তৃণমূল কর্মীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
শনিবারের ভোটগ্রহণ পর্বে প্রবল হিংসার পরে বিরোধীদের একাংশ অভিযোগ তুলেছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিই অশান্তির অনুঘটক হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের গণনা পর্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও জেলায় জেলায় গন্ডগোল অব্যাহত।
প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো গেলেও লাঠালাঠি, বোমাবাজি এমনকি, তিরধনুক নিয়ে হামলায় ঘটনা ঘটেছে শনিবার। বিভিন্ন গণনাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে বিরোধীরা বাধার মুখে পড়েছেন। গণনায় অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় শান্তিরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে আক্ষরিক অর্থেই ‘ঘাড় ধরে’ বাইরে বার করে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীকে। অভিযোগ শাসকদলের জয় পথ প্রশস্ত করতেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে।
এমনকী, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে গণনাকেন্দ্রের ভিতর থেকে কংগ্রেস প্রার্থীকে গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত প্রার্থীর কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছেন ওই প্রার্থী। গণনাকেন্দ্র থেকে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের মেরে বার করার অভিযোগও উঠেছে ভূরি ভূরি।
উত্তর ২৪ পরগনায় গণনার আগে বিরোধী প্রার্থীকে অপহরণ, পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে মেরে বিরোধী প্রার্থীর পা ভেঙে দেওয়া এমনকি, ওই জেলার কালনায় সিপিএমের সদ্য জয়ী মহিলা প্রার্থীর শিশুসন্তানকে অপহরণ করে গণনাকেন্দ্রেই তাঁকে শাসকদলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বস্তুত, সোমবার সকাল থেকেই ধারাবাহিক ভাবে ঘটে চলেছে এমন ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’!
শাসকদলের প্রার্থীদের হারের মুখে ‘অভিনব প্রত্যাঘাতের’ নজিরও দেখেছে সোমবারের গণনাপর্ব। কোচবিহারের গণনার মাঝেই পিছিয়ে থাকা তৃণমূল প্রার্থী ব্যালেটের তাড়ায় জল ঢেলে কুচি কুচি করেন বলেন অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনার ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতে পিছিয়ে থাকা তৃণমূল প্রার্থী ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে চিবিয়ে ‘খেয়ে’ ফেলেন বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় গণনা চলাকালীন বোমাবাজিতে ঝরেছে রক্ত। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে শাসকদলের বিজয় মিছিল থেকে দলেরই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের নিশানা করে ছররা গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। হিংসার এই আবহেই মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত গণনার কাজ প্রায় অর্ধেক এগিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিরোধীদের পিছনে ফেলে অনেক এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে তিরধনুক
সোমবার গণনা শুরুর পরেই তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা বিডিও অফিস সংলগ্ন ভোট গণনাকেন্দ্রে। তিরধনুক নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম। সংঘর্ষে কয়েক জন জখম হয়েছেন। বেশ কয়েকটি বাইক এবং স্কুটিতে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনাস্থলে কাঁকসা থানার আইসির নেতৃত্বে পুলিশের বিশাল বাহিনী পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
বিজেপি প্রার্থীকে হিঁচড়ে বার পুলিশের
ভোটের দিন নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। গণনার দিন অনেক জায়গায় অতি সক্রিয়তার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। ব্যারাকপুরে বিজেপি প্রার্থীকেই মেরে, হিঁচড়ে গণনাকেন্দ্র থেকে বার করে দিতে দেখা গেল কয়েক জন পুলিশকর্মীকে। মামুদপুর পঞ্চায়েতের ওই বিজেপি প্রার্থী বরুণ সর্দার বলেন, ‘‘ব্যালট পেপারে প্রিসাইডিং অফিসারের সই থাকার কথা। তা না থাকায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের মার জুটল।’
পুলিসের সঙ্গে বচসা, অসুস্থ বিজেপির সাংসদ
গণনাকেন্দ্রের সামনে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। গরমে হিটস্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মঙ্গলবার সকালে ফুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণনাকেন্দ্রে যান সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, সেখানে ঢুকতে পুলিশ তাঁকে বাধা দেন। এই সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় জগন্নাথের। সাংসদ জানিয়েছেন, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে গণনাকেন্দ্রে ধস্তাধস্তির ফলে নীচে পড়ে যান তিনি। তার পরেই অসুস্থবোধ করতে শুরু করেন সাংসদ। সঙ্গে সঙ্গে ফুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।
ব্যালটের তাড়া নিয়ে দৌড় প্রার্থীর
গণনার সময় ব্যালট পেপারের বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে পালাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন তৃণমূল প্রার্থী। বিরোধীদের অভিযোগ, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের পাঁচরা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী রূপসোনা মণ্ডলের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ব্যালট পেপার। অভিযুক্ত তৃণমূল প্রার্থীকে জামালপুর থানার পুলিশকর্মীদের হাতে তুলে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
‘জয়ী’ প্রার্থীকে ধাক্কা মেরে বার
সিপিএমের জয়ী প্রার্থীকে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। মেমারম- ব্লকের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮০ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী সনকা ক্ষেত্রপালের দাবি, তিনি গণনায় ৫৩ ভোটে জয়ী হন। পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী। জয়ের পর তৃণমূলের লোকেরা তাঁর হাত থেকে শংসাপত্র কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। পুলিশ থাকলেও সাহায্য করেনি বলে দাবি সনকার। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল।
গণনার আগেই গ্রেফতার বিরোধী প্রার্থী
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে কলাগ্রামের উচাহার বুথে কংগ্রেস প্রার্থী জব্বর মল্লিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ধৃতকে মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছে। যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা মেদিনীপুর পুরসভার কাউন্সিলর মোহাম্মদ সইফুল বলেন, ‘‘ওই প্রার্থী গণনাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে।’’ পুলিশের অবশ্য দাবি, রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার। ভোটের দিন উচাহারে তৃণমূল-কংগ্রেসের সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন জখম হয়েছিলেন। পুলিশের দাবি, গোলমালে অভিযুক্ত ছিলেন ওই কংগ্রেস প্রার্থী। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগে কেশপুরে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
‘আক্রান্ত’ আইএসএফ প্রার্থী
উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে হাবড়া-২ ব্লকের বেড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আইএসএফ প্রার্থী ইসরাইল মণ্ডল এবং তাঁর এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার শাসকদলের।
বোমাবাজিতে জখম তৃণমূল প্রার্থীর পুত্র
গণনার দিন উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় বোমাবাজিতে জখম হলেন তৃণমূল প্রার্থীর পুত্র। জখম যুবকের মা এবং বাবা— দু’জনই শাসকদলের প্রার্থী। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী তথা বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ এবং ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫৫ নম্বর পার্ট-এ তৃণমূলের প্রার্থীর উমা ঘোষের পুত্র জখম হয়েছেন। বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।
তৃণমূলের দফতরে ভাঙচুর
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের দক্ষিণ গাজিপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল আইএসএফ এবং জমি রক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে। চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
লাঠি চালাল কেন্দ্রীয় বাহিনী
পঞ্চায়েত সমিতির ভোটগণনার সময় উত্তেজনা ছড়াল পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জে। রানিগঞ্জ গার্লস কলেজে গণনা চলাকালীন তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে বচসা। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। লাঠির ঘায়ে জখম হয়েছেন বেশ কয়েক জন। তৃণমূল নেতা সৌমিত্র বন্দোপাধ্যায়ের মাথা ফেটেছে বলে দাবি।
ব্যালট পেপার খেলেন তৃণমূল প্রার্থী!
চার ভোটে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদার। সেই সময়ই ব্যালট কাগজ খেয়ে ফেললেন তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি। মঙ্গলবার এমন কাণ্ডই ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের ৩১ নম্বর বুথে।
অবস্থানে বিজেপির সুকান্ত
দক্ষিণ দিনাজপুরে জেলাশাসকের দফরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই প্রার্থী মুক্তি মার্ডি ও স্বপ্না পাহানকে প্রথমে জয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে তাঁরা পরাজিত হয়েছেন বলে জানানো হয়। গণনায় কারচুপি হচ্ছে, এই অভিযোগে জেলাশাসকের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন সুকান্ত।
গণনাকেন্দ্র ভাঙচুর
সিপিএম প্রার্থীদের মারধর করে গণনাকেন্দ্র থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল হাওড়ার সাঁকরাইলে। বাইরে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রার্থীরা। ঘটনাটি হাওড়া সাঁকরাইলের। গণনাকেন্দ্রের ভিতরে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছে বিজেপিও। তবে অভিযোগ খারিজ করেছে শাসকদল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy