প্রতিবাদ মিছিলে শুক্রবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আর জি করের সেমিনার কক্ষে অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে দেখা গিয়েছিল। বহিরাগত হয়েও তাঁরা সেখানে কী করছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তার মধ্যেই সম্প্রতি ওই দু’জনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। সদস্য পদে ফেরানো হয়েছে অভীককে। যা নিয়ে ফের প্রতিবাদে সরব চিকিৎসকদের একাংশ।
কেন ওই দু’জনকে ফিরিয়ে আনা হল, সেই প্রশ্ন তুলে শুক্রবার মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের ডাকা মিছিলে হাঁটলেন আর জি করের নির্যাতিতার বাবা-মা। প্রশ্ন তুললেন, “প্রশাসনে কি আর কোনও লোকজন নেই এঁরা ছাড়া?” একই সঙ্গে বাবা বলেন, “৯০ দিন ধরে সন্দীপ ঘোষ জেল হেফাজতে থাকলেও তাঁর চাকরি বহাল রয়েছে। অন্য দিকে টালা থানার ওসি দু’দিনের মধ্যে সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছেন।” নির্যাতিতার বাবা-মা এ দিন আরও দাবি করেন, এই সমস্ত বিষয়ে সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলেই তাঁরা বুঝতে পারছেন। তাঁদের বক্তব্য, “এ জন্যই আমরা আবারও রাস্তায় নেমেছি। জনগণ আজও আমাদের সঙ্গে আছেন। তাই বিচার ছিনিয়ে আনবই।”
আর জি করের নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং অভিযুক্তদের মদত দেওয়ার অভিযোগে ফের রাস্তায় নেমে আন্দোলনের কথাও জানাচ্ছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। ৯ ডিসেম্বর বিকেলে আর জি করের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মোমবাতি মিছিলের ডাক দিয়েছে ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, “৯ অগস্ট আর জি করের যে জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকেই সোমবার মিছিল বার করব।”
অভীক ও বিরূপাক্ষের মেডিক্যাল কাউন্সিলে প্রত্যাবর্তনের প্রতিবাদে প্রথম অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছিল ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ এবং ‘অভয়া মঞ্চ’। সেই সময়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের ফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছিল যে, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আবার রাস্তায় নামবেন। এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ কাউন্সিলের সামনে থেকে শুরু হয় মিছিল। সামনে চারটি সফ্ট টয়-এ মধ্যে সন্দীপ, অভীক, বিরূপাক্ষ এবং আশিস পান্ডের ছবি লাগানো হয়েছিল।
কাউন্সিল থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত বেশ খানিকটা পথ মিছিলের সামনে ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। জয়নগরে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসির নির্দেশের প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন, “তদন্ত ঠিক মতো হলে আমার মেয়ের ক্ষেত্রেও দোষীরা কঠিনতম শাস্তি পাবে। পুলিশ যে প্রথম থেকে তদন্তে গাফিলতি করেছে, সেটা সকলেই জানেন। তাই সিবিআই সময় চেয়েছে, ধীরে ধীরে নিশ্চয় সব আসামিকে সামনে আনবে। আমাদের মেয়ের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের বদলে, পুলিশ তা লোপাটে ব্যস্ত।” ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিধানসভায় অপরাজিতা বিল এনেছে রাজ্য। যদিও সেই বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, “বিল আনলাম, আর অন্য দিকে অপরাধীদের প্রশ্রয় দিলাম, তা হলে কী করে হবে? বরং সরকারকে এই বিষয়ে কড়া বার্তা দিতে হবে।”
মিছিলে হাঁটার সময়েই ফ্রন্টের সদস্য দেবাশিস হালদার বলেন, “ছ’টি উপনির্বাচনে শাসক দলের জয়ের পরে আমাদের আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।” এ দিন প্রথমে স্বাস্থ্য ভবন থেকে একশো মিটার দূরে হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অফিসের সামনে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। জানানো হয়, জুনিয়র চিকিৎসকদের পাঁচ জনের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য ভবনে যেতে পারবে। রাজি হননি ফ্রন্টের সদস্যেরা। পরে কুড়ি জনকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব মৌমিতা গোদারা-সহ আরও কয়েক জন কর্তার সঙ্গে কথা বলার পরে বাইরে এসে ফ্রন্টের সদস্যেরা দাবি করেন, তাঁরা কোনও প্রশ্নের সদুত্তর পাননি। সন্দীপ ও আশিসের বিরুদ্ধে চার্জশিটে কেন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, তা জানতে চাইলে, বিষয়টি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করেছেন। ফ্রন্ট সদস্যদের কথায়, “রাজ্যপাল না স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কে ছাড়পত্র দিচ্ছেন না তারও সদুত্তর মেলেনি।” তবে ফ্রন্টের সদস্যেরা জানান, অভীক ও বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে এবং তদন্ত কমিটি সেই বিষয়ে প্রমাণ পেয়ে কিছু সুপারিশ করেছে।
দেবাশিস বলেন, “অভীকের বিরুদ্ধে ৩২টি অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট দেখাই। স্বাস্থ্যকর্তারা জানতে চান, এই গোপন রিপোর্ট কী ভাবে বাইরে এল? তবে বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানানো হয়েছে। ওই দু’জনের বিষয়েই তদন্তের রিপোর্টের বাস্তবায়নের কাজও চলছে বলে দাবি করা হয়েছে।”
দিন কয়েক আগে সিনিয়র রেসিডেন্টদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেখানে বলা হয়েছে, তিন বছরের বন্ড পোস্টিংয়ে যাঁরা অন্যত্র বদলি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে যাননি, সেই সমস্ত চিকিৎসককে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। দেবাশিস বলেন, “সিনিয়র রেসিডেন্টদের বদলির পরে ছাড়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাঁদের শো-কজ় না করে, চিকিৎসকদের কেন জরিমানা করা হবে? এই বক্তব্যের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তারা সহমত, বিষয়টি আইনি মাধ্যমে জানাতে বলেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy