শেষ-শ্রদ্ধা: লঞ্চের মধ্যেই শোকজ্ঞাপন। গদখালি থেকে রাঙাবেলিয়া যাওয়ার পথে। নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবনের সমস্যা এবং সম্ভাবনাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার প্রয়াস ছিল তাঁর দীর্ঘ বছরের। সে চেষ্টায় সফলও হয়েছেন নানা ভাবে। শেষমেশ চুরাশি বছর বয়সে চলে গেলেন পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত তুষার কাঞ্জিলাল। জাতীয় শিক্ষকের সম্মানও পেয়েছেন। বুধবার কলকাতার হাইল্যান্ড পার্কে ছোট মেয়ে তানিয়া দাসের বাসভবনে সকাল ৭টা নাগাদ প্রয়াত হন তিনি।
জীবনের পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় সুন্দরবনের মানুষ, প্রকৃতি আর ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের জন্য পরিশ্রম করেছেন মানুষটি। ১৯৬৭ সালের শুরু থেকে পাকাপাকি ভাবে সুন্দরবনে থাকতে শুরু করেন। তাঁর হাত ধরে বহু বদল এসেছে সুন্দরবনের বহু মানুষের জীবনে। কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের ছোট্ট দ্বীপ রাঙাবেলিয়াকেই নিজের ঘর হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
কেবল সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষা বা তার সংরক্ষণ নয়, এই এলাকার মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা খুঁজে বের করে তার সমাধান করাই ছিল মানুষটির অন্যতম লক্ষ্য। তুষার প্রথম জীবনে বাঘাযতীন বয়েজ হাইস্কুলে চাকরি করলেও পড়ে সুন্দরবনের রাঙাবেলিয়া হাইস্কুলে চলে আসেন। সেখানেই দীর্ঘ দিন প্রধান শিক্ষকতা করেছেন। চাকরি জীবন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন ছুটে গিয়েছেন সুন্দরবন সম্পর্কে আলোচনায় যোগদান করতে, তেমনই দেশের বাইরেও গিয়েছেন বাদাবনের মানুষের সমস্যা তুলে ধরতে।
চাকরি থেকে অবসরের পরে রাঙাবেলিয়া হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। সেখানকার মানুষের উন্নয়নই হয়ে ওঠে একমাত্র চিন্তা। গড়ে তোলেন ‘টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট’। গত কয়েক দশক ধরে আধুনিক সভ্যতা ও সুন্দরবনের মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজ করে গিয়েছেন নিরলস ভাবে।
১৯৯৭ সালে স্ত্রী বীণার জীবনাবসানের পরে রাঙাবেলিয়ার যে শ্মশানে শেষকৃত্য হয়েছিল, সেখানেই বুধবার রাতে তুষারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পরিবার সূত্রের খবর, এ রকমই ছিল তুষারের ইচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় গদখালিতে এসে পৌঁছয় দেহ, সেখান থেকে লঞ্চে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাঙাবেলিয়ায়। হাজার হাজার সুন্দরবনবাসী তাঁদের প্রিয় মানুষটিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন।
গত বছর মার্চ মাস থেকে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। বেশ কিছু দিন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে ছুটি পেয়ে শেষের ক’টা মাস কাটিয়েছেন ছোট মেয়ের বাড়িতে। তুষারের বড় মেয়ে তনিমা দত্ত কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘আমাদের ঘরের কোনও দেওয়াল ছিল না। সুন্দরবনের সমস্ত মানুষকে নিয়েই ছিল আমাদের পরিবার। ছোট থেকেই বাবা-মাকে দেখেছি, সুন্দরবনের মানুষের পাশে থাকতে। বাবার মৃত্যুতে শুধু আমরাই পিতৃহীন হলাম না, গোটা সুন্দরবন পিতৃহীন হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy