ফাইল চিত্র।
নতুন বছরের পাঁচ মাস হয়ে গেল। নতুন আর্থিক বছরেরও এক মাস। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় একশো দিনের কাজ বাবদ বরাদ্দ আসেনি দিল্লির কাছ থেকে। ফলে বহু ক্ষেত্রেই মজুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে শ্রমিকদের। এই তালিকায় রয়েছে জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া, হাওড়ার মতো কয়েকটি জেলা। কেন এই অবস্থা? প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে কেন্দ্র কোনও বরাদ্দ পাঠায়নি। এই প্রকল্পে গোটা রাজ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বকেয়া আছে বলে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর। দফতরের এক কর্তা জানান, টাকা চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি লেখা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মজুরি বাবদ জলপাইগুড়ি জেলায় বকেয়া ৮৫ কোটি টাকা। বাঁকুড়ায় বাকি ৩৪ কোটি টাকা, হাওড়ায় প্রায় একশো কোটি। তিন জেলাতেই গত ডিসেম্বর থেকে মজুরি দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একশো দিনের কাজে জলপাইগুড়ি অন্যতম অগ্রগণ্য জেলা। করোনাকালে পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে এলে তাঁদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মূলত একশো দিনের কাজের উপরেই ভরসা করেছিল রাজ্য প্রশাসন। এখন সেখানেই যদি মজুরি বন্ধের ফলে কাজ স্তব্ধ হয়ে যায়, তা হলে এই বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হবে কী ভাবে, উঠেছে সেই প্রশ্নও।
প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের বরাদ্দ দিল্লি থেকে সরাসরি জেলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসে। গত পাঁচ মাস ধরে সেই টাকা আসেনি। সম্প্রতি একশো দিনের কাজ দেখতে পরপর কয়েকটি কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এসেছিল। তারা বেশ কয়েকটি জেলায় ঘুরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। জলপাইগুড়ি জেলাতেও কয়েকটি কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তারা। বিজেপির ২০ জন সাংসদের একটি দলও লিখিত ভাবে দিল্লির কাছে একশো দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল।
প্রশ্ন উঠেছে, একশো দিনের প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধের পিছনে কি দুর্নীতির অভিযোগই মূল কারণ?
অভিযোগকারী সাংসদদের মধ্যে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ও ছিলেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় দল পরিদর্শনে এসে যে গরমিল দেখেছিল, তার ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ হওয়াটা স্বাভাবিক।” একই ভাবে বাঁকুড়ার মাচানতলায় দিলীপ ঘোষও বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে কেন্দ্র যে টাকা পাঠাচ্ছে, তা লুট হয়ে যাচ্ছে।’’ কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার সম্প্রতি দাবি করেন, রাজ্য একশো দিনের কাজের ‘ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট’ কেন্দ্রের কাছে ঠিক সময়ে জমা দিতে পারছে না এবং এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। তাই শ্রমিকদের মজুরি সময়মতো আসছে না।
তৃণমূল অবশ্য বল বিজেপির দিকেই ঠেলে দিতে চাইছে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায় বলেন, “রাজ্যে বিজেপি ভোটে হারের জ্বালা বিজেপি ভোলেনি। তাই এখন সাধারণ মানুষকে ভোগাতে চাইছে।” একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহমহাপাত্রের মুখেও। তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি (দিলীপ ঘোষ) জানেন না, একশো দিনের কাজের টাকা সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ফলে, সে টাকা অন্য কারও হাতে যাওয়ার
সম্ভাবনাই নেই।’’
এই তরজায় বিপাকে পড়েছেন একশো দিনের প্রকল্পের উপরে নির্ভরশীলেরা। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে জেলা প্রশাসনস্তরে। জলপাইগুড়ি জেলার প্রকল্প আধিকারিক সুচেতনা দাস বলেন, “আমরা বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, সরকারি মজুরির টাকা সকলেই পাবেন, হয়তো দেরি হচ্ছে। আশায় রয়েছি দ্রুত বকেয়া
টাকা পাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy