ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, ঝাড়গ্রামে আগেই ‘শতরান’ সেরে ফেলেছিল পেট্রল। সোমবার ফের ওই জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জেরে তা ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকাল মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমানের মতো আরও বেশ কয়েকটি জেলাতেও।
করোনা-কালে কাহিল সাধারণ মানুষের অভিযোগ, একে অতিমারি আর রোজগারে টানে রক্ষা নেই। সঙ্গে দোসর জ্বালানির এই আগুন দাম। সর্বত্র প্রশ্ন, ‘সংসার চালাব কী ভাবে?’
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার আর বাড়ছে না পেট্রল কিংবা ডিজেলের দর। কিন্তু তাতেও খাস কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে তা লিটারে ১০০ টাকা থেকে মাত্র ১৬ পয়সা দূরে। ৯২ টাকা পেরিয়েছে ডিজেলও (কয়েকটি রাজ্যে তা-ও ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে)। জেলায় বাড়তি পরিবহণ খরচের দরুন দুই জ্বালানিরই দাম আরও বেশি। তার উপরে রয়েছে রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া দামের কামড়। ১৪.২ কিলোগ্রামের ভর্তুকির সিলিন্ডার কিনতে গুনতে হচ্ছে ৯০০ টাকার কাছাকাছি (৮৬১ টাকা মূল দামের সঙ্গে অনেক জায়গাতেই ডেলিভারি বয়কে দিতে হওয়া বাড়তি অর্থ যোগ করে)। ভর্তুকি নামমাত্র। সব মিলিয়ে, নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিরোধীরা। জ্বালানির চাহিদা কমার আশঙ্কায় কাঁটা ডিলারদের একাংশও প্রতিবাদে শামিল। কিন্তু তা বলে জ্বালানিতে কর কমিয়ে সুরাহা দেওয়ার ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে নেই।
সোমবার পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান, কালনা, কাটোয়া ও মেমারিতে পেট্রল ১০০ টাকা পেরিয়েছে। বর্ধমান শহরে আওসির পাম্পে তা বিক্রি হয়ছে লিটারে ১০০.১৬ টাকায়। গাড়ি-মোটরবাইক চালকদের পাশাপাশি পাম্প মালিকরাও এতে ক্ষুব্ধ। বর্ধমানে তাঁদের সংগঠনের সম্পাদক অভিজিৎ হাজরার দাবি, ‘‘পেট্রল বিক্রি কমেছে ৩০%।’’ বাঁকুড়া শহরেও এ দিন পেট্রল ছিল ১০০ টাকার উপরে। বিষ্ণুপুর, খাতড়াতেও একই ছবি। বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, ‘‘পরিবহণ খরচ বাড়লে জিনিসের দাম বাড়বে। কেন্দ্রের এই নীতির বিরোধিতা করছি।’’ এ দিন মেদিনীপুরে ‘সেঞ্চুরি’ পেয়েছে পেট্রল! গড়বেতা, কাঁথির পাশাপাশি পেট্রল একশো পেরিয়েছে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে।
২ মে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটপর্ব মেটার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত দেশে মোট ৩৫ দিন বেড়েছে পেট্রলের দর। গত বছরের ৭ জুন থেকে এ দিন পর্যন্ত কলকাতায় লিটার পিছু পেট্রল ও ডিজেল বেড়েছে যথাক্রমে ২৬.৫৪ এবং ২৬.৬৫ টাকা।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলে যখন আর্থিক কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার দিন গুনছে, তখন জ্বালানির দরের এই দৌড়ে বিপর্যস্ত আমজনতা। অতিমারির এই দুঃসময়ে কারও করোনার চিকিৎসায় বিপুল টাকা খরচ হয়েছে। কোনও পরিবার একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তিটিকে হারিয়ে চরম অসহায়তায় ডুবে। বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে গত এক-দেড় বছরে চাকরি হারানো কিংবা বেতন কমে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। অথচ চড়া পরিবহণ জ্বালানি যাতায়াতের খরচ তো বাড়াচ্ছেই, সেই সঙ্গে আগুন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। এ নিয়ে সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অর্থনীতিবিদদের অনেকে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, করোনা-কালে চিকিৎসা আর অত্যাবশ্যক পণ্য-পরিষেবার পিছনেই মানুষের এত খরচ হয়ে যাচ্ছে যে, আটকে যাচ্ছে অন্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পথ। এর ধাক্কা অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy