মহম্মদ মিলন। —নিজস্ব চিত্র।
ঝড় সব কিছু তছনছ করে দেয়। রেমালও করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের একটি পরিবারের কাছে ওই ঘূর্ণিঝড় যেন আশীর্বাদ! চার বছর আগে নিখোঁজ হওয়া যুবকের খোঁজ মিলল ওই ঝড়ের কারণেই। যাঁর ফেরার আশা পরিবারের সকলে প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন, এ বার তিনি ঘরে ফিরবেন।
এক সপ্তাহ আগের ওই ঝড় দুই বাংলারই বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আছড়ে পড়ার আগে এ পার বাংলার দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হচ্ছিল জেলা প্রশাসনের তরফে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও নামখানা ও বকখালির মধ্যে বিস্তৃত বাঁধে বসেছিলেন বছর পঁচিশের এক যুবক। চোখেমুখে ভয়ডরের লেশমাত্র নেই! কাছে যেতেই নামখানা ব্লকের সিভিল ডিফেন্সের কর্মী অনুপ শাসমল বুঝতে পারেন, যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। নামধাম জানতে চাইলে প্রথমে তিনি চুপ করে থাকেন। পরে অসংলগ্ন ভাবে বলেন ‘বাংলাদেশ’, ‘মাছ বাজার’ ইত্যাদি। অনুপ তাঁকে স্থানীয় ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে যান। দুর্যোগ কাটলে আশ্রয় মেলে রাস্তার পাশে সরকারি বিশ্রামাগারে।
এর পর শুরু হয় ওই যুবককে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা। অনুপ যোগাযোগ করেন হ্যাম রেডিয়ো-র সঙ্গে। ঘটনাচক্রে, প্রশাসনের অনুরোধে দুর্যোগের সময় হ্যাম রেডিয়োর একটি দল সাগরদ্বীপে ছিল। যাতে দুর্যোগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা জানান, ওই যুবকের সঙ্গে তাঁরা বারবার কথা বলেন। যদিও তিনি অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। তবে, এটুকু স্পষ্ট হয়, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে এবং মাছের ব্যবসা বা মাছ ধরার সঙ্গে যোগ রয়েছে তাঁর।
হ্যাম রেডিয়োর তরফে পুলিশ-প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র দফতরে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের হ্যাম এবং সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ছবি ও বর্ণনা দেওয়ার পরে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোটের দোলখা গ্রামে ওই যুবকের পরিজনদের খোঁজ মেলে। জানা যায়, তাঁর নাম মহম্মদ মিলন। বাবা রুস্তম আলি।
হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘মিলন মাছের ব্যবসা করতেন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে আছে। বছর চারেক আগে এক দিন মাছ আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর সঙ্গে অনেক টাকা ছিল। বাড়ির লোক ভেবেছিলেন, টাকার লোভে কেউ খুন করেছে মিলনকে। এত দ্রুত তাঁর বাড়ির খোঁজ মিলেছে বাংলাদেশ সরকার ও সে দেশের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সৌজন্যে।’’
মিলনের খোঁজ পেয়ে খুশি পরিবারের লোকেরা। তাঁকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে। সিভিল ডিফেন্স কর্মী অনুপ বলেন, ‘‘ওই যুবকের বাড়ির খোঁজ মিলেছে, এতেই আমি খুশি। কাউকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারা খুবই আনন্দের। রেমাল শুধু ক্ষতিই করেনি, মিলনও ঘটাচ্ছে।’’
মিলনকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় যাঁরা যুক্ত, বাংলাদেশের হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মিলনের আত্মীয় জাহাঙ্গির আলম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy