Advertisement
E-Paper

The price of medicines: চুপিসারে বেড়েছে ওষুধের দাম, জ্বর থেকে পেট খারাপ, এক বছরে দাম বেড়েছে ১৫-৫০ শতাংশ

দু’শো ছাড়ানো সর্ষের তেলের দরের ঝাঁঝে চোখে জল। ‘কাঁদিয়ে ছাড়ছে’ ন’শো টাকা পেরোনো রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার।

ফাইল চিত্র

শুভদীপ গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৩৭
Share
Save

দু’শো ছাড়ানো সর্ষের তেলের দরের ঝাঁঝে চোখে জল। ‘কাঁদিয়ে ছাড়ছে’ ন’শো টাকা পেরোনো রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। আর এ পর্যন্ত শুনেই পাড়ার মোড়ে সরকারকে ‘শাপ-শাপান্ত
করার’ সান্ধ্য আড্ডায় দ্রুত উঠছে ওষুধ কিনতে গিয়ে পকেট খালির প্রসঙ্গ। বিশেষত বেশি এবং মাঝবয়সিদের হাহুতাশ, ‘‘শুধু কি রান্নার গ্যাস? কার্যত চুপিসারে বেড়েছে ‘পেটরোগা’ বাঙালির রোজ দরকারের গ্যাস-অম্বলের ওষুধের দামও!’’

কোনও কারণে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে তো কথাই নেই। পরিস্থিতি সামান্য জটিল হলে, সে ক্ষেত্রে খরচ কোথায় পৌঁছতে পারে, ‘দেব ন জানন্তি’। নিয়মিত ডাক্তার আর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে থাকতে হয় যাঁদের, তাঁদের অনেকেরই সেই খরচের ধাক্কা সামলাতে নাভিশ্বাস দশা। ক্যানসার, বিকল কিডনির মতো জটিল রোগে যাঁরা আক্রান্ত, মাস গেলে তাঁদের চিকিৎসা আর ওষুধের খরচ চোখ কপালে তোলার মতো। কিন্তু সে সব তো না হয় তবু ‘রাজার অসুখ’। জ্বর, সর্দি-কাশি, পেট খারাপ, বদহজমের মতো নিত্যদিন লেগে থাকা ‘নিতান্ত সাধারণ’ অসুখ মোকাবিলার ওষুধের দামও কয়েক বছরে যে গতিতে বেড়েছে, তা এমনিতেই রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এ কথা হয়তো আরও বেশি করে প্রযোজ্য সুগার, প্রেশার, থাইরয়েডের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ওষুধের ক্ষেত্রে।

এই করোনা-কালে শুধু গত এক বছরের মধ্যে এই সমস্ত ওষুধের বড় অংশের দাম বেড়েছে অন্তত ১০-১৫% (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ২০-৩০ শতাংশও। গত কয়েক বছরের হিসাব ধরলে, এই বৃদ্ধির হার আরও চড়া। অর্থাৎ, বাজারের অন্যান্য জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির হারের থেকেও অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের দর বেড়েছে বেশি। সাধারণ মানুষ অসহায়। কারণ, ‘পেটে না-খেয়েও’ ওষুধ কেনা ছাড়া তো গতি নেই।

জ্বর কমানোর প্যারাসিটামলের কথাই ধরা যাক। এমনিতে দাম খুব বেশি নয়। ১০টি ট্যাবলেট মোটামুটি ২১-২২ টাকা। কিন্তু গত এক বছরে তারও দাম বেড়েছে ১৫-১৬ শতাংশ। পেটখারাপ, বদহজম, বমি, অম্বলের ওষুধ মজুত থাকে ঘরে-ঘরে। পকেটে চাপ বাড়ছে সেখানেও। এক বছরে দর বেড়েছে ১০-২০ শতাংশ। এমনকী কিছু ব্র্যান্ডে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। কম-বেশি দাম বেড়ে চলেছে সুগার, প্রেশার, থাইরয়েড-সহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসায় ধারাবাহিক ভাবে ব্যবহৃত ওষুধেরও। দামের ছেঁকা বেশি আমদানি করা ওষুধে।

কলকাতার পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ী রণদীপ চক্রবর্তী যেমন জানাচ্ছেন, করোনার সময়ে গত দেড় বছরে মাল্টিভিটামিনের চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার দাম। অন্তত ১৬-২৪ শতাংশ। সল্টলেকের খুচরো ওষুধ ব্যবসায়ী তরুণ রুদ্রের কথায়, ‘‘ওষুধ সংস্থা, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট, স্টকিস্ট, কেমিস্ট— ওষুধ জোগানের এই পুরো শৃঙ্খলের প্রত্যেক স্তরে দাম বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। মানুষের অসুবিধা বুঝি। কিন্তু আমাদেরও হাত-পা বাঁধা!’’ গত এক বছরে বিভিন্ন ওষুধের দাম একাধিক বার বৃদ্ধির নজিরও রয়েছে বলে মানছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজ্যের পাইকারি ও খুচরো ওষুধ বিক্রেতাদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডিএ) সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী জানান, প্রায় ৪০০টি অত্যাবশ্যক ওষুধের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয় কেন্দ্র। বাকি ওষুধের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি বলেন, ‘‘সংস্থাগুলি যখন-তখন দাম বাড়াচ্ছে। কমাতে তো কখনও দেখিনি। আমরা অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি, সরকার যেন সমস্ত ওষুধের সর্বোচ্চ দাম ঠিক করে দেয়। না হলে দুর্ভোগ চলবেই।’’
ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, শুধু দাম নয়, সাম্প্রতিক কালে ওষুধের খরচ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও একটি বিষয়। ধরা যাক, একটি ওষুধের পাতায় ১০টি ট্যাবলেট রয়েছে। কারও হয়তো প্রয়োজন চারটি। পাড়ার দোকানে চল, পাতা থেকে তা কেটে দেওয়ার। বাকিটা বিক্রি অন্য কাউকে। তার পরেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ভাঙা পাতায় ওষুধ অবশিষ্ট থাকলে, তা ফেরত নেয় ওষুধ সংস্থা। কর ও ক্রয়মূল্যের একটি অংশ বাদ দিয়ে বাকি দামের হিসাবে নতুন ওষুধ দেয় দোকানিকে। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে বেশ কয়েকটি সংস্থা ওই ওষুধ ফেরত নিতে চাইছে না। অভিযোগ, করোনা-কালে এই প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ ওই সমস্ত ওষুধের পুরো পাতা ছাড়া বিক্রি করতে চাইছেন না। এক বিক্রেতা মানছেন, ‘‘এর ফলে কেউ হয়তো বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়ে ১০টি ট্যাবলেটের পাতা কিনছেন। কিন্তু তাঁর লাগছে চারটি। পরে আর না লাগলে অপচয় ৬০ টাকা। সারা বছরে একটি পরিবারকে এ ভাবে কত টাকা অপ্রয়োজনে খরচ করতে হয় ভাবতে পারেন?’’ ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের একাংশের বক্তব্য, ভারতে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের বেশির ভাগই আসে চিন থেকে। কিন্তু করোনা এবং সাম্প্রতিক সীমান্ত-উত্তেজনার জেরে সেই সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। বেড়েছে কাঁচামালের দাম। তারও প্রভাব পড়ছে ওষুধের দামে।

সাধারণ মানুষকে দামের চাপ থেকে কিছুটা অন্তত রেহাই দিতে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে চাইছে সরকার। কিন্তু এখনও তার বাস্তব প্রয়োগ প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।

ওষুধের দাম দেখেই ভিরমি খাওয়ার জোগাড় আমজনতার।
(চলবে)

medicine

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।