িয়ে এ দিন পরীক্ষা নেওয়া হয় হুগলির আরামবাগের চাঁদুর হাইস্কুল এবং তারকেশ্বরের বালিগড়ি অধরমণি দত্ত বিদ্যামন্দিরেও। ওই দুই স্কুল জানায়, মাত্র একটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। তাই অভিভাবকদের অনুরোধে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। দুই স্কুল-কর্তৃপক্ষের কাছেই ‘শো-কজ়’ বা কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুর। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গোপাল রায় বলেন, “স্কুল খোলা ঠিক হয়নি। জেলা স্কুল (মাধ্যমিক) পরিদর্শকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থাও নিচ্ছেন।”
স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস বা গরমের ছুটি এগিয়ে আনার পরামর্শ পুনর্বিবেচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)। সংগঠনের সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত জানান, ছুটি বা অনলাইনের ক্লাসের পরামর্শ না-দিয়ে ক্লাস চালানো হোক ক্যাম্পাসেই।
বেসরকারি স্কুলেও ২ মে থেকে ছুটি দেওয়া যায় কি না, তা জানাতে বলা হয়েছিল শিক্ষা দফতরকে। তবে কলকাতার বেসরকারি স্কুলগুলি নিজস্ব নিয়মেই চলছে। অনেক বেসরকারি স্কুলই এ দিন খোলা ছিল এবং স্বাভাবিক পড়াশোনা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy