Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC Rally on 21st July

প্রস্তুতিতেই নাজেহাল মানুষ, সভা-মিছিলে দমবন্ধ শহরের

কেউ নির্ধারিত সময়ের থেকে দু’-তিন ঘণ্টা পরে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন। কেউ বাস, অটোর মতো গণপরিবহণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে শেষে হেঁটেই সভাস্থল পেরোনোর চেষ্টা করছেন।

An image of TMC Rally preparations

প্রস্তুতি: একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ তৈরির জন্য এনে রাখা হয়েছে সরঞ্জাম। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩৮
Share: Save:

কোথাও মিছিল বেরোচ্ছে যখন-তখন, থানা জানতে পারছে মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে! কোথাও রাস্তার এক দিকে মঞ্চ বেঁধে সভা হবে বলে থানায় জানিয়ে রাখা হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গোটা রাস্তাটাই দখল হয়ে গিয়েছে। নির্ধারিত জায়গা ছাড়িয়ে উল্টো দিকের লেনেও চলে আসছে দর্শকের চেয়ার। পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলে বলা হচ্ছে, ‘‘কয়েক ঘণ্টার তো ব্যাপার, সামলে নিন!’’ কিন্তু কিছুতেই সামলে ওঠা যাচ্ছে না। অভিযোগ, গত কয়েক দিনে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা ঘিরে এলাকায় এলাকায় এমনই সমস্যার মধ্যে পড়ছে পুলিশ। পথের জট কাটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন উর্দিধারীরা। অভিযোগ, এর জেরে ভুগতে হচ্ছে পথে বেরোনো সাধারণ মানুষকে।

কেউ নির্ধারিত সময়ের থেকে দু’-তিন ঘণ্টা পরে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন। কেউ বাস, অটোর মতো গণপরিবহণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে শেষে হেঁটেই সভাস্থল পেরোনোর চেষ্টা করছেন। সন্ধ্যার পরে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে ভুগতে হচ্ছে আরও বেশি। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাসের দেখা মিলছে না। ফলে সুযোগ বুঝে যেমন খুশি ভাড়া হাঁকছে অটো, ট্যাক্সি। নয়তো বলেই দেওয়া হচ্ছে, ‘‘ও দিকে সভা আছে, যাব না।’’

এর মধ্যেই কলকাতা পুলিশের তরফে ২১ জুলাইয়ের সভা ঘিরে পথ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে মঙ্গলবার। যাতে ধর্মতলায় সভাস্থলের কাছে কিছু রাস্তায় অভিমুখ বদল করে যান নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করা হয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, শুক্রবার বাড়তি পুলিশ রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ৩টে থেকে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত জরুরি মালবাহী লরি ছাড়া কোনও লরি কলকাতায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। গাড়ি পার্কিং এবং ট্রাম চলাচল নিয়েও একাধিক পদক্ষেপ করা হবে। তবে ভুক্তভোগীদের অধিকাংশেরই প্রশ্ন, ‘‘সভার দিন ভোগান্তি তো হবেই। কিন্তু প্রস্তুতির নামে হওয়া পথ আটকে মিছিল ও সভার জেরে এখন থেকেই ভুগতে হবে কেন?’’

গত রবিবারই উল্টোডাঙা মেন রোডের উপরে অরবিন্দ সেতুর কাছে এক দিকে প্রস্তুতির জন্য মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। কিন্তু ছুটির দিন হলেও সন্ধ্যার পরে এমন পরিস্থিতি হয় যে, ওই অংশে যান চলাচল কার্যত থমকে যায়। সভার ঘেরা জায়গার বাইরের ভিড় পুলিশ কিছুতেই সরাতে পারেনি। শেষে উল্টোডাঙা মেন রোডের খন্না মোড়ের দিকে যাওয়ার রাস্তা গার্ডরেল দিয়ে চওড়া করতে হয় পুলিশকে। এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে তার পরে একটা অটো পেয়েছি। তা-ও শোভাবাজার পর্যন্ত যেতে যেখানে ১৫ টাকা ভাড়া, সভার জন্য সেটাই ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’’

সোমবার একই রকম সভা ছিল হাতিবাগানে স্টার সিনেমা হলের কাছে। ফুটপাত জুড়ে সেখানে মঞ্চ তৈরি হলেও ভিড় এমন ভাবে রাস্তায় নেমে আসে যে, বড়তলা থানা থেকে বাড়তি পুলিশ পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতেও শ্যামবাজার মোড় থেকে হেদুয়ার দিকে গাড়ি চলেছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। বাসে উঠে এই রাস্তাটুকু পেরোতে অনেকেরই প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগে গিয়েছে বলে অভিযোগ। একই ভাবে দফায় দফায় সভা, মিছিল চলেছে রাসবিহারী কানেক্টর, কালীঘাট চত্বর, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, সিআইটি রোড, কাশীপুর, বেলেঘাটা অঞ্চলে। অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার রোডে আবার একটি বাসস্ট্যান্ড পর পর দু'দিন দখল করে নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি-সভার জন্য। মঙ্গলবারও ওই এলাকায় একটি সভার জেরে তীব্র যানজট হয়। এস এন ব্যানার্জি রোড এবং কলেজ স্ট্রিটে গাড়ির গতি শ্লথ ছিল সভা, মিছিলের জেরে। সন্ধ্যার পরে শ্যামবাজার এলাকায় সভার জন্য প্রবল যানজটে বিপাকে পড়েন অফিস ফেরত যাত্রীরা। সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে হেঁটে এসে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কাছে অপেক্ষায় থাকা এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘‘সাড়ে ছ’টা থেকে দাঁড়িয়ে। হাওড়ার বাস নেই। সামনে নাকি মিছিল হচ্ছে। ভোটের সময়েও এই রকম বাস উবে গিয়েছিল। নেতারা শুধু নিজেদের কথাই বলেন, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে মাথা ঘামান না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy