ছেঁড়া পাতায় আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় মেয়েটি জানিয়েছিল তার মনের কথা। প্রতীকী ছবি।
কেন মারেন বাবা-মা?
প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। মাথায় হাত বুলিয়ে শিক্ষিকা বললেন, ‘‘ভয় নেই, কেউ তোমাকে বকবে না।’’ মেয়েটি এ বার বলে, ‘‘খেলাধুলো করে বাড়ি ফিরতে সন্ধে হয়ে যায়।’’
শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের কথা শুনে চলো। দেখবে, কেউ রাগ করবেন না।’’
ছেঁড়া পাতায় আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় এই মেয়েটিই জানিয়েছিল তার মনের কথা। সামান্য দু’-চার বাক্যে ফুটে উঠেছিল যন্ত্রণা। এই ছেলেমেয়েদের নিয়েই কাউন্সেলিং শুরু করেছে স্কুল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের বকুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে কাউন্সেলিং। প্রধান শিক্ষক নিখিলকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘ওরা চিরকুট লিখে মনের কথা জানিয়েছিল। ড্রপবক্স খুলে ডজনখানেক এমন লেখা পেয়ে আমরা হতবাক। এত কষ্ট জমে আছে ছোট ছেলেমেয়েগুলোর মনের কোণে, ভাবতেই পারিনি। ওরা তো আমাদের সন্তানের মতো। চেষ্টা করছি, যাতে সমস্যা মেটানো যায়।’’
স্কুল সূত্রের খবর, এক ছাত্র লিখে জানিয়েছিল, একটা নতুন পেন্সিল বক্স পেতে বড় সাধ তার। কিন্তু বাবা কিনে দিচ্ছেন না। শিক্ষকেরা তাকে জানিয়েছেন, পেন্সিল বক্স তাঁরাই কিনে দেবেন। ঘাড় নেড়ে ছেলেটি জানিয়েছে, সে খুশি।
এখনও পর্যন্ত আট জনের সঙ্গে কথা বলে তাদের ব্যথার কিছুটা উপশম করা গিয়েছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক নিখিলকুমার সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘ওদের মনের কষ্ট দূর করবই।’’ সহকারী শিক্ষিকা রুমা ঘোষও কথা বলতে শুরু করেছেন এই সব ছেলেমেয়ের সঙ্গে। কাছে টেনে নিয়ে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে জানতে চেয়েছেন সমস্যার কথা।
কয়েক জন অভিভাবকের সঙ্গেও স্কুল কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, ছেলেমেয়ের মনের কথা তাঁরাও বুঝতে পারেননি। এ বার আরও যত্ন নেবেন।
মথুরাপুর দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক স্নেহজিৎ দে বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে এ বার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমস্ত ছেলেমেয়ের পাশে থাকতে হবে এ ভাবে। তাদের কথা জানতে হবে। সমস্যা থাকলে দূর করতে হবে।’’ অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা দরকার বলে মনে করেন স্কুল পরিদর্শক। তিনি নিজেও এমন বৈঠকে থাকবেন বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy