সব থেকে বড় হয়ে উঠল নিরাপত্তার দাবি। শনিবার মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে পরিদর্শনে যাওয়া জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যদের কাছে স্থানীয় মহিলাদের একাংশ দাবি করলেন, “আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না, চাই নিরাপত্তা।” এলাকায় বিএসএফের স্থায়ী শিবির করার দাবিও উঠেছে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র কোনও মন্তব্য করেননি। তবে এ দিনই এলাকা ঘুরে দেখে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বিকেলে বহরমপুরে বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেক দাবি আছে। প্রথম দাবি হচ্ছে বিচার, দ্বিতীয় দাবি শান্তির, তৃতীয় দাবি, স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্পের। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করবেন।” এর মধ্যেই যেখানে গোলমাল হয়েছে, সে সব এলাকায় তদন্তও চলেছে।
এ দিন সকালে প্রথমে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরা, পরে রাজ্যপাল এবং বিকেলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার-সহ দক্ষিণ মালদহের সাংসদ ইশা খান শমসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকা পরিদর্শনে আসেন। যান মালদহের ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীও।
শমসেরগঞ্জের বাসিন্দা রিমা দাস সকালে মহিলা কমিশনের সদস্যদের বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে মহিলাদের উন্নয়নের দাবি করেন। অথচ, শমসেরগঞ্জে দু’জনকে নৃশংস ভাবে খুন করার খবর পেয়েও পুলিশ আসেনি। আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না, চাই নিরাপত্তা।” শিপ্রা দাস বলেন, “আমাদের সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। তবু আমাদের ঘরবাড়ি লুট হল। এনআইএকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে হবে।” কমিশনের সদস্যেরা মন্তব্য করতে চাননি।
জাফরাবাদে যে বৃদ্ধ ও তাঁর পুত্রকে খুন করা হয়েছিল, রাজ্যপাল এ দিন তাঁদের বাড়ি গেলে মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী রাজ্যপালের পায়ে আছড়ে পড়েন পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে। তাঁর কথায়, “বাড়িতে তিন নাবালক ছেলেমেয়ে ও বৌমাকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি।” বাড়ির লোকেরা রাজ্যপালকে জানান, নিহত দু’জনের দেহ চার ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার পরে পুলিশ এসেছিল। তাই গ্রামে বিএসএফের স্থায়ী ক্যাম্প বসানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এনআইএ তদন্তের দাবিও ফের তোলা হয়।
তাঁদের ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে রাজ্যপাল রওনা হন বহরমপুরের উদ্দেশে।
রাজ্যপালের গাড়ি গ্রাম ছাড়তেই কনভয়ে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের একাধিক গাড়ি অবরোধ করেন লাগোয়া ঘোষপাড়া ও বেতবোনা পল্লির কয়েকশো বাসিন্দা। অবরোধ-বিক্ষোভ হয়। রাজ্যপাল গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে প্রথমে যান ঘোষপাড়ায়। পরে বেতবোনায়। রাজ্যপালের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মহিলারা। অভিযোগ, তাঁদের উপরে অত্যাচার হয়েছে, বাড়িঘর লুট হয়েছে। এক পুরকর্তার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগও ওঠে। রাজ্যপাল বলেন, “দিল্লিতে গিয়ে সমস্ত ঘটনা জানাব কেন্দ্রীয় সরকারকে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।”
বহরমপুরে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থা রয়েছে। তিনি কী দেখলেন? রাজ্যপাল বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ মোতায়েনের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু মানুষের অনুভূতি, তাঁরা খুব ভুগছেন।” এনআইএ তদন্তের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।” তাঁর সংযোজন, “খুব শীঘ্রই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় সরকার এবং সমস্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানুষের মতামত জানাব।”
বিকেলে জাফরাবাদে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে একদল কংগ্রেস প্রতিনিধি। সঙ্গে এলাকার কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরীও। প্রথমে বাধা পেলেও, পরে তাঁরা নিহত পিতা-পুত্রের পাশের বাড়ির বারান্দায় বসে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ওই বাড়িতে যান ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীও। পরে তিনি বলেন, “সন্ত্রাস চালানো হয়েছে।” জঙ্গিপুরের তৃণমূলের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।” তৃণমূল এ দিন বিকেলে ধুলিয়ান শহরে শান্তি মিছিল করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শমসেরগঞ্জের গুলিবিদ্ধ এক যুবককে এ দিন সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালেভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর বাড়ি ধুলিয়ান বাজারপাড়ায়। গত ১২ এপ্রিল তাঁর পায়ে গুলি লেগেছিল। দাবি, স্থানীয় স্তরে চিকিৎসার পরে বাড়িতে ছিলেন। পায়ে যন্ত্রণা অনুভব করায় তাঁকে পরিবারের লোকজন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে এনে ভর্তি করেছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপার অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, “অস্ত্রোপচার করে ওই যুবকের পা থেকে গুলি বার করা হবে। এর আগে, আরও তিন গুলিবিদ্ধ এখানে ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা এখনও মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)