Advertisement
E-Paper

পানিহাটির নব পুরপ্রধান, প্রশ্ন নির্যাতিতার বাবা-মায়ের

দায়িত্ব পেয়েই বিতর্কে জড়ালেন নতুন পুরপ্রধান। আর জি কর ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্যই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘উপহার’ দিলেন বলে এ দিন দাবি করলেন নির্যাতিতার পরিবার।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৬:৩২
Share
Save

পানিহাটি পুরসভার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন সোমনাথ দে। শুক্রবার বোর্ড অব কাউন্সিলর্সের বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের পাঠানো ওই নামে সম্মতি জানান পুরপ্রতিনিধিরা। সমর্থন করেন বিরোধী দলের দুই পুরপ্রতিনিধিও। আগামী সোমবার সরকারি ভাবে পুরপ্রধান হিসেবে শপথ নেবেন সোমনাথ।

তবে দায়িত্ব পেয়েই বিতর্কে জড়ালেন নতুন পুরপ্রধান। আর জি কর ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্যই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘উপহার’ দিলেন বলে এ দিন দাবি করলেন নির্যাতিতার পরিবার। তরুণী চিকিৎসকের বাবা বলেন, “শিয়ালদহ আদালতের রায়ে বিচারক স্পষ্ট বলেছেন ঘটনার দিন বিকেলে যে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে তাতে বিধায়ক নির্মল ঘোষ, প্রাক্তন কাউন্সিলর সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, কাউন্সিলর সোমনাথ দে সম্পূর্ণ ভাবে জড়িত। তারপরেও সোমনাথকে ‘প্রাইজ় পোস্টিং’ দেওয়া হল। এটা আশ্চর্যের। মানুষ সব দেখছেন।” পাশাপাশি, নির্যাতিতার মা বলেন, “আমরা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত দাবি করে টালা থানায় বসেছিলাম। তখন গ্রিন করিডর করে বিধায়ক নির্মল ঘোষ ও কাউন্সিলর সোমনাথ দে আমার মেয়ের দেহ নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছিলেন। ওঁদের উপর মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল। তা ঠিক মতো পালন করেই সোমনাথ প্রাইজ় পেলেন।”

যদিও সোমনাথের দাবি, “তরুণীর বাবা ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। সেই মতো পুরপ্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলাম ও সহযোগিতা করেছিলাম। এখন যদি এমন কথা বলেন, তা হলে তো বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো অন্যের পক্ষে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।” তিনি আরও বলেন, “পুরসভা থেকে দ্রুত সৎকারের শংসাপত্র পাওয়াতেও সহযোগিতা করা হয়েছে। আমিও চাই ন্যায়বিচার। আগামী দিনেও যদি কোনও রকম সহযোগিতা চান, নিশ্চয় করব।” অন্য দিকে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে নির্মল শুধু বলেন, “এ সব বিতর্কিত বিষয়ে কিছু বলব না।”

পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায়ের পদত্যাগ ও নতুন পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে শাসক দলের স্থানীয় স্তরে দু’টি পক্ষ তৈরি হয়েছিল। সূত্রের খবর, কোনও ব্যক্তি-পছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে সোমনাথকে পুরপ্রধান করার সিদ্ধান্ত নেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এবং দলের এই সিদ্ধান্তে যাতে শাসক দলের সমস্ত পুরপ্রতিনিধি সম্মতি জানান, সে জন্য বিধায়ককে মুখ্যমন্ত্রী হুইপ জারি করারও নির্দেশ দেন বলে খবর। সেই মতো নির্মল বোর্ড অব কাউন্সিলর্সের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে দলের পুরপ্রতিনিধিদের মুখবন্ধ খামে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো সোমনাথকেই পুরপ্রধান হিসেবে সমর্থন করতে হবে। হুইপ জারি করে বিধায়ক বেরিয়ে আসার পরে বোর্ড মিটিং শুরু করেন উপপুরপ্রধান সুভাষ চক্রবর্তী।

পানিহাটিতে মোট পুরপ্রতিনিধির সংখ্যা ৩৫। শাসক দলের প্রাক্তন পুরপ্রধান মলয় রায়-সহ আরও দু’জন বৈঠকে ছিলেন না। জানা যাচ্ছে, তৃণমূলের এক পুরপ্রতিনিধি জেলবন্দি, আর এক জন শহরের বাইরে রয়েছেন। কিন্তু মলয় থাকলেন না কেন? সোমনাথ বলেন, “মলয়দার আজ ডায়ালিসিস ছিল। তাই আসতে পারেননি। তবে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে, উনিও আমাকে সমর্থন করেছেন।”

২০১৩-তে প্রথম পুরপ্রতিনিধি হয়ে চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন সোমনাথ। ২০১৮-তে প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সন হন। ২০২২-এ ফের নতুন পুরবোর্ডের পূর্ত দফতরের চেয়ারম্যান পরিষদ সদস্য হন সোমনাথ। সম্প্রতি অমরাবতী মাঠের বড় অংশ বিক্রি নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী তাতে হস্তক্ষেপ করায় রাজ্য সরকার মাঠটি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। সূত্রের খবর, এর পরেই পুরপ্রধান বদলের চিন্তাভাবনা শুরু করেন শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাতে ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছিল স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যদিও এ দিন সোমনাথ পুরপ্রধান হওয়ার পরে তৃণমূলের পানিহাটি শহর (পূর্ব) সভাপতি তথা পুরপ্রতিনিধি সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, “দলনেত্রী তথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। সেখানে কোনও আলাদা গোষ্ঠী নেই।” সোমনাথ এ দিন বলেন, “মাঠ বাঁচাতে সরকারি ভাবে যা করার, তার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panihati municipality RG Kar Rape and Murder Case Panihati

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}