Advertisement
E-Paper

খাতায় শূন্য, ভাবনায় শূন্যতা, বিতর্কের সুর সম্মেলনের মঞ্চে

ভোটের বাক্সের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘শূন্যতা’ কি ভাবনায়? আত্মসমালোচনার সুরে এই গুরুতর প্রশ্ন উঠে আসছে সিপিএমের অন্দরে।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে আলোচনায় প্রতিনি‌ধিরা।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে আলোচনায় প্রতিনি‌ধিরা। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৪
Share
Save

লোকসভা বা বিধানসভায় আসনের খাতায় দল শূন্য। কিন্তু ভোটের বাক্সের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘শূন্যতা’ কি ভাবনায়? আত্মসমালোচনার সুরে এই গুরুতর প্রশ্ন উঠে আসছে সিপিএমের অন্দরে।

সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন, শনিবার উদ্বোধনী বক্তৃতা করেছিলেন দলের পলিটব্যুরো কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। দলীয় সূত্রের খবর, তার পরে শনিবার রাত থেকে রবিবার দিনভর সেই প্রতিবেদনের উপরে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে একের পর এক জেলার প্রতিনিধি দলের ভাবনা ও পরিকল্পনার খামতি নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের সমবেত বক্তব্যের নির্যাস, দল হিসেবে সিপিএম কি আর স্বপ্ন দেখাতে পারছে না? যার প্রভাব পড়ছে কর্মী ও সমর্থকদের উপরে?

নির্বাচনী ব্যর্থতার কথা অবধারিত ভাবেই সম্মেলনের আলোচনায় আসছে। তবে তারই মধ্যে হুগলি জেলার এক প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছেন, সমাজ পপিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে বামপন্থী রাজনীতিতে মানুষ আসেন। শুধু ভোটের কৌশল ভাবতে ভাবতে দল কি মূল লক্ষ্য এবং পথই ভুলে গিয়েছে? উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের এক প্রাক্তন বিধায়ক উল্লেখ করেছেন, সিপিএমের সংগঠন আগের চেয়ে অবশ্যই অনেক দুর্বল হয়েছে। কিন্তু সেই সংগঠন নিয়েও দল পঞ্চায়েত ও পুরভোটে ভাল লড়াই করছে, ক্ষেত্রবিশেষে আসনও জিতছে। অথচ বিধানসভা, লোকসভার মতো বড় নির্বাচনে গিয়ে শোচনীয় ফল হচ্ছে। তার মানে রাজনৈতিক ভাবনায় কোনও ঘাটতি থাকছে, বড় জায়গায় গিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। কলকাতা জেলার এক তরুণ নেতার প্রশ্ন, ভোটের ফলাফলের নিরিখে সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত নেতাদের উপরে কেন ‘দায়’ বর্তাবে না? নেতৃত্বের স্তরে সুদূরপ্রসারী দর্শন ক্ষমতার অভাব, মধ্যবিত্তয়ানার প্রসঙ্গও এসেছে আলোচনায়।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে আলোচনার মুহূর্ত।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে আলোচনার মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র।

এই বিতর্কের মাঝেই নির্বাচনে অতীতের ভুল-ভ্রান্তি বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ অধিবেশন করতে চলেছে সিপিএম। রাজ্য সম্মেলনের মধ্যে এমন আলাদা অধিবেশন এই প্রথম। হুগলি জেলার ডানকুনিতে সিপিএমের চলতি রাজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিন, সোমবার ওই বিশেষ অধিবেশন হবে। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘আমরা এর মধ্যে যা করতে চেয়েছি এবং কী পেরেছি, তার বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের দিক্‌নির্দেশের জন্য বিশেষ অধিবেশন হবে। ভবিষ্যতের কর্মসূচি ও আন্দোলনের রূপরেখাও ঠিক করা হবে।’’

রাজনৈতিক ভাবে গ্রামীণ গরিব মানুষকে সঙ্গে নেওয়ার দুর্বলতার পাশাপাশি সাংগঠনিক স্তরে তরুণদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে শিথিলতার কথা উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছিলেন কারাট। সম্মেলনে প্রতিনিধিরাও সেই প্রসঙ্গ তুলছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার যাদবপুর এলাকার এক নেত্রী যেমন তাঁদের জেলার সম্মেলনে তরুণ, সর্বক্ষণের কর্মীদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে কী হয়েছে, সেই ঘটনা বলেছেন। আবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের প্রতিনিধিদের মত, পাহাড়ের নানা জনজাতি অংশের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবলে উত্তরবঙ্গ থেকে বামেরা এমন কার্যত মুছে যেত না!

তরুণদের সংগঠনে ধরে রাখা ও গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘অনীহা’র কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন সেলিম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টিতে মিস্‌ড কল দিয়ে সদস্য হওয়া যায় না। উৎসাহীদের প্রশিক্ষিত করা, তাঁদের নিয়ে আসা এবং ধরে রেখে উন্নীত করার একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়া চালানোর ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় অনীহা রয়েছে। আমরা অবশ্যই সে দিকে নজর দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘এর মানে এই নয় যে, বয়স্কদের আমরা দলে অপাংক্তেয় করে দিচ্ছি! জনবিন্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দলকে সাজাতে চাইছি।’’ সম্মেলনের প্রথম দু’দিনে ১৫টির বেশি প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছে। শিক্ষায় ড্রপ-আউটের হার বেড়ে যাওয়া এবং রাজ্যের আর্থিক হাল নিয়ে প্রস্তাব তার মধ্যে অন্যতম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Left

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}