পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘প্রভাবশালী’! পার্থের জামিনের বিরোধিতায় আবার একবার এই তত্ত্ব খাড়া করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত পার্থের জামিনের মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। এর জন্য তাঁকে বৃহস্পতিবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়। শুনানি চলাকালীন ইডি দাবি করে, পার্থ রাজ্যের এক জন ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিত্ব। ইডির অভিযোগ, পার্থ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একা হাতে ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছেন। তাই তাঁর কোনও মতেই জামিন পাওয়া উচিত নয়। পার্থ যে প্রভাবশালী, সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচ যুক্তিও আদালতে দিয়েছেন ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। সেই পাঁচ যুক্তি হল—
১. গ্রেফতারির পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন পার্থ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ফোন ধরেননি। ‘প্রভাবশালী’ না হলে কেউ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করতে পারেন না বলেই যুক্তি দিয়েছে ইডি।
২. পার্থের গ্রেফতারি মেমোতে পার্থকে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় বলে উল্লেখ করা রয়েছে। তিনি যদি প্রভাবশালী না হতেন, তা হলে এমন উল্লেখ থাকত না বলে দাবি ইডির।
৩. গ্রেফতারির পর অসুস্থতার কারণে পার্থকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু আদালতে ইডি দাবি করেছে, পার্থ আদপে অসুস্থ ছিলেন না। ইডির যুক্তি, হাই কোর্টের নির্দেশে পার্থকে ভুবনেশ্বর এমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা পার্থের শরীরে অসুস্থতার কোনও ছাপ পাননি। ইডির দাবি, গ্রেফতারি এড়াতে পার্থ অসুস্থতার ‘ভান’ করেছিলেন। আর তিনি প্রভাবশালী বলেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছিলেন, যুক্তি ইডির।
৪. ‘জেল কোড’ অনুযায়ী সংশোধনাগারে কোনও বন্দির আংটি পরার অনুমতি নেই। কিন্তু পার্থ দীর্ঘ দিন জেলের মধ্যে আংটি পরেছিলেন। ইডির যুক্তি, তিনি প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছিল।
৫. ইডি আদালতে জানিয়েছে, শুনানির দিন আদালতে নিয়ে আসার সময় পার্থের জন্য পৃথক গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু অন্য বন্দিদের নিয়ে আসা হয় প্রিজ়ন ভ্যানে চাপিয়ে। পার্থের জন্য পৃথক ব্যবস্থা কেন? প্রশ্ন তুলেছে ইডি। ইডির যুক্তি, পার্থ প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই তিনি এই বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন।
আদালতে ইডির আইনজীবী অভিযোগ তোলেন, পার্থ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একা হাতে ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছেন। এই কাজে তাঁকে আরও কয়েক জন সাহায্য করেছেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি। ইডির অভিযোগ, রাজ্যের অনেক জায়গাতেই বেসরকারি স্কুল নেই। সরকারি স্কুলের উপরই নির্ভর করে থাকতে হয় পড়ুয়াদের। তাই সেই সব স্কুলে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের অর্থ স্কুলের পড়াশোনার মান নষ্ট করা। এই ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ ইডির।
এর আগে সোমবারও পার্থকে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন পার্থ। গ্রেফতারির এক বছর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বন্দিমুক্তি আন্দোলনকারীদের কথা বলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। বন্দিদশা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশও করেন তিনি। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ‘‘এক বছর বিনা বিচারে আছি। আমায় জোর করে আটকে রাখা হয়েছে।’’ ক্ষোভের সুরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এক বছর বিনা বিচারে আছি। বন্দিমুক্তি আন্দোলনকারীদের জিজ্ঞাসা করবেন। তাঁরা মুখ খুলছেন না।’’
এর পর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও আবেদন করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত থেকে বেরোনোর সময় শিক্ষায় দুর্নীতিকাণ্ডে নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেন পার্থ। এর পরেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই আমার মুক্তি। অবিলম্বে জেল থেকে বেরোতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ আবেদন করব। নির্দোষ প্রমাণিত করতে গেলে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার আমি সেটা চাই। আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ।’’
প্রসঙ্গত, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত বছরের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ২৩ জুলাই মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়। অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি উদ্ধার হয়েছিল। এর পর থেকে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি তদন্ত বিভিন্ন পথে এগিয়েছে। পার্থের বিরুদ্ধেও একের পর এক অভিযোগ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রবিবারই পার্থের গ্রেফতারির এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে পার্থের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার।
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের গ্রেফতারির পর তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল তাঁর দল তৃণমূল। দল থেকে সাসপেন্ড করার পর মন্ত্রিসভা থেকেও সরানো হয়েছে তাঁকে। তার পরও কখনওই দলের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি পার্থ। দল তাঁর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি করলেও পার্থ বার বার বলেছেন, তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
উল্লেখযোগ্য যে, এই দুর্নীতিতে জড়িত অনেকেই জেলের বাইরে রয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করেছেন পার্থ। তবে কারও নাম বলতে চাননি। অর্পিতার বাড়ি থেকে যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তা তাঁর নয় বলেও বার বার দাবি করেছেন পার্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy