কোভিড আতঙ্কের মধ্যেও ময়দানে বর্ষশেষের মাস্কহীন আমোদ-আহ্লাদ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় তার ভয়াবহ বিশ্ব-রূপের যতটুকু দেখা গিয়েছে, তাতেই ধরিত্রী কম্পমান। তৃতীয় পর্বে অতিমারির প্রতাপ আরও বাড়বে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। এতটাই যে, নতুন বছরের সংক্রমণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউকেও ছাপিয়ে যেতে পারে! দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ৩০ থেকে ৩৫ হাজারে!
শেষ দু’দিনে সংক্রমণ যে-হারে বেড়েছে, তার ভিত্তিতেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, আগামী সপ্তাহেই অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথমেই বঙ্গে অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। স্বাস্থ্য শিবিরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোভিড বিধি না-মেনে জমায়েত এবং এক শ্রেণির মানুষের বেলাগাম উচ্ছ্বাসের ফলেই পরিস্থিতি এতটা সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। নতুন যে-ঢেউ উঠেছে, তাতে সংক্রমণ এখন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সেই রেখাচিত্র নিম্নমুখী হতে হতে আবার হয়তো সেই মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’’
এ দিনই কলকাতার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের মোট ১২ জন চিকিৎসক একসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আগামী দিনের ভয়াবহতা আঁচ করে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সব জেলা ও শহরের হাসপাতালকে জানানো হয়েছে, ‘প্রস্তুতির সময় শেষ। এ বার ঝাঁপিয়ে পড়ার পালা।’
এর মধ্যে কলকাতায় আরও পাঁচ ওমিক্রন-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তাঁদের সকলেই সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরে ছ’জন যাত্রীর আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল। তাঁদের জিনোম সিকোয়েন্সের রিপোর্ট এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পৌঁছেছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, ওই পাঁচ জনের মধ্যে ৪৪ বছরের এক যুবক ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে এবং পাঁচ বছরের এক বালিকা ওই হাসপাতালের মুকুন্দপুর কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন। উপসর্গহীন ওই দু’জনকেই আলাদা কেবিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এই নিয়ে রাজ্যে ওমিক্রন-আক্রান্তের সংখ্যা হল ১৬। চিকিৎসাধীন ১৫ জন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০২০ সালে অতিমারির প্রথম ঢেউয়ের সময় সংক্রমণের হার শিখরে পৌঁছেছিল ২২ অক্টোবর। প্রথম ঢেউয়ে বাংলায় এক দিনে সর্বাধিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪১৫৭। দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোজকার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রথম ঢেউয়ে দৈনিক আক্রান্তের পাঁচ গুণ। ১৪ মে আক্রান্তের সংখ্যা শিখরে পৌঁছয়। সংখ্যাটা ছিল ২০,৮৪৬। করোনার নতুন অবতার ওমিক্রনের পরাক্রমে সেই পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটাই স্বাস্থ্যকর্তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের মতে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকে অনেক দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক ৩০ হাজার পার করার সম্ভবনাই সব থেকে বেশি। প্রশাসনের অন্দরের পর্যবেক্ষণ, গত কয়েক দিনে বিশেষত কলকাতায় দৈনিক সংক্রমণ দ্বিগুণ। জনগোষ্ঠীতে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোরও কিছু প্রমাণ মিলেছে। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তা, সংক্রামক বিশেষজ্ঞেরা।
স্বাস্থ্য শিবিরের বক্তব্য, ডেল্টার থেকে পাঁচ গুণ বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের। তাতেই আগামী এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ ঘিরে পুনরায় মারাত্মক সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, হাসপাতালের সুপারদের সতর্ক করে দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১২৮ জন। যা বুধবারের (১০৮৯) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ভাবেই তৃতীয় তরঙ্গে দৈনিক সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকবে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। এ দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। করোনার নতুন দাপটের মোকাবিলা কী ভাবে করা যেতে পারে, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
করোনা পরীক্ষায় আরও জোর দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। বেসরকারি ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাড়লেও সরকারি ক্ষেত্রে পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর। সব জেলাকে জানানো হয়েছে, আচমকাই সংক্রমণ কত দ্রুত হারে বাড়ছে, বেসরকারি ক্ষেত্রে পরীক্ষা এবং পজ়িটিভিটি রেট দেখে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এখন যে-হারে আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে, তা দ্বিগুণ বা তিন গুণ করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সব সরকারি হাসপাতালকে। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, করোনা পরীক্ষা এবং তাতে পাওয়া পজ়িটিভিটি রেটের রেখচিত্র দেখে কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন জেলা এবং উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, বীরভূমের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘পরীক্ষা বাড়ালেই আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব। যাতে কেউ পরীক্ষার আওতা থেকে বাদ না-যান, সে-দিকেও কড়া নজর রাখতে বলা হচ্ছে।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ওমিক্রন আক্রান্তের ৮০ শতাংশই উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত। কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোর হার অত্যধিক বলেই উদ্বেগের। ১০ দিনে যদি এক লক্ষ আক্রান্ত হন আর তার এক শতাংশও যদি মারা যান, মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy