Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Buddhadeb Bhattacharjee Death

বুদ্ধের তেতলার ঘর নিয়েই আগ্রহ নন্দনে

অনেকেই তাঁকে দেখেছেন, সন্ধ্যায় সাদা অ্যাম্বাসেডর করে এসে নন্দনের সামনে নামতে। সাদা গোল মুড়ি, লিকার চা সহযোগে প্রতি সন্ধ্যায় সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় নন্দনের সেই তেতলার ঘরে ডুবে থাকতেন বুদ্ধদেব।

নন্দনের করিডরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চলচ্চিত্র উৎসবের নানা মুহূর্তের ছবি। বৃহস্পতিবার।

নন্দনের করিডরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চলচ্চিত্র উৎসবের নানা মুহূর্তের ছবি। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৬
Share: Save:

হঠাৎই উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দুতে তেতলার ঘরটি। গত এক দশকে যে ঘরের অন্দর আমূল বদলে গিয়েছে। তবু নন্দনের সেই ঘর নিয়ে বৃহস্পতিবার উৎসাহ দেখা গেল নন্দনে আসা লোকজনের মধ্যে। অনেকেই জানতে চাইলেন, সেই ঘর আজও আছে কিনা?

২২শে শ্রাবণকে কেন্দ্র করে নন্দন চত্বর ছেয়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতে। রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর ভীষণ পছন্দের ছিল। যেমনটা ছিল কবিতা লেখা, নাটক লেখা, সিনেমা দেখা। আর এ সব কর্মকাণ্ড করতেই প্রতিদিন সন্ধ্যায় মহাকরণ থেকে বেরিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পৌঁছে যেতেন নন্দন প্রেক্ষাগৃহের উপরে তেতলার ঘরটিতে।
ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবার, ২৩শে শ্রাবণের সকালেই তিনি চলে গিয়েছেন। তবে তেতলার অলিন্দে রাখা তাঁর অজস্র প্রাণবন্ত ছবি আর সেই ঘর যেন বলতে চায়, কে বলেছে উনি নেই?

কর্মজীবনের দীর্ঘ সময় নন্দনই ছিল বুদ্ধদেবের দ্বিতীয় বাড়ি। অনেকেই তাঁকে দেখেছেন, সন্ধ্যায় সাদা অ্যাম্বাসেডর করে এসে নন্দনের সামনে নামতে। সাদা গোল মুড়ি, লিকার চা সহযোগে প্রতি সন্ধ্যায় সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় নন্দনের সেই তেতলার ঘরে ডুবে থাকতেন বুদ্ধদেব। সেখানে গিয়ে এ দিন জানা গেল, তাঁর বিতর্কিত নাটক ‘দুঃসময়’-এর জন্মবৃত্তান্ত, এমনকি বামফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে ফিরে আসার গল্পেও নন্দনের নাম জড়িয়ে। সেই তিনিই আবার বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে, ২০১১ সালে নন্দনের সঙ্গে স্বেচ্ছায় সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।

নন্দনের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাক্তন অধিকর্তা অংশু শূর বলেন, ‘‘১৯৯২ সালে প্রথম কেরলের সঙ্গে যৌথ ভাবে চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করা হয়। উনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের বোদ্ধা ছিলেন। আমরা চলচ্চিত্র উৎসব করার মনস্থ করেছি জেনে ভীষণ উৎসাহ দেন। নন্দনে বসে অজস্র কবিতা, নাটক লিখেছেন।’’

এ দিন বুদ্ধদেবের প্রসঙ্গ তুলতে গলা ধরে এল নন্দনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পরেশ সরকারের। নন্দনে এসে নিয়মিত তাঁর হাতে চা খেতেন বুদ্ধদেব। পরেশ বলেন, ‘‘সাদা গোল মুড়ি আর চা ছাড়া কিছু খেতেন না। কখনও মুড়ির সঙ্গে চানাচুর খেতেন। উনি আসার আগে খবর আসত। আমি তৈরি থাকতাম চা নিয়ে। চায়ের জন্য কখনও উনিও আমাকে খুঁজতেন।’’ পুরনো কর্মীরা ভোলেননি বুদ্ধবাবুর ঘন ঘন ধূমপানের অভ্যাসের কথাও। তাঁরাই জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার পরে নন্দন ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন বুদ্ধদেব।

অনেকেই জানাচ্ছেন, রাজনীতিক বুদ্ধদেব আর নন্দনের বুদ্ধদেব ছিলেন আলাদা ব্যক্তিত্ব। অংশুর কথায়, ‘‘কখনও নন্দনে ওঁকে রাজনীতির কথা বলতে শুনিনি।’’ তাঁর কাছে নন্দন ছিল আদতে সংস্কৃতির কেন্দ্র। সঙ্গীতশিল্পী শিবাজী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলা সঙ্গীত মেলায় উনি আসতেন। নন্দনের তেতলার ঘরে উনি বসতেন। অনেক বার সেখানে গিয়ে দেখা করেছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy