আহ্বান: সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এমনই শুভেচ্ছাবার্তা।
আর কবে কখন নতুন বছরে এমন সকাল এসেছে?
নিশ্চিত মনে করতে পারছেন না ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়। হয়তো বা মধ্যযুগের ইউরোপে ধ্বংসাত্মক প্লেগ বা ‘ব্ল্যাক ডেথ-এর সময়ে এমনটা ঘটেছিল। ১৩৪৮ থেকে শতক শেষ হওয়া পর্যন্ত চলেছিল দুর্যোগ। তখন কোনও বছরের শুরুতে এমন অভিজ্ঞতা হতেও পারে। কিন্তু তখনও ভারত বা চিনে সেই মহামারির চিহ্ন পাওয়া যায়নি, মনে করাচ্ছেন তিনি।
ইতিহাসের পাতায় বার বার এসেছে ক্ষয়ক্ষতির বহর, মৃত্যুমিছিল। ইউরোপের প্লেগ ছাড়া বিভীষিকাময় সময়কাল বলতে কলম্বাসের অভিযানের পরে দুই আমেরিকা জুড়ে পর্তুগিজ ও স্প্যানিশ বিজয়ের সময়ের দুর্যোগ। মহামারি ও হত্যায় রক্তাক্ত ইতিহাস। ১৯৩০-এর দশকে স্তালিনের সোভিয়েট রাশিয়ায় ‘কালেক্টিভাইজেশন’ পর্বের মন্বন্তর বা চিনে মাও জে দঙের আমলে ‘দ্য গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’-এর সময়কার খাদ্যাভাবও বিপুল প্রাণহানি ঘটিয়েছিল বলে মনে করাচ্ছেন রজতবাবু।
এমনকি, বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তরেও (১৭৭০) সিকিভাগ জনসংখ্যা নিঃশেষ হয়েছিল। সেই তুলনায় করোনাকালে মৃত্যু এখনও কম। তবু এই অতিমারির অভিঘাত দু’টি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন রজতবাবু। তাঁর কথায়, “প্রথমত, এই সঙ্কট বিশ্বব্যাপী। সেই সঙ্গে এমন আতঙ্ক, হাসপাতালে গেলে আর না ফেরার ভয় অথবা একা স্বজনহীন মৃত্যুর আশঙ্কা সাম্প্রতিক অতীতে প্রায় অভাবনীয়। ১৯১৮ বা ১৯১৯-এর শেষে ইনফ্লুয়েঞ্জায় বিপুল মৃত্যুও কলকাতায় ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু তখনও এই মাত্রার আতঙ্ক ছিল না।”
খারাপ উৎকণ্ঠার বছর ১৯৪৩-’৪৪ এর মন্বন্তর বা দেশভাগের দাঙ্গায় সময়ও পার করেছে বাঙালি। তবু সদ্যোজাত দেশটিকে ঘিরে ১৯৪৮-এর সূচনায় কিছু আশা জীবিত ছিল। এ বারের পয়লা জানুয়ারি প্রতিষেধকের খবর পেতে উৎকর্ণ। কিন্তু আশঙ্কার কাঁটায় নতুন বছরের শুভেচ্ছাও খানিক আড়ষ্ট। বৃহস্পতিবার বর্ষবরণের সন্ধে থেকে ছড়িয়ে পড়ে একটি সরস বার্তা, ‘দুমদাম হ্যাপি নিউ ইয়ার না পাঠিয়ে তিন-চার মাস পরিস্থিতি দেখুন। পুজোর আগে পাঠালেই চলবে।’
জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক মধুমিতা দোবের মতে, এমন সাবধানতা ফেলনা নয়। তিনি বলছেন, “ভ্যাকসিন কোনও জাদুদণ্ড, ভাবার কারণ নেই। কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনন্ত নয়, ভাইরাসও মিউটেট করে। তাই নিজেকেও বদলানো দরকার। ভুললে চলবে না, কমবয়সিদেরও স্বাস্থ্য নিয়ে সাবধানি হতে শিখিয়েছে ২০২০।”
আসলে ক্যালেন্ডার পাল্টালেও সময় বা মানুষ কোনওটাই অত চট করে পাল্টায় না, উপলব্ধি হৃদ্রোগ চিকিৎসক কুণাল সরকারের। তিনিও বলছেন, “বছর শেষে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির না-হয় একটু ফুরফুরে লাগছে। কিন্তু এখন ক্যালিফর্নিয়া বা ব্রিটেনে থাকলেই পুলক বেরিয়ে যেত। প্রথম বিশ্বেও কোথাও কোথাও ভয়াবহ অবস্থা। বয়স্কদের চিকিৎসাই দেওয়া যাচ্ছে না।”অতিমারির বিভিন্ন পর্যায় আসলে ক্যালেন্ডার মানে না। কুণালবাবু মনে করাচ্ছেন, “সেপ্টেম্বরে ইউরোপ একটু স্বস্তিতে ছিল, তখন আমরা গালে দু’থাপ্পড় খেয়েছি। এখন একটু ভাল সময় এলেও নেতানেত্রীদের যা রোড শো-এর বহর, তাতে ফের দুর্দিন শুরু হতেও পারে।’’ সব কিছু ঠিকঠাক চললে ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ আরও কমার কথা। কিন্তু ভোট-রাজনীতির হিড়িকে ভ্যাকসিন বিলি কর্মসূচি সুষ্ঠু ভাবে সারা নিয়েও দুশ্চিন্তায় কুণালবাবু। অতিমারি মোকাবিলায় ২০২০-র শিক্ষা কাজে লাগানোর উপরে জোর দিচ্ছেন মধুমিতাদেবী।
নতুন বছরের শুভেচ্ছার মিমে এই প্রথম মিশে আছে, পিপিই বা মাস্কের ছবি। উত্তরণের আশা সত্ত্বেও এই অনিশ্চয়তার তীব্রতাই ২০২১-এর ‘নিউ নর্ম্যাল’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy