Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Test Paper for Secondary Students

গৃহশিক্ষকদের টেস্ট পেপার এল বাজারে, মাধ্যমিকের আগের টেস্টে পড়ুয়াদের ‘দিশারী’ প্রশ্ন এবং উত্তরে

নভেম্বরের শেষ দিকে রাজ্যের স্কুলে স্কুলে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই প্রশ্নপত্রের সংকলন প্রকাশ করলেন গৃহশিক্ষকরা। প্রথম বার এমন উদ্যোগ নিলেন তাঁরা। তার কারণ অনেক।

টেস্টের আগেই টেস্ট পেপার।

টেস্টের আগেই টেস্ট পেপার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০০
Share: Save:

সমাজ যে চোখেই দেখুক, সরকারের চোখে ওঁদের পরিচয় ‘রাজমিস্ত্রি’র মতো। নিজেকে ‘রাজমিস্ত্রি’ ভাবতে অবশ্য খারাপ লাগে না তন্ময় জানার। এমএ পাশ করার পরে চাকরি না পেলেও নিজের পাড়া ছাড়িয়েও বিভিন্ন এলাকায় ‘অঙ্কের মাস্টারমশাই’ হিসাবেই পরিচয় হিন্দমোটরের যুবক তন্ময়ের। নিজের বাড়িতে সপ্তাহে তিন দিন আর বাকি চার দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়ান তিনি। অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ‘ইশ্রম’ কার্ডও রয়েছে তন্ময়ের। তার জন্য কিছু সুযোগসুবিধাও পাওয়ার কথা তাঁর। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক’ তালিকায় এখনও জায়গা পাননি তন্ময়ের মতো গৃহশিক্ষকেরা।

অংসগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের তালিকায় অনেক ক্ষেত্র থাকলেও সবার আগে মনে আসে রাজমিস্ত্রিদের কথা। সেই হিসাবে গৃহশিক্ষকরাও কেন্দ্রীয় সরকারের খাতায় রাজমিস্ত্রিরই সমান। তন্ময় অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা তো মিস্ত্রিই। কম মেধার ছাত্রদের নির্মাণের কাজ করি। স্কুলে যতই পড়ানো হোক, আমরা না থাকলে ভাল ফল যে করা যায় না, সেটা কিন্তু সবাই জানে।’’

তন্ময়দের একটি সংগঠনও রয়েছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতি’ নামে সেই সংগঠনের সদস্যের সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি। এ বার সেই সংগঠনই একটি নতুন কাজ করেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘দিশারী’ নামে টেস্ট পেপার। হাত মিলিয়েছে কলকাতার একটি নামী প্রকাশনা সংস্থা।

স্কুলশিক্ষকদের বামপন্থী সংগঠন ‘এবিটিএ’ একটা সময় পর্যন্ত টেস্ট পেপারের ব্যাপারে সকলের চেয়ে এগিয়ে ছিল। এখনও এবিটিএ ‘টেস্ট পেপার’ প্রকাশ করে। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা আর আগের মতো নেই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পড়ুয়াদের বিনামূল্যে সেটি দেয় মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে। মাধ্যমিকে বসার যোগ্যতা নির্ধারণের টেস্ট পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর। তবে তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যায়নি গৃহশিক্ষকদের তৈরি টেস্ট পেপার ‘দিশারী’।

‘পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতি’-র রাজ্য সভাপতি হীরালাল মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা চেয়েছি পরীক্ষার্থীরা মাধ্যমিকের আগে টেস্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার দিশা পাক। সে জন্যই আমরা টেস্ট পরীক্ষার মাস দু’য়েক আগেই বই প্রকাশ করে দিয়েছি।’’ একটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২০২৪ সালের জন্য ‘মাধ্যমিক দিশারী’ প্রকাশ করা হয়েছে। হীরালালের বক্তব্য, ‘‘আগামী বার থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্যও একই রকম বই বার করার কথা ভাবছি।’’ তাঁদের প্রশ্নপত্রের উপর কি পড়ুয়া বা অভিভাবকরা ভরসা করতে পারবেন? হীরালালের জবাব, ‘‘বেশি ভরসা করবেন। করেনও তো। নামী নামী স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর পরেও অভিভাবকরা কিন্তু আমাদের উপরেই বেশি ভরসা করেন। সরকারি তো বটেই, বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রেও। আসলে স্কুলের শিক্ষকদের থেকে গৃহশিক্ষকদের উপরেই সকলের বেশি ভরসা।’’

পুজোর ছুটির পরে পরেই রাজ্যে টেস্ট পরীক্ষা হয়। গত বছর হয়েছিল নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। ‘পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতি’-র বই সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই বাজারে এসে গিয়েছে। সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত গৃহশিক্ষক শ্যমল সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করেছি। সাতটি বিষয়ের প্রতিটির ২৫ থেকে ৩০টি প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন সংগঠনের শিক্ষকেরা। ছোট প্রশ্নগুলির উত্তরও বইয়ের শেষে দেওয়া হয়েছে। অঙ্কের ক্ষেত্রে সব উত্তরই দেওয়া রয়েছে। বড় প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হয়নি। কারণ, তাতে সবাই একই রকম লিখবে। আমরা চাই, স্কুলের বই থেকে পড়ুয়ারা নিজেরা সেগুলি লিখুক। গৃহশিক্ষকদের সাহায্য নিক।’’

মোট ৭৬০ পাতার বইয়ে টেস্ট পরীক্ষা এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার ‘সাজেশন’ও দেওয়া রয়েছে। শ্যামল বলেন, ‘‘আমরা চাই না ছেলেমেয়েরা শুধু পাশ করুক বা ভাল নম্বর পাক। আমরা চাই ওরা আগে শিখুক। তাই সাজেশন দেওয়া হলেও আমরা গোটা বিষয়টা পড়ে পড়ুয়ারা যাতে নিজেরাই উত্তর লিখতে পারে, সে বিষয়ে জোর দিয়েছি।’’ সংগঠনের দাবি, বাজারে এই ধরনের যত বই রয়েছে, তার তুলনায় দাম কম রাখাই ছিল চ্যালেঞ্জ। তবে প্রকাশককে রাজি করানো গিয়েছিল। সংগঠন বা গৃহশিক্ষকেরা অবশ্য এই বই বিক্রির লভ্যাংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হীরালাল।

তবে গৃহশিক্ষকদের সুযোগসুবিধা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে হীরালালের। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেওয়ায় দুর্ঘটনা বিমা থেকে ৬০ বছর বয়স হলে পেনশন পাওয়ার মতো কিছু সুবিধা মিলবে। তবে রাজ্য এখনও সেই স্বীকৃতি না দেওয়ায় বাংলার প্রকল্পগুলির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।’’ হীরালালের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতির সময় অন্যান্য অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা যে সব সুবিধা পেয়েছিলেন, গৃহশিক্ষকরা তা পাননি। স্বীকৃতির দাবিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের শ্রম দফতরের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেছেন। হীরালাল বলেন, ‘‘গত জুন মাসেই আমরা শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে একটি চিঠি দিয়েছি। তিনি দফতরে ছিলেন না। তবুও আমরা চিঠি দিয়ে এসেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Private Tutors Test Paper Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE