পাঁচলা উপপ্রধানের স্বামী তাঁর ঘরের ভাঙা অংশ দেখাচ্ছেন। ছবি: সুব্রত জানা
দুধে জল আছে, অনেকেই মানছেন। এ বার রাজ্যের একটি পঞ্চায়েত দাবি করল, তাদের এলাকায় অন্তত ৮০ ভাগ জল। অর্থাৎ, দুধে জল নয়, জলে দুধ!
আমপানের ক্ষতিপূরণ তালিকায় ভুয়ো নাম নিয়ে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসককে লেখা তৃণমূল পরিচালিত হাওড়ার পাঁচলা পঞ্চায়েতের প্রধান মুজিবর রহমানের একটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েতের প্যাডে মুজিবর অভিযোগ করেছেন, ‘তালিকায় ৮০ শতাংশ এমন নাম আছে, যাঁরা বিত্তশালী এবং কোনও ভাবেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হননি’।
আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মূলত পঞ্চায়েতই তৈরি করছে। কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতিও। রাজ্যের অধিকাংশ পঞ্চায়েত এবং সমিতিই এখন তৃণমূলের দখলে। ফলে, তালিকায় পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা এবং নেতা-ঘনিষ্ঠদের জায়গা হয়েছে বলে বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছে।
পাঁচলা পঞ্চায়েতের প্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, তালিকার অধিকাংশ নাম পঞ্চায়েত থেকে পাঠানোই হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি, তালিকা নিয়ে তদন্ত হোক। মোট ১১৭ জনের নাম ক্ষতিপূরণ-প্রাপকের তালিকায় রয়েছে। এমন অনেক নাম আছে, যাঁরা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য, পদাধিকারী। যাঁদের কোনও ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়াও আছেন বহু ধনী মানুষ। যাঁদের পাকা বাড়ি আছে।’’ পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল জলিলের দাবি, ‘‘পাঁচলা পঞ্চায়েতের তালিকা তৈরিতে সমিতির কোনও হাত নেই।’’
জেলাশাসককে লেখা পাঁচলার পঞ্চায়েত প্রধানের ওই চিঠি।
তা হলে তালিকা বানাল কে?
বিডিও এষা ঘোষ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে পাঠানো নাম ছাড়াও অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবেও ব্লক অফিসে আবেদন করেছিলেন। তার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হয়।’’ এর পিছনে দলের এক প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে বলে প্রধানের অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, হাওড়া জুড়ে বিডিওদের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স তৈরি করে তালিকায় থাকা প্রতিটি নাম ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করি, তেমন কিছুই হবে না।’’
আরও পড়ুন: লাদাখের পি পি ১৪-র কাছে ফের ভারতীয় এলাকা দখল করল চিন
পাঁচলাতেও তা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন কারও নাম তালিকায় থাকলে তা বাদ দেওয়া হচ্ছে।
পাঁচলা পঞ্চায়েতের তালিকায় উপপ্রধান কনক নাগের স্বামী সঞ্জয় এবং খুড়শ্বশুর নির্মলের নাম উঠেছে। নির্মল এক বছর আগেই বাংলা আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি পেয়েছেন। সঞ্জয়েরও পাকা বাড়ি রয়েছে। উপপ্রধানের দাবি, আমপানে তাঁদের বাড়িরও ক্ষতি হয়েছে। কার্নিস ভেঙে গিয়েছে। ছাদে কিছুটা ফাটল ধরেছে। শুক্রবার সে সব ‘ক্ষতি’ ঘুরিয়ে দেখান সঞ্জয়। উপপ্রধানের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘উপপ্রধান বলে কি আমরা ক্ষতিপূরণ পেতে পারি না?’’
আরও পড়ুন: হাওড়ায় বান্ধবীর বাড়িতে এসে রহস্যজনক ভাবে খুন ব্যবসায়ী
নির্মলবাবুর নতুন বাড়ির পাশে একটি ভগ্নপ্রায় পুরনো টালির চালের বাড়ি রয়েছে। তবে, সেখানে তিনি থাকেন না। ঝড়ে সেই বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপপ্রধানের স্বামী। এলাকাবাসীর পাল্টা দাবি, পুরনো বাড়িটি ঝড়ের অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছে।
ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি উপপ্রধানের বাড়ির এমন ক্ষতি হয়নি যাতে তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন। শাসকদলের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছামতো তালিকা বানিয়েছেন।’’
হাওড়া জেলা (সদর) তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘পাঁচলা পঞ্চায়েতের তালিকা নিয়ে অভিযোগ পাইনি। কারও বিরুদ্ধে ভুয়ো তালিকা তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy