—প্রতীকী ছবি।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নিয়েই পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করলেন রাজীব সিংহ। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের নতুন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দিলেন, ঠিক এক মাসের মাথায়, অর্থাৎ আগামী ৮ জুলাই, শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে। ২০১৮ সালের মতো এ বারও এক দফাতেই পঞ্চায়েত ভোট হবে রাজ্যে। কিন্তু সর্বদল বৈঠক না ডেকে এ ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা নিয়ে শাসকদল ও রাজ্য প্রশাসনকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ বলে টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হলেও তা রাজ্য পুলিশ না কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোটে তাঁর ভরসা নেই! বিরোধীদের পাল্টা কটাক্ষ করেছে শাসকদলও। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোটের প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘মামাবাড়ির আবদার!’’
সূচি অনুযায়ী মে মাস নাগাদ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নবজোয়ার যাত্রা চলাকালীন জানান, ওই কর্মসূচি শেষ হলে পঞ্চায়েত ভোট হবে। এর মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ ফাঁকা থাকায় তার প্রস্তুতি নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে সৌরভ দাসের কার্যকাল শেষ হয় গত ২৮ মে। তার পর নতুন কমিশনার বাছাই নিয়ে টানাপড়েনের জেরে পদটি ফাঁকাই পড়ে ছিল। ওই পদে রাজ্য সরকার মনোনীত রাজীবের নামে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ছাড়পত্র না দেওয়ায় জটিলতা বাড়ছিল। বাড়ছিল পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তাও। নতুন কমিশনার হিসাবে রাজীবের নাম প্রস্তাব করে গত ১৮ মে রাজভবনে রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য ফাইল পাঠিয়েছিল নবান্ন। একক নামে ছাড়পত্র দিতে আপত্তি আরও একটি নাম চেয়ে পাঠায় রাজভবন। নবান্নও দ্বিতীয় নাম হিসাবে রাজ্যে কর্মরত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার অফিসার অজিতরঞ্জন বর্ধনের নাম পাঠায়। তার পরেও কমিশনার বেছে নিচ্ছিল না রাজভবন। দিন কুড়ির সেই টানাপড়েনের পর বুধবার প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীবের নামেই সিলমোহর দেন রাজ্যপাল বোস। এর পর বৃহস্পতিবারই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা করলেন রাজীব।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা
রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। গণনা ১১ জুলাই। ৯ জুন অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হবে। চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। ২০ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। রাজীব জানান, ভোট ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই রাজ্যে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়ে গিয়েছে। এ বারের নির্বাচনে জেলা পরিষদের ৯২৮টি, ৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৭৩০টি, ৩৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ হাজার ২৮৩টি কেন্দ্রে ভোট হবে। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে ত্রিস্তর নয়, দ্বিস্তরীয় ভোট হবে।
ভোটের দায়িত্বে কারা
রাজ্য পুলিশ না কেন্দ্রীয় বাহিনী, কাকে দিয়ে ভোট করানো হবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই তরজা চলছে। ভোটের দিন ঘোষণা হলেও তা নিয়ে জল্পনা জিইয়েই থাকল। সাংবাদিক বৈঠকে রাজীব জানান, এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের উপরেই আস্থা রাখা উচিত। তবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখা উচিত। আমাদের উপর আস্থা রাখুন। প্রস্তুতিতে কোনও গাফিলতি থাকবে না। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বলব আস্থা রাখতে।’’ পঞ্চায়েতের মনোনয়ন অনলাইনে জমা দেওয়া নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিশন জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে ভাবা যাবে।
ভোট ঘোষণা নিয়ে শুভেন্দু
ভোট ঘোষণা নিয়ে সর্বদল বৈঠক না ডেকেই ঘোষণা নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘সর্বদল বৈঠক না ডেকেই ভোট ঘোষণা! এটা বাংলায় গণতন্ত্রের হত্যা। এই প্রথম একতরফা ভাবে ভোট ঘোষণা করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। পঞ্চায়েত ভোটে কারও প্রাণ গেলে দায়ী থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী এবং কমিশনার।’’
কটাক্ষ অন্য বিরোধীদেরও
রাজ্য পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের বিপক্ষে সব বিরোধীরাই। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ দিয়ে এই নির্বাচন করা সম্ভব নয়। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে এই নির্বাচনে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন আছে।’’ অধীর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখা সম্ভব নয়।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘৩ হাজার পুলিশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই কাগজের ব্যালটবাক্স রক্ষা করতে পারছে না। তারা এত বড় নির্বাচন এক দফায় করে দেবে?’’
পাল্টা তোপ শাসকদলের
কুণাল বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় যখন হচ্ছে, এখানে ব্যতিক্রম হবে কেন? কোনও আইনে নেই যে, সর্বদল বৈঠক করতেই হবে। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন আসবে? এটা কি মামারবাড়ির আবদার?’’ তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘যে স্টুডেন্ট সারা বছর পড়াশোনা করে, সেই স্টুডেন্টকে ভাবতে হয় না যে, পরীক্ষার তারিখ কবে ঘোষণা করা হবে। বা সেই স্টুডেন্টকে ভাবতে হয় না, আমি পরীক্ষায় পাশ করব না ফেল করব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy