Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Partha Chatterjee

তৃণমূলে পুনরুত্থান শোভনের? পার্থর লাগাতার সক্রিয়তায় জল্পনা জোরদার, নস্যাৎ করছেন বৈশাখী

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবিবারের বৈঠক কী নিয়ে হয়েছে, সে বিষয়ে বৈশাখী মুখ খুলতে চাননি। তবে গত কয়েক দিন ধরে যে নিরন্তর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, সে কথা বৈশাখী স্বীকার করেছেন।

বৈশাখীর সঙ্গে বৈঠক করে কি বরফ গলাতে পারলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়? জল্পনা নানা রকম।—ফাইল চিত্র।

বৈশাখীর সঙ্গে বৈঠক করে কি বরফ গলাতে পারলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়? জল্পনা নানা রকম।—ফাইল চিত্র।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ১৯:১১
Share: Save:

প্রথমে ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক। তার পরের কয়েক দিনেও নিরন্তর যোগাযোগে থাকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এ হেন সক্রিয়তায় জল্পনা এখন প্রবল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে। বৈশাখীকে সেতু বানিয়ে শোভনের কাছে পৌঁছনোর মরিয়া চেষ্টায় তৃণমূল, জল্পনা এমনই। বৈশাখীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে পার্থ সে কাজে সফলও হয়েছেন বলে তৃণমূলের একটি অংশ দাবি করতে শুরু করেছে। বৈঠক বা ফোনালাপের কথা অস্বীকার করছেন না বৈশাখীও। কিন্তু তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হওয়ার জল্পনা পত্রপাঠ নস্যাৎ করছেন তিনি।

মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষা তথা শোভন ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে গত রবিবার বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে বিকাশ ভবনে নয়, রবিবার হওয়ায় বৈশাখীকে নিজের বাসভবনেই ডেকেছিলেন পার্থ। প্রায় তিন ঘণ্টা চলে সে বৈঠক। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কলেজ শিক্ষিকার সেই বৈঠকে শিক্ষা দফতর নিয়ে কোনও কথা হয়নি, এমন নয়। কিন্তু সে আলোচনা ছিল নেহাৎই সংক্ষিপ্ত। ঘণ্টা তিনেকের বৈঠকে সিংহ ভাগ সময়টাই পার্থ ব্যয় করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলের কাজে সক্রিয় ভাবে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা করতে। খবর শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েক বার উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে শোভন মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেন। তার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কলকাতার মেয়র পদও ছেড়ে দিতে বলেন এবং শোভন সে পদও ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।

লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এক বার জোর জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তো বটেই আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈশাখী সে সময়ে একাধিক বৈঠক করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিজেপিতে তাঁরা যোগ দেননি ঠিকই। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বাংলায় নিজেদের সংগঠনকে বিজেপি যখন দ্রুত সাজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে, তখনই ফের গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে, শোভন-বৈশাখীর বিজেপি-গমন সময়ের অপেক্ষা। শোভনকে সসম্মানে স্বাগত জানাতে বিজেপি নেতৃত্ব প্রস্তুত এবং শোভনের যোগদান নিশ্চিত করতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গেরুয়া শিবির নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলেছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন, ওদের হাত ধরার কথা বলেননি মমতা: তৃণমূল, বাম-কংগ্রেস বলল বলেছিলেন, তবে ‘নো চান্স’

এই জল্পনা তৈরি হওয়ার পর থেকেই ফের সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা যে ভাবে শোভন বন্ধ করে রেখেছেন, তাতে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের কাছে পৌঁছনোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের পক্ষে। কলকাতার বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সম্প্রতি কয়েক বার শোভনকে ফোন করেছিলেন, দলের জন্য সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শোভন কোনও সদর্থক সাড়া দেননি বলে খবর। এই পরিস্থিতিতেই ময়দানে নামানো হয়েছে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শোভনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা পার্থ করেননি। শোভনের কাছে পৌঁছনোর জন্য বিজেপি যাঁকে সেতু বানিয়েছে বলে খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও সেই বৈশাখীর দ্বারস্থই হয়েছেন। তৃণমূলের হয়ে শোভন যাতে ফের সক্রিয় হন, সে বিষয়ে বৈশাখীকে সচেষ্ট হতে পার্থ অনুরোধ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

সামনের বছর কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার ৫০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে চলে গেলে সেই ৫০ কোথায় পৌঁছে যেতে পারে, তা ভেবে তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ কলকাতা তৃণমূলের কাছে মর্যাদার লড়াই। দলের জন্ম হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ সময়টাই কলকাতার দখল তৃণমূল নিজের হাতে রেখেছে। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে শোভনকে ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠা তৃণমূলের জন্য স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন, মাদকবিরোধী মিছিলেই টলমল পায়ে ‘মত্ত’ সোনারপুরের আইসি! সাসপেন্ড করল জেলা পুলিশ

শোভনের মানভঞ্জনে অন্য অনেকে ব্যর্থ হওয়ার পরে পার্থর উপরে সেই দায়িত্ব বর্তেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। শোভনের শর্তেই শোভনকে ফেরানো হবে, প্রয়োজনে আবার তাঁকে মেয়র পদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে— এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। দাবি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠদের।

তৃণমূলের একাংশ দাবি করছে, দলের প্রস্তাবে শোভন নরম হয়েছেন। তৃণমূলের হয়ে ফের সক্রিয় হতে তিনি আর বেশি সময় নেবেন না। তবে এ বিষয়ে তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কখনওই কিছু বলা হয়নি। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আবার মহানাগরিক পদে ফেরানো হতে পারে, এমন কোনও ইঙ্গিত তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এক বারও দেওয়া হয়নি। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক কী কারণে বা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফেরাতে তিনি সক্রিয় কি না, সে সব নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে করেননি।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই গুঞ্জন নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন। বিস্ময়ের সুরে আনন্দবাজারকে তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের সমস্যা তো শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ছিল না। যত দূর জানি, সমস্যাটা আমাকে কেন্দ্র করে ছিল। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি না এই ক’মাসে পরিস্থিতি কী এমন বদলে গেল যে, আমি হঠাৎ তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হব।’’ তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে কটাক্ষের সুরও। তিনি বলেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ছেড়েছেন বলে তো শুনিনি। তিনি তো এখনও তৃণমূলের বিধায়ক, তৃণমূলেরই কাউন্সিলর। কিন্তু তৃণমূলের একাংশ যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন বলে শুনছি, তাতে তো মনে হচ্ছে, ঘোষিত ভাবে না তাড়ালেও অঘোষিত ভাবে ওঁরা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়েই দিয়েছিলেন।’’

আরও পড়ুন, ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে সংঘর্ষ রুখতে পুলিশের গুলি, জখম বিজেপি কর্মী, রণক্ষেত্র গুড়াপ

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবিবারের বৈঠক কী নিয়ে হয়েছে, সে বিষয়ে বৈশাখী মুখ খুলতে চাননি। তবে গত কয়েক দিন ধরে যে নিরন্তর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, সে কথা বৈশাখী স্বীকার করেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রীর রোষে বৈশাখী যতই পড়ুন, দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যতই ছিন্ন হোক, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক বহাল রেখেছিলেন। সেই কারণেই বৈশাখীর মাধ্যমে শোভনকে রাজি করাতে পার্থকে মাঠে নামানো হয়েছে।

পার্থর সঙ্গে এই নিরবচ্ছিন্ন সুসম্পর্কের কথা বৈশাখী অস্বীকার করেননি। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘অনেক ঝড়ঝাপটার পরেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ থেকেছে, এ কথা ঠিক। গভীর সঙ্কটের সময়ে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আমরা বেশ কয়েক জন কলেজ শিক্ষিকা পাশে পেয়েছি, সে কথাও ঠিক। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কারণে আমাকে একাধিক বার অপমানিতও হতে হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্মতিতেই এক সময়ে আমাকে ওয়েবকুপা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই আমাকে গুরুদাস কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে সরিয়েছেন। তাই ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই জানাচ্ছি, উনি চাইলেই আমি তৃণমূলের পক্ষে সক্রিয় হব, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।’’

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy