পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে আবার আতশকাচের তলায় উঠে আসছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। এ তথ্য ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে যে, রেশন দুর্নীতিতে মূল অভিযুক্ত বাকিবুর রহমান প্রযোজিত ছবিতে অভিনয় করেছিলেন পার্থের বান্ধবী অর্পিতা। জ্যোতিপ্রিয় (বালু) গ্রেফতার হওয়ার পর জানা যাচ্ছে, শুধু অভিনয়ই নয়, অভিনেত্রী বান্ধবীকে ভোটের রাজনীতিতেও আনতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ।
বালু গ্রেফতার হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কিন্তু বালুর ঘনিষ্ঠেরা জানাচ্ছেন, উত্তর ২৪ পরগনার একটি পুরসভা থেকে অর্পিতাকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন পার্থ। কিন্তু সেই উদ্যোগে জল ঢেলে দেন বালু।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের ১০০টির বেশি পুরসভায় পুরভোট হয়েছিল। সেই পুরভোটে কামারহাটি পুরসভার একটি ওয়ার্ড থেকে অর্পিতাকে প্রার্থী করতে চেয়ে দলের কাছে দরবার শুরু করেছিলেন পার্থ। যদিও ওই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল পুরভোটের অনেক আগে থেকেই। নির্বাচনে লড়ার জন্য কামারহাটি পুরসভা এলাকার ভোটারও হয়েছিলেন অর্পিতা। প্রার্থীতালিকা ঘোষণার আগে পর্যন্ত বান্ধবীর টিকিটের জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন পার্থ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি। কারণ— জ্যোতিপ্রিয়।
অর্পিতা যাতে কোনওভাবেই টিকিট না পান, সেই ব্যাপারে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়। ১৯৯৮ সাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন তিনি। তাই ওই জেলার সব পুরসভাতেই তাঁর পরিচিতি এবং প্রভাব বিস্তর। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর বালুর সেই দাপট উধাও হয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলের নিচুতলায় তাঁর যোগাযোগ ছিল। সে বার পুরভোটের প্রার্থীতালিকা নিয়েও দলের অন্দরে বিস্তর গোলমাল হয়েছিল। প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সময় বালু জানতে পারেন, পার্থ এক অভিনেত্রীর হয়ে কামারহাটি পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিটের কথা বলেছেন স্থানীয় নেতৃত্বকে। সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছেও ওই নিয়ে দরবার করেছেন। বালুর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কামারহাটিতে স্থানীয় স্তরে কথা বলে জ্যোতিপ্রিয় জানতে পারেন, কামারহাটি এলাকার ভোটার হলেও অর্পিতা কখনওই সেখানে থাকেন না। স্থানীয় নেতৃত্ব বালুকে জানিয়ে দেন, পুরভোটের মতো স্থানীয় নির্বাচনে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী চাপিয়ে দিলে ফল বিরূপ হতে পারে। এমনকি, দলের একাংশ অর্পিতার মনোনয়নের বিরোধিতা করে নির্দল প্রার্থীও দাঁড় করাতে পারে। দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টি আঁচ করে বালু বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান।
কামারহাটি পুরসভার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর দেখা যায়, মান্যতা পেয়েছে জ্যোতিপ্রিয়ের মতামত। টিকিট পাননি পার্থ-বান্ধবী অর্পিতা। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোননয়ন দেওয়া হয়েছে সন্দীপ ঘোষকে। তিনি জয়লাভও করেন। সেই সূত্রেই পার্থ-অর্পিতার গ্রেফতারের পর ঘনিষ্ঠমহলে জ্যোতিপ্রিয় বলেছিলেন, ‘‘দলকে বড় বিপর্যয়ের মুখ থেকে বাঁচিয়েছি আমি। মন্ত্রী পার্থের সঙ্গে যদি দলের কাউন্সিলরও ধরা পড়ত, তা হলে বিষয়টা আরও খারাপ হতে পারত।’’ ঘটনাচক্রে, সেই বালুই এখন ইডির হেফাজতে। নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ-অর্পিতা যেমন এখন জেলবন্দি, তেমনই দশা বালুর। রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি এখন ইডির জিম্মায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy