যশোর রোডের পথ-নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে স্থানীয় বাসিন্দারা।
এক মাসের মধ্যে এক কিশোর-সহ ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে যশোর রোডের ১ নম্বর গেট বাস স্টপ থেকে দোলতলার মধ্যে। খুব অল্প দূরত্বের মধ্যে এই ছ’টি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় পুরসভাগুলিও। সেখানে যানবাহন চলাচলের রাস্তার পরিসরে প্রয়োজনীয় বদল আনা যায় কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করছেন, তেমন হলে ওই জায়গায় রাস্তা পারাপারের জন্য সাবওয়ে তৈরি করার কথাও ভাবুক প্রশাসন। ইতিমধ্যে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি আবাসনের বাসিন্দারা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে সাবওয়ে তৈরির জন্য আবেদনও করেছেন।
তবে পুলিশ এবং পুর প্রশাসন— দু’তরফই দাবি করেছে, সাধারণ পথচারী, বাইকচালক-সহ গাড়িচালকদেরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার আড়াই নম্বর গেটের কাছে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বাইকচালকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুভঙ্কর মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তি তাঁর ভাগ্নে প্রণয় মণ্ডল (১৫)-কে নিয়ে বাগুইআটি এলাকা থেকে কাঁচরাপাড়া যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাইকটি তাঁর নিজের নয়। এমনকি, বাইকের পিছনে ওই কিশোর একটি ব্যাগ নিয়ে বাইকের এক দিক ঘেঁষে বসেছিল বলেও দাবি পুলিশের। এক তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, বাইকটি একেবারে বাসের বাঁ দিক ঘেঁষে পিছন পিছন আসছিল। সামনে একটি অটো চলে আসায় আচমকা ব্রেক কষলে বাইক থেকে ছিটকে, বাসের চাকার নীচে গিয়ে পড়ে পিষ্ট হয় ওই কিশোর। এ ক্ষেত্রে বাইকের পিছনে যখন একটি বাচ্চা বসে রয়েছে, তখন চালকের আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল।’’ ওই কিশোরের পরিবারও জানিয়েছে, কিশোরের মামার গাড়ি তাঁর চালক নিয়ে গিয়েছিল। তাই গাড়িচালকের বাইকে চাপিয়ে ভাগ্নেকে নিয়ে কাঁচরাপাড়া যাচ্ছিলেন মামা। তবে তাঁর নিজেরও বাইক রয়েছে বলে কিশোরের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে।
যশোর রোডের ওই অংশের এক দিকে রয়েছে দমদম ও অন্য দিকে উত্তর দমদম পুরসভা। দুই পুরসভার তরফেই যশোর রোডে পর পর দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট বলেন, ‘‘কী ভাবে পথ-নিরাপত্তার বিধি কঠিন ভাবে বলবৎ করা যেতে পারে, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আমরা দ্রুত বৈঠক করব। তবে যানচালকদের সঙ্গে পথচারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। বাইকচালককে হেলমেট পরতে হবে। এক নম্বর গেটের কাছে প্রতিদিন মাইকে এ সব নিয়ে ঘোষণা চলে।’’ উত্তর দমদম
পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস জানান, তাঁরাও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছেন। উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে এক পরিবারের যে তিন জনের মৃত্যু হয়, তাঁরাও উত্তর দমদম পুরসভার আদি বাসিন্দা। ওই ঘটনাতেও স্থানীয় মহলে যথেষ্ট শোরগোল পড়েছিল।
যশোর রোড, এমনকি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের অভিযোগ বুধবারও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই সঙ্গে আড়াই নম্বর গেট থেকে দোলতলার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সার্ভিস রোড পেরিয়ে পথচারীদের বাস ধরতে যাওয়া, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর মতো বিষয়গুলিও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে বলে মনে করেছেন তাঁরা। গত রবিবার রাতে লরির ধাক্কায় দুই পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা অনেকাংশে সেই কারণেই বলে মনে করা হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)