Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
State News

শেষযাত্রায় ‘স্যরজি’, যোগ দিলেন সবাই

এলাকার সঙ্গে তাইজুরের সম্পর্কের শুরু প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে।

তাইজুর রহমানের শেষকৃত্যে। ছবি: বিকাশ মশান

তাইজুর রহমানের শেষকৃত্যে। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩০
Share: Save:

কারও ‘স্যরজি’, কারও বা ‘আঙ্কলজি’ তিনি। আর সঙ্গীতা গিরির কাছে তিনি ‘বাবা’। তিনি, পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর সিনেমা রোডের বাসিন্দা তাইজুর রহমান। শুধু গিরি পরিবারটিই নয়, এলাকার সবার কাছেই বড় আপন এই মানুষটি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। শনিবার বিকেলে গোর দেওয়া পর্যন্ত তাইজুরকে সঙ্গ ছাড়া করল না এলাকাও।

এলাকার সঙ্গে তাইজুরের সম্পর্কের শুরু প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে। ভাড়াবাড়িতে ইংরেজি, বাংলা আর হিন্দির টিউশন পড়াতেন তিনি। এলাকার কয়েক প্রজন্মের পড়ুয়ারা তাঁরই হাতে গড়া। তবে ধীরে ধীরে পড়ানোর পরিসর ছাড়িয়ে সবার আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন তাইজুর।

অকৃতদার ‘স্যরজি’র স্নেহেই বেড়ে ওঠা বিহারের চন্দন গিরির। যুবক চন্দন জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তাঁর বাবার কর্মসূত্রে দুর্গাপুরে আসা। তার পরে বাবা চলে যান অন্যত্র। স্রেফ ভালবাসার টানেই তাইজুরের কাছে থেকে যান চন্দন। সেই চন্দনই বড় হন, ব্যবসা দাঁড় করান, বিয়ে করেন সঙ্গীতাকে। বছর দুয়েক আগে নিজের বাড়িও করেন চন্দন। কিন্তু স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকা নয়, বরং তাইজুরকে নিয়েই নতুন বাড়িতে ওঠেন চন্দন।

আরও পড়ুন: গণতান্ত্রিক পরিসর কমছে শিবপুরে, উঠছে অভিযোগ

চন্দনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘরে দেবদেবীর মূর্তি। পাশেই তাইজুরের জন্য উপাসনার আলাদা জায়গা করা। কেন এত কিছু? চন্দনের কথায়, ‘‘আমার জীবনে স্যরজির অবদান বলে বোঝানো যাবে না।’’ পাশেই থাকা সঙ্গীতা বলেন, ‘‘আমি বাবা বলতাম। উনি বলতেন, সবাই স্যরজি ডাকে। তোমার মুখে এই ডাকটা খুব ভাল লাগে। বাবার কালাকাঁদ, বিরিয়ানি খুব প্রিয় ছিল।’’ এক সঙ্গে ছটপুজো বা ঈদের উদ্‌যাপন, হত তা-ও। ওই দম্পতির সাড়ে তিন বছরের ছেলে যশরাজ এ দিন বাবার হাত ধরে খয়রাসোলের কবরস্থানে গিয়েছিল। ‘বাবা’ তাইজুরকে মাটির সঙ্গে বিলীন হয়ে যেতে দেখে চমকে ওঠে শিশুটি: ‘‘বাবা কোথায় যাচ্ছে?’’

মাথায় রুমাল বেঁধে, সজল চোখে তাইজুরের শেষ যাত্রার সঙ্গী হয়েছিলেন নিশীথ লায়েক, মুকেশ বাল্মীকি, সন্তোষ তিওয়ারি, দেবব্রত লায়েক, ফিরোজ খান, মহম্মদ আখতার প্রমুখ। তাঁরাই জানালেন, টিউশনের জন্য টাকাপয়সা নিয়ে চাহিদা ছিল না ‘স্যরজি’-র। যে যা দিতেন, তাতেই খুশি। তাইজুরের শেষকৃত্যে কবরস্থানে আসা ইমাম মৌলানা আব্দুস সাত্তার ওয়ারসি চন্দনের পরিবারের সঙ্গে তাইজুরের বসবাস, এ দিনের শোকযাত্রায় দুর্গাপুরের নানা ধর্মের মানুষের যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটাই আমাদের ভারতবর্ষ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Communal Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy