আবর্জনা: পুণ্যার্থীদের ফেলা প্লাস্টিকের বাটি-গ্লাসে ভরেছে রাস্তা। নাগেরবাজারের কাছে যশোর রোডে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল কয়েক হাত অন্তর। গাড়িতে যশোর রোডের ন’কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লেগেছিল দু’ঘণ্টা। আর অশেষ ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টা পরেই এল কচুয়ার আশ্রমে পদপিষ্ট হওয়ার খবর।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেরার পথে চোখে পড়েছিল, যশোর রোড ধরে হাজার হাজার গাড়ি-মোটরবাইক চলেছে কচুয়ার দিকে। পায়ে হেঁটে, কাঁধে বাঁক নিয়েও চলেছেন অনেকে। ছোট ছোট মালবাহী গাড়িগুলির পিছনে অন্তত ১৫-২০ জন করে তরুণ-তরুণী দাঁড়িয়ে। যুবকদের অধিকাংশের গায়ে জামার বালাই নেই। চোখে সানগ্লাস। কোমরে পেঁচানো গামছা। মাথায় লাল ফেট্টি।
গাড়ির পিছনে রাখা চার-পাঁচটি পেল্লায় ডিজে বক্স তখন বাজছে তারস্বরে। উগ্র গানের তালে তালে গাড়ির উপরে চলছে নাচ। এক হাতে দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে শরীর দুলিয়ে চলেছেন ভক্তেরা। সেই গানের সুরে-তালে কিন্তু ভক্তিরস খুঁজলে মুশকিল। ভিড় ও যানজটের কারণে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লে লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন কেউ কেউ। এ বার নাচ শুরু রাস্তাতেই। দু’তিন মিনিট নেচে নিয়ে ফের উঠে পড়ছেন গাড়িতে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়ির ডিজে বক্সের গুম গুম শব্দে আমাদের ছোট গাড়িটি তখন রীতিমতো কাঁপছে।
এমনকি এ-ও দেখলাম, অপরিচিত পুণ্যার্থীদের মধ্যে দিব্যি কুশল বিনিময় চলছে। কেউ অন্য গাড়ির ভক্তকে গাঁজার কল্কে এগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ আবার অন্যের মদের বোতলে জল মিশিয়ে দিচ্ছেন। রাস্তা জুড়ে ভক্তদের তাণ্ডব-নৃত্য উপভোগ করছেন বাকিরা। গাড়ির জানলার বাইরে অর্ধেক বেরিয়ে রয়েছে কারও কারও শরীর। সেই অবস্থাতেও চলছে নাচ। ফুর্তি ঠেকায় কে!
কচুয়াগামী বাইকওয়ালাদের কারও মাথাতেই হেলমেট চোখে পড়েনি। অনেক বাইকের পিছনেই বসে তিন-চার জন তরুণ-তরুণী। হেলমেটের বালাই নেই। হঠাৎ আমাদের গাড়ির সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন দুই তরুণ ভক্ত। ফুঁসে উঠলেন— ‘‘দেখে চালাতে পারিস না!’’
পুণ্যার্থীদের জন্য রাস্তার ধারে একশো ফুট অন্তর অন্তরই রয়েছে চটির ব্যবস্থা। সেখানে প্লাস্টিকের গ্লাস-বাটিতে পুণ্যার্থীদের হাতে ধরানো হচ্ছে জল-শরবত-খিচুড়ি-চকলেট। গাড়ির জানলা গলে এক বাটি খিচুড়ি চলে এল আমাদের হাতেও! দেখলাম, সেই প্লাস্টিকের গ্লাস-বাটিই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে গোটা পথ জুড়ে। ভাবনা হল, ভোরের দিকে গানের গুঁতো বন্ধের সম্ভাবনা থাকলেও এই প্লাস্টিক সরবে কি? শুক্রবার অবশ্য দেখলাম, রাস্তা অনেকটাই সাফ করা হয়েছে।
পুণ্যযাত্রার এমনই রকমসকম দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল, বড় রাস্তার ধারে যাঁদের বাড়ি, রাতভর তাঁরা এই শব্দ-তাণ্ডব সহ্য করবেন কী ভাবে? বারাসতে যশোর রোডের পাশে রয়েছে নার্সিংহোম। সামনেই জেলা হাসপাতাল। বর্ষার এই রাতে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে পৌঁছবেন কী করে! আমার বাড়িতেও তো বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। সকলে ঠিক আছেন তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy