তাঁদের দাবি, খুব কম টাকায় তাঁরা বছরের পর বছর স্কুলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়িয়ে যাচ্ছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। অথচ তাঁদের একটা দাবিও পূর্ণ হয়নি। তাই এ বার স্কুল বয়কটের পথে যেতে পারেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা নিযুক্ত আংশিক সময়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্য জুড়ে তাঁদের সংখ্যা প্রায় কুড়ি হাজার। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজের চাপ বাড়লেও তাঁদের কথা ভাবাই হচ্ছে না।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একদল আংশিক সময়ের শিক্ষক আছেন, যাঁরা শিক্ষা দফতর থেকে নিযুক্ত। আর এক দল আংশিক সময়ের শিক্ষক জেলা স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে নিযুক্ত। আর এক দল আংশিক সময়ের শিক্ষক অবসরের পরে নিযুক্ত। এর বাইরে প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিযুক্ত। এঁদের মাসিক বেতন স্কুলের তহবিল থেকে দেওয়া হয়। নর্থ বেঙ্গল পার্ট টাইম টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, “স্কুলগুলির তহবিলে টাকা কম। আমরা মাসে মাত্র ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে পাই। আমরা না পড়ালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বহু বিভাগ বন্ধ হয়ে যাবে। এখন ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে বলে অনেকে বলছেন। কিন্তু আমরা যদি স্কুল থেকে হাত গুটিয়ে নিই, তা হলেও স্কুলগুলির শিক্ষা ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে যাবে।’’ পশ্চিম বর্ধমানের আংশিক সময়ের শিক্ষিকা শুভ্রা ঘোষ, বাঁকুড়ার সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানাচ্ছেন, তাঁরা অনেকেই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। তা না হলে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল কি ঠিক সময়ে বেরোতে পারত?
সুশান্ত বলেন, “আমাদের দাবি, শিক্ষা দফতর থেকে বেতন দিতে হবে। নিয়োগ করতে হবে শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে। ৬০ বছর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং একটা বেতন কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।’’ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির পরে বহু স্কুলে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের স্কুলে শিক্ষক খুব কমে গিয়েছে। এই অবস্থায় ম্যানেজিং কমিটির দ্বারা নিযুক্ত আংশিক সময়ের শিক্ষক বহু স্কুলেই আছেন।’’
সুশান্ত জানান, তাঁরা তাঁদের দাবির কথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যকে জানিয়েছেন। সংসদ সভাপতি বলেন, “এই শিক্ষকদের খুবই প্রয়োজন। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নিয়োগ করে না। শিক্ষা দফতর থেকে এই শিক্ষকদের সম্পর্কে নির্দেশ এলে সেই মতো নির্দেশ পালন করব।’’ সুশান্ত জানান, তাঁদের দাবি যদি পূরণ না হলে, মে মাসে তাঁরা কলকাতায় মিছিল করবেন। স্কুল বয়কটও করতে পারেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)