নিয়মের তোয়াক্কা না করে ফেটেছে শব্দবাজি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
সোমবার সন্ধ্যায় ঘড়ির কাঁটা সবে ৬টার ঘর ছুঁয়েছে। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, দমকা হাওয়ার মাঝেই ভেসে এল আওয়াজ। প্রবল বিক্রমে শব্দবাজি জানাল, এ দিন, কালীপুজো। নিউ ব্যারাকপুর-মধ্যমগ্রামের বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকেই থেকেই শব্দ শোনা গিয়েছে। সন্ধ্যা গড়াতেই বাজির শব্দ মিলেছে রাজ্যের প্রায় সব জায়গায়। তবে অন্যান্য বছরের থেকে মহানগর এবং জেলায় শব্দবাজির তাণ্ডব কালীপুজোর রাতে কিছুটা কম মালুম হয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। অনেকের মতে, গাঙ্গেয় বঙ্গের বহু জেলায় এ দিন বৃষ্টি হয়েছে বলে বাজির দাপট প্রথমে কম ছিল। তবে বৃষ্টি থামতেই শব্দবাজির দাপট শুরু হয়।
বৃষ্টির দাপটে কলকাতায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজির দাপট কম ছিল। রাত ৯টা নাগাদ বৃষ্টি একটু ধরতেই বিভিন্ন এলাকায় বাজি ফাটানো শুরু হয়। অভিযোগ, রাত সাড়ে এগারোটার সময় সল্টলেকে সব্যসাচী দত্তের কালীপুজোর সামনে রাস্তায় দেদার বাজি পোড়ানো হয়েছে। পুলিশ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, বড়বাজার, কাশীপুর, সিঁথি, বেলেঘাটা, কসবা, যাদবপুরে বাজির দাপট বেশি ছিল। রাত ৮টা পর্যন্ত লালবাজার ১৬০ কিলোগ্রাম বাজি আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৭ জনকে। পথে নেমেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দল। তারা আলাদা ভাবে ৬০টি বাজি ফাটানোর ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছে।
নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার বাজি ফাটানো যাবে রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে। তার বাইরে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ। তবে সেই নিষেধ যে কেবল প্রশাসনের খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ সোমবার মিলেছে। সন্ধ্যা ৭টায় পরিবেশকর্মী সংগঠন সবুজ মঞ্চের কলকাতার মূল কন্ট্রোল রুমে ঘনঘন ফোন আসছে। সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত জানান, ৬টার পর থেকে মূলত গরফা, বেহালা, কসবা থেকেই অভিযোগ মিলেছে। নাগরিকদের অভিযোগ, টালা, কেষ্টপুরেও রাতে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে।
শিলিগুড়িতে অন্য বার বিকেল থেকে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এ বার সেখানে সন্ধ্যায় ৭টার পর থেকে শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। নানা রাস্তায় পুলিশি টহল দেখা যায়। জলপাইগুড়িতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য অন্য বারের থেকে কম। মালদহ ও দুই দিনাজপুরে অবশ্য সন্ধ্যা নামতেই শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। আতশবাজির ধোঁয়ায় ভরে যায় জেলা সদরের রাস্তাঘাট। দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ও উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে হানা দিয়ে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার ও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আসানসোল ও দুর্গাপুর শহর-সহ পশ্চিম বর্ধমানের কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বিকেল থেকে শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, অতীতে যে সব এলাকায় বেশি শব্দবাজি ফাটত, সেখানে বিশেষ নজরদারি চলছে। অন্য বছরের তুলনায় হাওড়া গ্রামীণ এলাকা এবং হুগলিতেও শব্দবাজির তাণ্ডব কম বলে দাবি। তবে আরামবাগ থানার কাছেই বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর একাংশের। যদিও পুলিশের দাবি, তা ‘সবুজ বাজি’র আওয়াজ। যদিও শব্দবাজি কী ভাবে আইনি তকমা পেতে পারে সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা।
পাঁশকুড়ায় বাজি বিস্ফোরণের ঘটনার পরে পুলিশি নজরদারি বাড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে। তার মধ্যেই এ দিন তমলুক, নন্দকুমারে কিছু শব্দবাজি ফেটেছে। এগরায় প্রথা ভেঙে দীপাবলিতে এ বার নিষিদ্ধ আতশবাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন বহু পুজো উদ্যোক্তা। সন্ধ্যা নামতেই ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে নানা জায়গায় বাজির শব্দ শোনা গিয়েছে। তবে অন্য বারের তুলনায় তা কম। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়াতেও এ বার শব্দবাজির দাপট তেমন শোনা যায়নি। বিকেল নাগাদ নদিয়ার কৃষ্ণনগর, কল্যাণী বা রানাঘাটে শব্দবাজির কিছু আওয়াজ মেলে। তবে তার পরে আবহাওয়া খারাপ হতেই, তা কমতে শুরু করে।
এ বার অবশ্য শুধু ৯০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দবাজি নয়, পরিবেশবান্ধব শংসাপত্রহীন আতশবাজিও নিষিদ্ধ করেছে কোর্ট। তবে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ‘গ্রিন’ বাজি কার্যত তকমাতেই সীমাবদ্ধ। শুধু ভুয়ো তকমা সাঁটা আতশবাজি নয়, কার্যত কোনও তকমাহীন বাজিই পথেঘাটে ঢেলে বিক্রি হয়েছে। অভিযোগ, দূষিত আতশবাজি ধরতে পুলিশ-প্রশাসনের সেই সক্রিয়তা চোখে পড়েনি।
তবে অনেকেই বলছেন, এ বার দূষণের ছবিটা সে ভাবে হয় তো ধরা পড়বে না। কারণ, সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। তাতে বাতাসের ভাসমান ধূলিকণা অনেকটাই ধুয়েমুছে সাফ হতে পারে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, “বৃষ্টিতে দূষণ ধুয়ে যাওয়ার পরে সেই তথ্য দেখিয়ে যদি পরিবেশ দফতরের কর্তারা সাফল্যের দাবি করেন, অবাক হব না।” আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, মঙ্গলবার আবহাওয়ার উন্নতি হবে। তার ফলে বাজি ফাটানোয় বৃষ্টির বাধা থাকবে না। তার পরেও বাজির দাপটে লাগাম পড়ে কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy