Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
CPM

লক্ষ্মীর ভান্ডারকে ‘উৎকোচ’ বলা ভুল ছিল, পর্যালোচনা দলিলে কবুল সিপিএমের, সাংগঠনিক দৈন্যেরও উল্লেখ

সিপিএমের নথিতে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য কমিটির প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিভিন্ন রাজ্যের ফলাফল সম্পর্কে পৃথক পৃথক ভাবে পর্যালোচনা করেছে।

organisational failure mentioned in cpms election review doctument

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ২২:০২
Share: Save:

নির্বাচনী বিপর্যয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বঙ্গ সিপিএম। একই সঙ্গে ‘ভুল’-এরও। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের একটি অংশ তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পকে বিদ্রুপ করেছিল সমাজমাধ্যমে। দলের প্রাথমিক পর্যালোচনার দলিলে সেই ভুলের কথা কবুল করল সিপিএম।

সিপিএমের নথিতে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য কমিটির প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিভিন্ন রাজ্যের ফলাফল সম্পর্কে পৃথক পৃথক ভাবে পর্যালোচনা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গে বড় জায়গা করে নিয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং সামাজিক প্রকল্পগুলিকে আক্রমণের বিষয়টি। সিপিএম তাদের নথিতে লিখেছে, ‘‘জনগণের মধ্যে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে টিএমসির সমর্থন রয়ে যাওয়ার একটি উপাদান হল লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো কিছু প্রকল্প ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থা। কিছু পার্টি ইউনিট ও কর্মীদের মধ্যে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এইসব প্রকল্পকে ‘উৎকোচ’ বা ‘ডোল’ বলে চিহ্নিত করার প্রবণতা রয়েছে, যা গরিব মানুষের থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়।’’ একই সঙ্গে ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে কোনও রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্প সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।

রাজ্য কমিটি তাদের পর্যালোচনায় বলেছে, মহিলা সংগঠনের কর্মকাণ্ডে ফাঁকফোকর রয়েছে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করে, তৃণমূল যে ভাবে ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার করেছে, দলের মহিলা সংগঠন পাল্টা প্রচারে তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। শুধু মহিলা সংগঠন নয়, সামগ্রিক ভাবে সাংগঠনিক দৈন্যদশার কথা প্রকট ভাবে উঠে এসেছে সিপিএমের নথিতে। ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বুথে সিপিএম পোলিং এজেন্টই দিতে পারেনি। গণনাকেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত দলের এজেন্টরা ছিলেন কি না, তা নিয়েও সন্দিহান আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

প্রচারের লাইন নিয়েও কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য কমিটি তীব্র আত্মসমালোচনা করেছে। দুই স্তরেই বলা হয়েছে, বিজেপির তুলনায় তৃণমূলকে বেশি আক্রমণ করা হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, দলের লাইনগত প্রশ্নে আরও শিক্ষার প্রয়োজন, যা বঙ্গ সিপিএমের জন্য খানিকটা বিড়ম্বনার বলেই মনে করছেন দলের অনেকে।

কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য কমিটির পর্যালোচনার ছত্রে ছত্রে উল্লেখ রয়েছে, পার্টি ‘শ্রেণিবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে। বহু জায়গায়, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে পার্টির অস্তিত্বটুকুও নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিপিএমের দলিলে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা এখন চকচকে নেতাদের পার্টি। কুঁচকে যাওয়া চামড়া, তুবড়ে যাওয়া গাল আমাদের নেই। আমাদের এখন বাইশ লাখি গাড়ি কেনার সাফাই দিতে হয় পার্টি অফিসে বসে।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘সেলিমদা (মহম্মদ সেলিম) রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর নিজে যা পরিশ্রম করেছেন, যে ভাবনা ভেবেছেন, তা যদি সকলে করতেন, তা হলে কিছুটা হলেও আমাদের মুখ দেখানোর জায়গা থাকত।’’

সব মিলিয়ে সিপিএমের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, ভোট বাড়ানো বা ভোটে জেতা পরের কথা, এখন দলের আশু কাজ, সাংগঠনিক কাঠামোকে টিকিয়ে রাখা। বহু জায়গায় নতুন করে পার্টিকে গড়ে তোলা। তা কতটা সম্ভব? দলের এক কৃষক নেতা কিছুটা মশকরার ভঙ্গিতে বলছেন, ‘‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই বামপন্থীদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়। আমরা আশাবাদী।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Lok Sabha Election TMC Laxmi Bhandar Scheme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy