তাঁকে দেখলেই ‘চোর চোর’ রব উঠছে জেলের ভিতরে। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ
বিচারক তাঁকে আরও ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিতেই বৃহস্পতিবার আদালতে এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি তো কয়েদি হয়ে গেলাম!’’
গত ১৪ দিন ধরে পার্থ প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের দু’নম্বর সেলের বাসিন্দা। সূত্রের খবর, সহবন্দিদের কাছে এর মধ্যেই তিনি ‘কয়েদি’ তকমা পেয়ে গিয়েছেন। কারারক্ষীদের একাংশ জানিয়েছেন, পার্থকে দেখলেই অন্য বন্দিরা তেড়ে গালিগালাজ করছেন। ‘চোর’, ‘লম্পট’, ‘চিটিংবাজ’, ‘দুশ্চরিত্র’— এমনই সব বাছা বাছা বিশেষণ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁকে দেখলেই ‘চোর চোর’ রব উঠছে জেলের ভিতরে। কারারক্ষীদের কথায়, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, গালাগালির মাত্রাও তত বাড়ছে। উনি এখন অন্য বন্দিদের চক্ষুশূল।’’
দুপুরে সেলের বাইরে ড্রামে জল ভরে দেওয়া হয়। সেখানেই প্লাস্টিকের মগ দিয়ে স্নান সারেন পার্থ। ওই সময়ে অন্য বন্দিদের সেলে আটকে রাখা হয়। এক কারারক্ষীর কথায়, ‘‘পার্থবাবু স্নান করতে সেলের বাইরে এলেই অন্য বন্দিরা ‘চোর’, ‘লম্পট’ বলে চিৎকার শুরু করছেন। কোনও মতে দু’-তিন মগ জল মাথায় ঢেলেই উনি সেলের মধ্যে ঢুকে পড়ছেন।’’ সেখানে লোহার খাট। তার উপরে দু’টি কম্বল ও একটি সাদা তোয়ালে পাতা। সারা দিনের অধিকাংশ সময়েই সেই খাটেই মাথা নিচু করে বসে থাকেন পার্থ। মাঝে জেলের গ্রন্থাগার থেকে কিছু বই নিয়েছিলেন। আইনজীবী মারফতও কিছু বই আনিয়েছেন। আইনজীবী তাঁকে লেখার কাগজপত্র ও পেন দিয়ে গিয়েছেন। কয়েক দিন লেখালেখির চেষ্টাও করেছেন পার্থ। কিন্তু ভারী শরীর নিয়ে লোহার খাটে বসে লিখতে পারেননি। এখন অধিকাংশ সময়ে হয় শুয়ে থাকছেন, না-হলে খাটে বসে থাকছেন। প্রথম দিকে বিকেলে সেলের সামনে কিছু ক্ষণ পায়চারি করতেন। কিন্তু গালিগালাজের জেরে তাতে ইতি টেনেছেন। হাঁটাচলা প্রায় বন্ধ। ধীরে ধীরে ফুলছে পায়ের পাতা।
‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের এক রক্ষীর কথায়, ‘‘পার্থবাবু চিকিৎসকদের কাছে সপ্তাহখানেক আগে এক দিন ক্যান্টিনের আলুর চপ ও বেগুনি খাওয়ার আবদার করেছিলেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। পরে এক দিন নিজেই ক্যান্টিনে চপ-বেগুনির পাশাপাশি অন্য খাবার কিনতে গিয়েছিলেন। সে দিনও ঋষি অরবিন্দ ওয়ার্ডের বন্দিরা একযোগে ‘চোর পার্থ’, ‘চোর পার্থ’ চিৎকার শুরু করে দেন। পার্থবাবু তা শুনে তাড়াতাড়ি নিজের সেলে ফিরে আসেন। তার পরে আর ক্যান্টিনমুখো হননি। এখন শুধু দুপুরে স্নান করার সময়ে মিনিট দশেকের জন্য সেলের বাইরে আসেন। আর জেল অফিসে আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেই যাওয়া-আসার পথেও গালিবর্ষণ চলছে।’’ পার্থের সঙ্গে এক মহিলা আইনজীবী দেখা করতে আসেন। অন্য বন্দিরা তা নিয়েও তাঁকে কটূক্তি করতে ছাড়ছেন না।
কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, পার্থ যখনই সেলের বাইরে আসছেন, নিরাপত্তার কারণে ওয়ার্ডের অন্য বন্দিদের সেল থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। তাতেই ক্ষোভ বাড়ছে। ওই বন্দিদের অভিযোগ, পার্থ ‘ভিআইপি’ হিসেবে অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছেন।
জেলে প্রতিদিন সকালে ‘রোল কল’ করে বন্দিদের সেলের বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুপুরে খাওয়ার সময়ে কিছু ক্ষণ তাঁদের সেলের মধ্যে রাখা হয়। পরে ফের ছেড়ে দেওয়া হয়। বিকেলের পরে আবার ‘রোল কল’ করে সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সকালে ছেড়ে দেওয়ার পরে বন্দিরা জেলের মধ্যেই ঘুরে বেড়ান। কিন্তু এখন পার্থ সেল থেকে বেরোলেই তাঁদের আটকে রাখা হচ্ছে। তাতেই ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ছে। পার্থের উদ্দেশে অন্য বন্দিদের গালিগালাজের জেরে জেলে এখন এক অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কারারক্ষীদের একাংশের ধারণা, বন্দিদের কয়েক জন সম্ভবত পার্থের পূর্ব-পরিচিত। কারণ, কয়েক দিন আগে তাঁদের এক জন চেঁচিয়ে বলছিলেন, ‘‘ইলেকশনের সময়ে কত উল্টোপাল্টা কাজ করালি। বলেছিলি, ইলেকশনের পরে দেখা হবে। কত বার তোর বাড়িতে গেছি। দেখা তো করিসইনি, উল্টে পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিস।’’
জেলের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন কারাকর্তারাও। তাই ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডের দু’নম্বর সেলের সামনে বেড়েছে নিরাপত্তা। সিসি ক্যামেরায় চলছে নজরদারি। পার্থ এখন ‘কয়েদি নম্বর দুই’ বলে পরিচিত। কারারক্ষীরাও তাঁর বিষয়ে বলতে গিয়ে সেই নামই উল্লেখ করছেন। এক কারারক্ষী বললেন, ‘‘প্রভাবশালী লোক। সব সময়ে সরাসরি নাম নিয়ে কথা না বলাই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy