প্রণব মুখোপাধ্যায়।
সে দিন ‘গ্র্যান্ড-টি’-র আয়োজন হয়েছিল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সেখানে এলেন। সকলেই শশব্যস্ত। আমার চেয়ারেই ওঁর বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেটা দেখিয়ে জানতে চাইলেন, এটা কার চেয়ার। ওঁকে বলা হল চেয়ারটি অধ্যক্ষের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অনুরোধ করলেন, চেয়ার বদলে দেওয়ার জন্য। ভাবা যায়, দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুর আসনটিকে সম্মান জানাতে ভোলেননি! এটাই শিক্ষা, পরম্পরা। যা আমি আজও ভুলিনি।
প্রণববাবু আইএ এবং বাংলা অনার্স নিয়ে বিএ পড়েছেন তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বীরভূমের সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে। সময়কাল ১৯৫২ থেকে ’৫৬। ২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হন। কলেজের প্রাক্তনী দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন, তাই তাঁকে সম্মান জানাতে কলেজে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আমি। দুর্গাপুজোর সময়ে মিরিটি গিয়েছিলাম ওঁকে আমন্ত্রণ জানাতে। বায়ুসেনার এক জন অফিসার ওঁর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। একটা চিঠি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। দেখা করার সুযোগ পেতেই ওঁর কোলে চিঠিটা দিয়েছিলাম। রাষ্ট্রপতি বলে কথা, প্রোটোকল আছে বিস্তর। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য জানার পরে প্রোটোকল বাধা হয়নি। টানা দশ মিনিট কথা বলেছিলেন। খুব আন্তরিক ভাবে সব জানতে চেয়েছিলেন। এবং সম্মতি মিলেছিল। ওই বছরই ১৯ ডিসেম্বর সংবর্ধনার দিন স্থির হয়।
নির্দিষ্ট দিনের আগে খুব যত্ন নিয়ে আমরা দু’টি অ্যালবাম তৈরি করি। তাঁর ছাত্রাবস্থায় কলেজ কী রকম দেখতে ছিল, কেমন ছিল কলেজের ছাত্রাবাস— তার ছবি ছিল। সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দু’টি অ্যালবামে সাজিয়ে দিয়েছিলাম। অবশেষে সেই দিনটা এল। রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রোটোকল মেনেই সব চলছিল। সাধারণত রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা আগে তৈরি থাকে। কিন্তু, সে দিন নিজের কলেজবেলার স্মৃতিতে ডুব দিয়েছিলেন প্রণববাবু। কোথায় কোন হস্টেলে থাকতেন, কী ভাবে কেরোসিনের বাতিতে পড়াশোনা করতেন— বলেছিলেন। তৎকালীন অধ্যক্ষ অরুণ সেন-সহ অনেকের নাম ও স্মৃতি ওঁর মুখে উঠে এসেছিল এক জন প্রাক্তনী হিসেবেই। খুব খুশি হয়েছিলেন অ্যালবাম পেয়ে।
প্রণববাবু অসুস্থ হয়েছেন শোনার পরেই মন ভীষণ খারাপ ছিল। একান্ত ভাবে চেয়েছিলাম, তিনি আরোগ্য লাভ করুন। এ ভাবে চিরঘুমের দেশে চলে যাবেন, বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সামলেছেন বিদেশ, প্রতিরক্ষার মতো মন্ত্রকও। বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। গোটা দেশ সেটা জানে। ওঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আমাদের কলেজের প্রাক্তনী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার দুর্লভ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই স্মৃতি সঙ্গী থাকবে
বাকি জীবন।
(লেখক প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy