—প্রতীকী ছবি।
দশ বছর আগের এমনই মেঘলা-বৃষ্টির সকাল। মেছো ঘেরি, পাঁচিল ঘেরা পরিত্যক্ত কারখানার পিছনে সবুজ খেতে জল জমেছিল। সেই জল-কাদায় শুয়ে ছিল সদ্য কৈশোর পেরোন প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। প্রায় নগ্ন। মুখের ভিতরে ঢুকে আছে সাদা কী যেন! মাছ ভেবে মুখ থেকে টেনে বের করতেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন টুম্পা কয়ালের মা সুমিতা: ‘‘মেয়ের মাসিকের কাপড়টাই ওরা মুখে গুঁজে দিয়েছে!’’
কামদুনি। কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বৃষ্টি মাথায় বাড়ি ফিরছিল মেয়ে। পরীক্ষা শুরুর দু’দিন আগেই ডায়েরির পাতায় লিখেছিল, ‘টার্গেট এক, ভাল পরীক্ষা মানে সরকারি চাকরি। দুই, ভাইয়ের পড়াশোনা, বাবার চোখের চিকিৎসা।’ বাড়ি ফেরার পথেই গণধর্ষণ। ‘চিনে ফেলায়’ খুন। সেই ঘটনা, সেই মামলারই হাই কোর্টে সাজা ঘোষণা হল শুক্রবার।
কামদুনি কাণ্ড গোটা দেশে সবচেয়ে আলোচিত মূলত তিনটি কারণে। এ দিন রায়ের পরে বলছিলেন ওই গ্রামেরই বধূ, মাসের পরে মাস ধরে চলা আন্দোলনের মুখ মৌসুমি কয়াল— ‘‘ঘটনার গভীরতাকে গুরুত্ব না দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতা আর রাজনীতি।’’
ঘরের মেয়ের সেই হাল দেখে রাস্তায় দেহ রেখে অবরোধ, আন্দোলনের শুরু। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে উল্টে পরিবারকে চাকরি, ক্ষতিপূরণের কথা বলায় মন্ত্রী, সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কামদুনি এসে তাঁদের কথা শুনতে হবে— এই দাবিতে দিনের পর দিন চলে বিক্ষোভ, মিছিল।
মুখ্যমন্ত্রী আসেন। ‘অনভিপ্রেত’ বিতণ্ডায় জড়িয়ে যান কামদুনির মহিলারা। কেউ কথা বলতে যান। মাওবাদী, এমনকি, তাঁকে হত্যার চক্রান্তের অভিযোগও করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। প্রতিবাদ নামে কলকাতা, দিল্লির পথে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আশ্বাস দেন। মৃতার দাদা এ দিন অভিযোগ করেন, প্রথম থেকেই গা ছাড়া ভাব ছিল পুলিশের। তিনি বলেন, ‘‘গণধর্ষণ, এমনকি ধর্ষণের ‘ধারা’ নিয়েও পুলিশের টালবাহানার পরে তদন্তভার নেয় সিআইডি।’
লাগে রাজনীতির রংও। শাসক-বিরোধীদের কামদুনির ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার মরিয়া লড়াই, মিছিল, পাল্টা মিছিল, মারধর, পুলিশি পাহারা আর কামদুনিকে ‘সোনায়’ মুড়ে দেওয়ার দফায় দফায় প্রতিশ্রুতিতে দশটা বছর পার হয়ে যায়। এ দিন গ্রামেরই এক যুবক বলেন, ‘‘কত কথা! বদলায়নি কিছুই।’’ বস্তুতই কামদুনি পড়ে সেই আঁধারেই।
দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। কিন্তু কামদুনি? এ দিনের রায়ের পরে মৃতার ভাই বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব। তিনি বলেন, ‘‘বারাসত আদালত থেকে নগর দায়রা, সেখান থেকে হাই কোর্ট, দিনের পর দিন শুনানি পিছিয়েছে। সরকারি কৌঁসুলি বদল হয়েছে বার বার। মা-বাবা শয্যাশায়ী।’’ দাদা বলেন, ‘‘কত লড়াই সম্ভব?’’
মৃতার পরিবার, আন্দোলনকারীদের মতোই অবসন্ন কামদুনিও। ‘সওদাগর’ ছবির শুটিংয়ে এখানে এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, নূতনেরা। কামদুনি ফিরতে চায় সেই নিশ্চিন্তের অতীতে। মধ্যে বাধা রয়ে গেল জলে কাদায় পড়ে থাকা মেয়েটির দেহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy