থিকথিকে: পুজোর বাকি আর মাত্র দু’সপ্তাহ। রবিবার কেনাকাটার হিড়িকে পা ফেলার জায়গা নেই নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রোগ ছড়ানোর প্রশ্নে কোভিডের যে মিউটেশনের কার্যক্ষমতা বেশি, তা সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু উৎসবের ভিড়ে ‘অসচেতন’ জনতা তা শুনলে তো! যার প্রেক্ষিতে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কোভিড চিকিৎসার শয্যা-সংখ্যা।
ছবিটা কেমন, তা বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের কর্ণধারদের বক্তব্যেই স্পষ্ট। পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা জানান, শুক্রবার দিনের শেষে ২২টি বেড খালি ছিল। কিন্তু রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৬টার মধ্যে সব বেডে কোভিড রোগী। পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্রের কথায়, ‘‘জুলাই-অগস্টে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনায় যখন রোজ গড়ে ৬৫০-৭০০ কেস পাওয়া যাচ্ছিল, তখনও পরিস্থিতি এমন ছিল না!’’
শহরের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের গ্রুপ সিইও রূপক বড়ুয়ার বক্তব্য, ‘‘পরিচিতদেরই শয্যা দিতে পারছি না।’’ আর এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তার কথায়, ‘‘শয্যা বাড়ানোরও জায়গা নেই।’’ পুজো প্রস্তুতিতে নেমে মানুষ ভাইরাসের মোকাবিলায় নিজেদের রক্ষণ (মাস্কহীন মুখ, শিকেয় পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি) আলগা করে চলেছেন। তাতেই কার্যত শরশয্যায় বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্র।
রক্ষণহীন মুখ, সুঅভ্যাস বর্জনের বিপদ নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরাও। তাঁদের বক্তব্য, উৎসবকে ঘিরে অসচেতনতার ভিড় সংক্রমণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেই সহায়ক হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সের অধিকর্তা তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের প্রফেসর সৌমিত্র দাস জানান, গত জুনে ভাইরাসের যে মিউটেশন (ডি৬১৪জি) সক্রিয় ছিল তা এখনও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভাইরাসের মিউটেশন অনেক বেশি করে রোগ ছড়াতে পারে। ভাইরাসকে আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই এমন কোনও ইঙ্গিত কিন্তু মেলেনি। তাই কোনও অবস্থাতেই ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।’’
আরও পড়ুন: ‘যা হওয়ার হবে, পুজোর আগে আর এ নিয়ে ভাবব না’
আজ, সোমবার শয্যা-সঙ্কটের মোকাবিলায় বৈঠক ডেকেছে স্বাস্থ্য কমিশন। সারা রাজ্যে ৯২টি সরকারি কোভিড হাসপাতালে মোট ১২,৭১৫টি শয্যা রয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে ৬৫টি হাসপাতাল মিলিয়ে রয়েছে ২৮০৭টি বেড। সরকারি স্তরে ১২,৭১৫টি বেডের মধ্যে শুধু কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলিতে রয়েছে ৬৯০০টি শয্যা। বস্তুত, বঙ্গে প্রতিদিনের করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৬০ শতাংশ করোনা রোগীই কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলির বাসিন্দা। মৃত্যুর ক্ষেত্রে সেই পরিসংখ্যান হল গড়ে ৬৫ শতাংশেরও বেশি। বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের শীর্ষ প্রতিনিধিদের দাবি, ৬৫টি হাসপাতালের মধ্যে মূলত ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংলগ্ন হাসপাতালগুলিতে শয্যার কী অবস্থা সেটিই আসল। আমরি মুকুন্দপুর-ঢাকুরিয়া, মেডিকা, আর এন টেগোর, ফর্টিস, পিয়ারলেস, বেলভিউ ক্লিনিক, রুবি জেনারেল, সিএমআরআই মিলিয়ে মোট ৯৪২টি শয্যা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ৯৪২টি বেডের মধ্যে খালি ছিল ২২টি বেড। রবিবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪! গত দশ দিনে বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মোট ৫৯টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে। আরও কিছু শয্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সংক্রমণের পায়ে বেড়ি না পরালে তাতেও কতখানি সুরাহা হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৬৫টি হাসপাতাল মিলিয়ে এখনও দিনের শেষে প্রতিদিন গড়ে ছশোর বেশি শয্যা খালি রয়েছে। সরকারি ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা হল গড়ে চার হাজারের কিছু বেশি শয্যা। কিন্তু সংখ্যাতত্ত্বের পিছনের ছবিটাই কঠিন বাস্তব। চিকিৎসকদের মতে, সরকারি হাসপাতালের তালিকায় এমন অনেক হাসপাতাল রয়েছে যেখানে গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যেমন রবিবার স্বাস্থ্য দফতরের নথিতে ১৭৪টি বেড খালি দেখানো হয়েছে। ১৭৪টি শয্যার মধ্যে স্ত্রীরোগ, শিশু বিভাগও রয়েছে। মেডিক্যালের এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘স্ত্রী-রোগ, শিশু বিভাগে তো সব ধরনের রোগীকে ভর্তি করা যাবে না!’’
উদ্বেগের আরও দিক রয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, উৎসবের দিনগুলি অক্সিজেন, ওষুধ সরবরাহের গাড়ি যাতে শহরে ঢুকতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনিক আশ্বাস প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, উৎসবের মধ্যেও মানুষ যাতে সাবধানতা অবলম্বন করেন সে বিষয়ে সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, পুজো মণ্ডপ, বাজারে যথাযথ ভাবে মাস্কের ব্যবহার, পারস্পরিক দূরত্ববিধি মেনে চলা নিয়ে প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে। শয্যা সঙ্কট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের শয্যা কী ভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy