পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক বা বিধানসভা, ‘বিদেশি’দের প্রার্থিপদ নিয়ে বার বার বিতর্ক হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক টানাপড়েনও চলেছে। ভবিষ্যতে বিদেশিরা যাতে কোনও ভাবেই ভোটে প্রার্থী হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে মামলা হল কলকাতা হাই কোর্টে। উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে বিদেশ মন্ত্রক, জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে।
মামলাকারীর নাম মানিক ফকির। পিটিশনে তাঁর বক্তব্য, ভুয়ো ভোটার কার্ড বানিয়েই পশ্চিমবঙ্গে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন ‘বিদেশি’ নাগরিকেরা। কেন বার বার বাংলার ভোটে বিদেশি নাগরিকদের নির্বাচনে লড়াই করার সুযোগ দেওয়া হয়? মামলাকারীর আবেদন, আগামী বছর রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক এবং কমিশন নিশ্চিত করুক, বিদেশি নাগরিকরা যাতে ভোটে লড়াই করতে না পারেন।
নিজের বক্তব্যের সপক্ষে বেশ কয়েকটি উদাহরণও দিয়েছেন মামলাকারী। তাঁর বক্তব্য, গত পঞ্চায়েত ভোটে অন্য দেশের কয়েক জন ভোটার প্রার্থী হয়েছিলেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনায়। তাঁদেরই এক জন লাভলি খাতুন। ২০২৩ সালের ভোটে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েছিলেন। জিতে প্রধানও হন। পরে মনোনয়নপত্রে বাবার নাম নিয়ে বিতর্ক হয়। মামলাকারীর দাবি, হাই কোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার পর জানা যায়, লাভলি খাতুন এ দেশের নাগরিকই নন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁর নাম নাসিয়া শেখ। ২০১৫ সালের পর ভারতে প্রবেশ করে ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরি করেন। ২০১৮ সালে তাঁকে ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র দেওয়া হয়।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আলোরানি সরকারকে নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। জনস্বার্থ মামলায় সেটির কথাও উল্লেখ করেছেন মানিক। আলোরানি ভোটে হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির স্বপন মজুমদারের কাছে। তার পরেই হাই কোর্টে একটি ইলেকশন পিটিশন দায়ের হয়েছিল। ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়েছিল তাতে। সেই মামলাতেই জানা যায়, বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় আলোরানির নাম রয়েছে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে গুসকরা বিধানসভার অন্তর্গত একটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন দুলাল শীল নামে এক ব্যক্তি। পরে তাঁর স্ত্রী স্বপ্না শীলের বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিকদের আইনে মামলা দায়ের হয়। বেআইনি ভাবে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢোকার অভিযোগ ওঠে দুলালের বিরুদ্ধেও। দুলালের গুসকরা স্টেশনে একটি সেলুনের দোকান ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেআইনি ভাবে তিনি ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন। ওই মামলাতেও হাই কোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দুলালের যাবতীয় নথি যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিল।
কলকাতা হাই কোর্টে মানিকের মামলা গৃহীত হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির সম্ভাবনা।